রতন টাটার প্রয়াণের পরে টাটা গ্রুপে “কোন্দল”! পরিস্থিতি সামলাতে মাঠে নামছে কেন্দ্র

Published on:

Published on:

Unrest in TATA Group after Ratan Tata's death.

বাংলাহান্ট ডেস্ক: রতন টাটার প্রয়াণের পর থেকেই ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী টাটা গ্রুপে (TATA Group) নেমেছে অস্থিরতা। টাটা ট্রাস্টের অভ্যন্তরে বাড়ছে অন্তর্দ্বন্দ্ব, যা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কেন্দ্রীয় সরকারকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে টাটা গ্রুপের প্রভাব এবং গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন নিজে উদ্যোগ নিয়ে টাটা ট্রাস্ট এবং টাটা সন্সের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

রতন টাটার অনুপস্থিতিতে টাটা গ্রুপে ‘কোন্দল’ (TATA Group)

দ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রতন টাটার মৃত্যুর পর টাটা ট্রাস্টের (TATA Group) চারজন ট্রাস্টি— দারিয়াস খামবাটা, জাহাঙ্গির এইচসি, প্রমিত জাভেরি ও মেহলি মিস্ত্রি— মিলে এক ধরনের ‘সুপার বোর্ড’ তৈরি করেছেন। তারা টাটা গ্রুপের নতুন চেয়ারম্যান নোয়েল টাটার নির্দেশকে উপেক্ষা করছেন বলে জানা গেছে। এর ফলে টাটা সন্সের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে এবং সংগঠনের অভ্যন্তরে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন:বিদেশে চাকরি ছেড়ে ভারতে ব্যবসা শুরু করে বাজিমাত বিজ্ঞানী রমেশের! মিলছে ১২ কোটির টার্নওভার

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব টাটা গ্রুপের (TATA Group) উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নোয়েল টাটা, ভাইস চেয়ারম্যান বেণু শ্রীনিবাসন, টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন. চন্দ্রশেখরন এবং ট্রাস্টি সদস্য দারিয়াস খামবাটা। সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়— টাটা গ্রুপে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতেই হবে এবং কোনও অভ্যন্তরীণ বিরোধ যেন সংস্থার কাজ বা ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত না করে।

অমিত শাহ ও নির্মলা সীতারামন উভয়েই টাটা গ্রুপের (TATA Group) আর্থিক প্রভাব, বাজারমূল্য ও দেশের শিল্পক্ষেত্রে এর ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সতর্ক করেছেন যে, যদি কোনও ট্রাস্টি বা সদস্যের কারণে গ্রুপের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়, তবে প্রয়োজনে তাঁকে সরানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার চায়, এই বিরোধ জনসমক্ষে না এসে গোষ্ঠীর অন্দরে শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি হোক।

Unrest in TATA Group after Ratan Tata's death.

আরও পড়ুন:পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছেন ট্রাম্প! আমেরিকা দেবে “মারণাস্ত্র”, প্রভাবিত হবে ভারত?

সূত্রের খবর, মুম্বই ফেরার আগে টাটা গ্রুপের (TATA Group) চার ট্রাস্টি নিজেদের মধ্যে বৈঠকও করেন। অভিযোগ, এই চারজন ট্রাস্টি তাঁদের ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে টাটা সন্সের নানা সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করেছেন এবং কিছু ডিরেক্টর নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। এই ঘটনাই মূলত গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদের সূত্রপাত ঘটিয়েছে।

গত বছরের ৯ অক্টোবর রতন টাটার প্রয়াণের পর থেকেই টাটা গ্রুপের (TATA Group) নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। একদিকে নোয়েল টাটা নেতৃত্বাধীন শিবির, অন্যদিকে দোরাবজি টাটা ট্রাস্টের ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠী— এই দুই শিবিরের মধ্যে মতপার্থক্য এখন দৃশ্যমান। ভারতের কর্পোরেট জগতে টাটা গ্রুপ কেবল একটি ব্র্যান্ড নয়, বরং এক ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্যে ফাটল ধরলে তা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্যও অশনি সংকেত। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের এই তৎপরতা নিছক হস্তক্ষেপ নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থে একটি সতর্ক পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।