বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একদিকে ডুবছে উত্তরবঙ্গ, একের পর এক মৃত্যুর খবর সামনে আসছে, ভিটে-মাটি সর্বস্ব খুইয়ে পথে হাজার হাজার মানুষ। উত্তরবঙ্গে যখন এই বিপর্যয়ের (North Bengal Flood) চিত্র ঠিক সেই একই সময়ে উৎসবের মেজাজে ছিল দক্ষিণবঙ্গ। কলকাতায় রেড রোডে জমকালো পুজোর কার্নিভাল। আর সেখানে উপস্থিত খোদ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এই নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল রাজ্য-রাজনীতিতে।
কি জবাব দিলেন মমতা? Mamata Banerjee
যেই সময় উত্তরবঙ্গে সাধারণ মানুষের হাহাকার সময় মুখ্যমন্ত্রীর গানের তাতে পা মেলানো। বিপর্যয়ের সময় তড়িঘড়ি উত্তরবঙ্গে না গিয়ে কেন কার্নিভালে অংশ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী? এই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে রাজ্যের সমস্ত বিরোধী দলগুলি। বহু বিতর্কের পর এবারে সেই ইস্যুতেই মুখ খুললেন মমতা।
এদিন কার্নিভাল ইস্যুতে পাল্টা মমতা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘কেউ কেউ রাজনীতি করছে, তখন কেন কার্নিভাল হল? পুজোর সময় তো বৃষ্টি হল বলে বাতিল করে দিলাম একদিন। কিন্তু ওই দিন তো সব অ্যারেঞ্জমেন্ট (প্রস্তুতি) করা আছে। ইউনিসেফ থেকে শুরু করে কত ফরেন ট্যুরিস্টরা ছিল। ক্যানসেল করা সম্ভব?’
‘যুক্তি’ দিয়ে মমতা বলেন, ‘আর তাছাড়া সেদিন যদি আমরা আসতামও, এসে কী করতাম? আমাদের দেখতে গিয়ে, ভিআইপিদের দেখতে গিয়ে, রেসকিউ অপারেশনটাই হত না। পুলিশ, ফায়ার ব্রিগেড কাকে সামলাবে? ডিস্ট্রিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাকে সামলাবে? হোয়াট ইজ দ্য প্রায়োরিটি? বিপদের সময় মানুষকে উদ্ধার করা, তাদের পাশে দাঁড়ানো, শিফট করা, রিলিফ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া এসব, তাকে আশ্বস্থ করা? নাকি ভিআইপি ট্রিটমেন্ট?’
মমতার কথায়, ‘VIP এর নাম করে কেউ তিরিশটা, চল্লিশটা গাড়ি নিয়ে ঢুকছে। ভাল রাস্তাগুলি ভেঙে দিয়ে চলে যাচ্ছে। আরে এটা কাঁচা আছে এখন! যার জন্য আমি নিজে ট্রাভেল করছি, মাত্র তিনটে গাড়ি। আমার সামনে একটা থাকে, আমি মাঝে থাকি, পিছনের গাড়িরও দরকার নেই আমার। আমি স্থানীয় পুলিশকে অ্যালাউ করি না। তাহলে সব জিনিস হয়।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি যদি একটা বিধ্বস্ত রাস্তা দিয়ে, চল্লিশটা গাড়ির কনভয় নিয়ে যাই, তাহলে সেটা কি পাহাড়ে, সমতলে প্রেসার পড়ে না? সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রশ্ন করে মমতা বলেন, ‘এটা আপনারাই বলুন তো, আপনারা যারা বাস্তববাদী। আমার স্ট্রিক্টলি ইন্সট্রাকশন আছে, যা আমাদের যারাই যাক, তিনটের বেশি গাড়ি ব্যবহার করবেন না। নিজের একটা, আর সামনে পিছনে বড় জোড় দুটো থাকবে। নো মোর দ্যন দ্যাট।”
“আমরা যে জায়গাগুলি দেখতে গিয়েছিলাম, আপনারা দেখেছেন গতকালই সঙ্গে সঙ্গে..একদিনের মধ্যে, আমরাতো ঘটনা ঘটার, ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই চলে এসেছি। রেসকিউ করতে চব্বিশ ঘণ্টা ওদের টাইম দেওয়া হয়েছে। এটা না হলে এই যে যারা বেঁচে ফিরে আসছে, মা মারা গিয়েছে, বাচ্চাটা বেঁচে আছে, দুইজনেই মারা যেতে পারত, এরকম ৬-৭ কেস আপনারা দেখলেন আপনার পরিবারে।” বলেন মমতা।
তিনি আরও বলেন, “সেখানে তো যারা উদ্ধার করেছে, তাঁদের উদ্যোগটা তো প্রশংসার। আর আমরা যদি তখন চলে আসতাম, যদি আমি বিকেলেও আসতাম, আমাকে নিয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ব্যস্ত হয়ে পড়ত, আমি তো সেটা চাই না। আমরা কেউই চাই না।’
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “যখন কোনও ঘটনা ঘটে, তখন সেখানকার মানুষকে, আশ্বস্ত করতে হয়। তাঁদের একটা ক্ষোভ জন্মায়। আমার বাড়ি চলে গিয়েছে, আমার সার্টিফিকেট চলে গিয়েছে। আমার খাবার চলে গিয়েছে। খাব কী? বাড়ি পাব কোথায়? আমার রাস্তা নেই। আমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তখন মানুষ একটা অসহতায় ভোগে। সেই অসহায় অবস্থা কাটাতে আমাদের খুব শান্তিপূর্ণভাবে ট্যাকেল করতে হয়। আর্গুমেন্ট করতে হয় না।’ বলেন মুখ্যমন্ত্রী।