বাংলা হান্ট ডেস্ক: অধিকৃত কাশ্মীর আবারও উত্তাল (PoK Unrest)। প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, সংঘাতের আগুনে পুড়ছে গোটা অঞ্চল। বলা হচ্ছে, এই লড়াই যেমন পেটের দায়ে, তেমনি বেঁচে থাকার জন্য, অধিকারের জন্য, আবার ততটাই ‘আজ়াদির’ দাবিতে। গত ৭২ ঘণ্টায় আরও চড়েছে এই আন্দোলনের ঝাঁঝ। প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৫ জন, আহত হয়েছেন প্রায় ২০০। দোকানপাট বন্ধ, রাস্তাঘাট ফাঁকা, জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত। সেনা-পুলিশে ছয়লাপ হয়ে গিয়েছে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ এলাকা।
বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে PoK (PoK Unrest):
তবে এই ক্ষোভ নতুন নয়। বহু দশক ধরে জমে থাকা অসন্তোষ এক সময় গিয়ে বিস্ফোরণের রূপ নেয়। ২০২৩ সালের মে মাসে প্রথমবার পাক অধিকৃত কাশ্মীরে রাস্তায় নামে হাজার হাজার মানুষ (PoK Unrest)। আকাশছোঁয়া বাজারদর, বিদ্যুতের বাড়তি বিল, সীমান্ত হয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের পাচার– এই সবকিছুর বিরুদ্ধেই সরব হয় নাগরিক সমাজ। কিন্তু অভিযোগ, পাক সরকার তাদের দাবিকে গুরুত্ব দেয়নি। এরপর একই বছরের সেপ্টেম্বরে গড়ে ওঠে জম্মু-কাশ্মীর জয়েন্ট আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি। সেই থেকেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় এই সংগঠন।
আরও পড়ুন:পুজোর অতিরিক্ত খাওয়ায় হার্টের রোগীদের ঝুঁকি, মেনে চলুন এই নিয়মগুলো…
এক বছরের মধ্যেই পরিস্থিতি বদলে যায়। ২০২৪ সালের মে মাসে এই কমিটির নেতৃত্বে ফের রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ। টানা কয়েকদিন সংঘর্ষে প্রাণ যায় ৫ জনের। প্রশাসনের সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে অবশেষে কিছুটা নতি স্বীকার করতে হয়। কমানো হয় আটা-ময়দার দাম, বিদ্যুতের বিলে ভর্তুকি ঘোষণা করা হয়। কিছুটা শান্তি ফেরে, কিন্তু সেটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি (PoK Unrest)।
এবার ফের দাবানল ছড়িয়েছে কাশ্মীরে। ‘আজ়াদি’র স্লোগান ছড়িয়ে পড়েছে রাস্তায় রাস্তায়। বিনামূল্যে শিক্ষা, চিকিৎসা, মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে মানুষ পথে নেমেছে। প্রশাসন প্রথমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ পরিষেবা বন্ধ করে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ২৯ সেপ্টেম্বর জয়েন্ট আওয়ামী অ্যাকশন কমিটির চেয়ারম্যান শওকত নওয়াজ মীর ৩৮ দফা দাবিতে লকডাউনের ডাক দেন। এর মধ্যে অন্যতম দাবি— পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের বিধানসভায় ভারত থেকে আগত শরণার্থীদের জন্য রাখা ১২টি সংরক্ষিত আসন বাতিল করা। তাদের অভিযোগ, এই আসনগুলির মাধ্যমে পাক সরকার রাজনৈতিক সুবিধা নেয় এবং স্থানীয়দের কণ্ঠস্বরকে চাপা দেয় (PoK Unrest)।
বিক্ষোভ সামাল দিতে হাজার হাজার সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করেছে পাকিস্তান। কিন্তু ততক্ষণে বহু জায়গায় বিক্ষোভ সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শওকত নওয়াজ দাবি করেছেন, তারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চাইছিলেন, এমনকি দাবি মেনে নেওয়া হলে উদযাপনের পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু পুলিশের গুলি চলায় মৃত্যুর ঘটনাই আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তোলে (PoK Unrest)।
আরও পড়ুন:এশিয়া কাপের ট্রফি “চুরি” করার পুরস্কার? মহসিন নকভিকে গোল্ডে মেডেল দিচ্ছে পাকিস্তান
অবশেষে পাক সরকার বন্দুক নয়, আলোচনার পথ বেছে নেয়। গঠন করা হয় ৮ সদস্যের একটি কমিটি, যারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালাবে। শেহবাজ শরিফও শান্তি ফেরানোর বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে কতটা সফল হবে এই উদ্যোগ, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে (PoK Unrest)।
নয়াদিল্লিও ইতিমধ্যেই অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে সাধারণ মানুষের উপর হামলার দায় পাকিস্তানকেই নিতে হবে। ফলে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে— অধিকৃত কাশ্মীরের এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি কি আলোচনায় প্রশমিত হবে, নাকি ‘আজ়াদির’ দাবিতে আগুন আরও ছড়াবে (PoK Unrest)?