বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বাড়ি নিজের নামে করে নিয়ে ৬২ বছর বয়সী বিধবা বৃদ্ধা মায়ের উপর অত্যাচারের অভিযোগ ছোট ছেলের বিরুদ্ধে। মারধর থেকে শুরু করে বৃদ্ধাকে ঘরছাড়া করার অভিযোগ পর্যন্ত ওঠে ছেলের বিরুদ্ধে। শেষমেষ দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় বিচার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হন ওই বৃদ্ধা। সেখানেই মিলল ‘বিচার’।
কি নির্দেশ দিলেন বিচারপতি? Calcutta High Court
সম্প্রতি এই সংক্রান্ত মামলা হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে ওঠে। পুলিশকে বিচারপতির নির্দেশ, পুলিশি তত্ত্বাবধানে অবিলম্বে ওই বৃদ্ধাকে বাড়িতে ফেরত দিয়ে আসতে হবে। ফের ছেলে তার উপর নির্যাতন করছে কিনা সেই দিকে নজর রাখতে হবে। বৃদ্ধার খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় ব্যবস্থা ছেলেকেই করতে হবে বলে নির্দেশ বিচারপতির।
বিচারপতি স্পষ্ট বলেন, অভিযুক্ত ছেলে যদি ফের কোনও ঝামেলা করে সেক্ষেত্রে পুলিশ ইন্সপেক্টরকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচারপতির কথায়, “কোনওরকম রেয়াত করা চলবে না।” আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা হল কিনা তা আগেই পুলিশকে রিপোর্ট দিয়ে জানানোর কথা বলা হয়েছে।
মূল ঘটনা: উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহর নিবাসী আসমা বেগমের স্বামী ১৯৯৬ সালে হালিশহরেই একটি জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করেন। এরপর ২০১৩ সালের স্ত্রীকে দানপত্র করে দেন ওই সম্পত্তি। ২০১৪ সালে মা ওই সম্পত্তি নিজের ছোট ছেলের নামে লিখে দেন। শর্ত ছিল ছেলে তার দেখাশোনা করবে। তবে কোথায় কী। অভিযোগ সম্পত্তি পাওয়ার পর থেকেই মা-বাবার উপর নির্যাতন শুরু করে ছেলে।
মা-বাবার উপর ক্রমাগত ছেলের শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। খাবারটুকু ঠিকমতো না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এমনকি বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বৃদ্ধ দম্পতি দিনের পর দিন মুখ বন্ধ করে এই নির্যাতন সহ্য করে আসছিলেন। কিন্তু কিছুদিন আগে তাঁর স্বামী মারা যান। অভিযোগ তারপর থেকে বৃদ্ধার ওপর নির্যাতন মাত্রা আরও বাড়ে।
নিজের শ্বশুর ও শ্যালককে সঙ্গে নিয়ে ছোট ছেলে মাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। মুখে বুঝিয়ে, এমনকি আইনজীবী মারফত চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি। এরপর ওই বৃদ্ধা সম্প্রতি নৈহাটি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্ট অনুযায়ী ভরণপোষণের খরচ দেওয়ার আবেদনের পাশাপাশি সম্পত্তি দানপত্র বাতিলের আবেদন জানান।
কিন্তু নিম্ন আদালত ছেলেকে মাত্র চার হাজার টাকা ভরণপোষণের খরচ বাবদ মাকে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সম্পত্তি দানপত্র বাতিলের আবেদন বিবেচনা করেনি নিম্ন আদালত। এরপর তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। বিচারপতির প্রশ্ন, বৃদ্ধার ছেলের কোনও সন্তান আছে কী না? আইনজীবী জানান, ১০ ও ১২ বছরের দুই ছেলে রয়েছে।
ক্ষোভপ্রকাশ করে বিচারপতি বলেন, “তার মানে এখনও নাবালক।” নৈহাটি থানাকে বিচারপতির নির্দেশ,”আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন তো ওই বাড়িতে ছেলেটির শ্যালক থাকে কিনা ?” কেউ থাকলে তাদের ঘাড় ধরে বের করে দেওয়ার নিদানও দেন বিচারপতি।