বাংলাহান্ট ডেস্ক: দেশের সাধারণ মানুষের আয় (Salary) ও ব্যয়ের ব্যবধান নিয়ে সদ্য প্রকাশিত সরকারি রিপোর্টে উঠে এসেছে এক চমকে দেওয়ার মতো তথ্য। সাত বছরে আয় বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি সেই বৃদ্ধি। ফলে প্রকৃত অর্থে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় বেতনবৃদ্ধির হার অনেক কম (Salary)
সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে যে কর্মীরা নিয়মিত মাসিক বেতন (Salary) পেতেন, তাঁদের গড় মাসিক আয় ছিল প্রায় ১৬,৫৩৮ টাকা। ২০২৪ সালের এপ্রিল-জুন পর্যন্ত সময়কালে সেই আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১,১০৩ টাকায়। অর্থাৎ সাত বছরে আয় বেড়েছে মাত্র ৪,৫৬৫ টাকা— যা প্রায় ২৭.৬ শতাংশ বৃদ্ধি। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে বাজারে পণ্যমূল্যের উল্লম্ফন এতটাই হয়েছে যে, বাস্তবে ক্রয়ক্ষমতা তেমন বাড়েনি, বরং অনেক ক্ষেত্রেই কমেছে। দৈনিক মজুরির ক্ষেত্রেও চিত্রটা একই রকম। রিপোর্ট বলছে, দিনমজুরদের গড় পারিশ্রমিক ২০১৭ সালে ২৯৪ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৪৩৩ টাকায় পৌঁছেছে। সংখ্যার হিসাবে এই বৃদ্ধি সন্তোষজনক মনে হলেও, মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তুলনা করলে বাস্তবে তা খুব একটা স্বস্তি দিচ্ছে না।
আরও পড়ুন:ফুঁসছে হলং নদী, ডুয়ার্সে কাঠের সেতু ভেঙে বিচ্ছিন্ন জলদাপাড়া, আটকে শতাধিক পর্যটক
অন্যদিকে, বেকারত্বের হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে— সেটিই এই রিপোর্টের একমাত্র ইতিবাচক দিক। ২০১৭-১৮ সালে দেশের বেকারত্বের হার ছিল ৬ শতাংশ, যা বর্তমানে কমে হয়েছে ৩.২ শতাংশ। তরুণদের বেকারত্বও কমেছে— ১৭.৮ শতাংশ থেকে ১০.২ শতাংশে নেমে এসেছে, যা বিশ্বের গড় হার থেকেও কম। ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত পুরুষদের বেকারত্বের হার ৫ শতাংশে নেমেছে— গত চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে— এই নতুন চাকরিগুলি কতটা স্থিতিশীল এবং কতটা উচ্চবেতনের (Salary)? কারণ, মানুষ কাজ পেলেও, সেই কাজের আয় যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে না পারে, তবে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব নয় ।
কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংস্থার (EPFO) তথ্যেও চাকরির সুযোগ বৃদ্ধির ইঙ্গিত মিলেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১.২৯ কোটি নতুন সদস্য যুক্ত হয়েছেন, আর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত যুক্ত হয়েছেন প্রায় ৭.৭৩ কোটি মানুষ। শুধু ২০২৫ সালের জুলাই মাসেই ২১.০৪ লক্ষ নতুন কর্মী EPFO-তে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৬০ শতাংশেরও বেশি যুবক-যুবতী, বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। এটি প্রমাণ করছে, কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা সম্পর্কে দেশের তরুণ প্রজন্মের সচেতনতা বাড়ছে (Salary)।
আরও পড়ুন:সোমেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায়! কবে কমবে এই দুর্যোগ? আবহাওয়ার খবর
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, আয়ের (Salary) জন্য ক্রমে বেশি মানুষ স্বনির্ভর কাজ বা ছোট ব্যবসার দিকে ঝুঁকছেন। ২০১৭-১৮ সালে স্বনিযুক্তদের হার ছিল ৫২.২ শতাংশ, যা বর্তমানে বেড়ে ৫৮.৪ শতাংশে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, নৈমিত্তিক শ্রমিকদের সংখ্যা কমে ১৯.৮ শতাংশে নেমেছে। এটি একদিকে উদ্যোক্তা মনোভাবের বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিলেও, অন্যদিকে স্থায়ী ও সুরক্ষিত চাকরির অভাবের কথাও স্পষ্ট করে দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে সরকারি রিপোর্টের বার্তা পরিষ্কার— চাকরি বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু আয় (Salary) ততটা বাড়ছে না, যতটা প্রয়োজন। ফলে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে আর্থিক চাপ এবং অনিশ্চয়তা রয়ে যাচ্ছে আগের মতোই।