অন্যদের বাঁচাতে হামাসের হাতে নিজের প্রাণ উৎসর্গ, অবশেষে দেশে ফিরল একমাত্র হিন্দু পণবন্দি বিপিন জোশির নিথর দেহ

Published on:

Published on:

বাংলাহান্ট ডেস্ক: গাজা থেকে দু’বছর পর ফিরে এল বিপিন জোশির (Bipin Joshi) দেহ। একমাত্র হিন্দু ও অ-ইজরায়েলি পণবন্দি বিপিনের মৃত্যুর খবর সোমবার রাতে নিশ্চিত করেছে ইজরায়েল সরকার ও নেপাল দূতাবাস। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইজরায়েলের কিবুৎজ অ্যালুমিমে হামাসের হামলার সময় বিপিনকে অপহরণ করা হয়েছিল। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২২ বছর। নেপালের এক তরুণ কৃষিবিদ্যার ছাত্র হয়েও তিনি সেদিন দেখিয়েছিলেন অসাধারণ সাহস— সহপাঠীদের বাঁচাতে হামাসের দিকে গ্রেনেড ছুড়ে দিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজে ধরা পড়ে যান জঙ্গিদের হাতে।

হামাস বাহিনীর হাতে মৃত বিপিন (Bipin Joshi)

দু’বছর ধরে পরিবারের আশা ছিল বিপিন (Bipin Joshi)  হয়তো জীবিত আছেন। বোন পুষ্পা জোশি প্রায় প্রতিদিন পশ্চিম নেপালের গ্রাম থেকে কাঠমান্ডু যাতায়াত করেছেন দাদার মুক্তির চেষ্টা করতে। গত অগস্টে তাঁদের পরিবার ইজরায়েলেও গিয়েছিল, প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগের সঙ্গে দেখা করে বিপিনকে ফেরানোর আবেদন জানানোর জন্য। কিন্তু সেই আশার আলো সোমবার নিভে গেল। ইজরায়েল-হামাসের বন্দি বিনিময়ের সময় হামাস কর্তৃপক্ষ ২০ জন জীবিত পণবন্দি এবং চারটি মৃতদেহ ফেরায়, যার মধ্যে ছিল বিপিনের দেহও।

আরও পড়ুন:আদানি-গুগল যৌথ উদ্যোগে বিশাখাপত্তনমে ঐতিহাসিক লগ্নি, ভারত পাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম আধুনিক তথ্যকেন্দ্র

ইজরায়েলের তেল আভিভে সোমবার রাতে বিপিনের (Bipin Joshi) দেহ আনা হয়। নেপালের রাষ্ট্রদূত ধনপ্রসাদ পণ্ডিত জানিয়েছেন, দেহটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ইজরায়েলি সেনার মুখপাত্র এফি ডাফরিনও নিশ্চিত করেছেন, “চার পণবন্দির মৃতদেহ আমরা পেয়েছি, তাঁদের মধ্যে একজন নেপালের ছাত্র বিপিন জোশি।”

নেপালের ছোট শহর দান্দিঘাট থেকে বিপিন (Bipin Joshi) ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইজরায়েলে যান কৃষি প্রশিক্ষণের একটি ছাত্র বিনিময় কর্মসূচির অংশ হিসেবে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও ১৬ নেপালি ছাত্র। কিন্তু ৭ অক্টোবর ভোরে হামাস সীমান্ত ভেঙে ঢুকে পড়ে এবং কিবুৎজ অ্যালুমিমে হত্যালীলা চালায়। সেখানে ১০ জন নেপালি ছাত্রকে ঘটনাস্থলেই হত্যা করা হয়। বিপিন সেই নৃশংসতার মাঝেও সাহসিকতার পরিচয় দেন— বিস্ফোরণ ঘটার আগেই হামাসের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড বাইরে ছুড়ে দিয়ে কয়েকজন সহপাঠীর প্রাণ বাঁচান। কিন্তু সেই বীরত্বের পরই তাঁকে ধরে নিয়ে যায় জঙ্গিরা।

It has been confirmed that Bipin Joshi was killed by Hamas.

আরও পড়ুন:SSC ২৬০০০ চাকরি বাতিল মামলায় শিক্ষাকর্মীদের কি নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট?

হামলার কিছু দিন পর ইজরায়েলি সেনা বিপিনের (Bipin Joshi) একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল, যেখানে তাঁকে আহত অবস্থায় গাজার শিফা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তারপর থেকেই তাঁর কোনো খোঁজ মেলেনি। সময় গড়িয়েছে দুই বছর, অসংখ্য কূটনৈতিক আলোচনা, প্রচার অভিযান ও মানবিক আবেদন সত্ত্বেও ফিরে পাওয়া যায়নি জীবিত বিপিনকে। ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে সাম্প্রতিক শান্তি প্রক্রিয়া ও বন্দি বিনিময়ের চুক্তির অংশ হিসেবেই তাঁর দেহ ফেরত এসেছে। নেপাল সরকারের পক্ষ থেকে শোকবার্তা জারি করে বলা হয়েছে, “বিপিন জোশি শুধু নেপালের নয়, সমগ্র মানবতার এক নায়ক। তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে অন্যদের বাঁচিয়েছেন।”

বিপিনের (Bipin Joshi) মৃত্যুতে নেপাল এবং ইজরায়েল উভয় দেশেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, তাঁকে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে এনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য করা হবে। দুই বছরের প্রতীক্ষার শেষে বিপিনের প্রাণ ফিরল না, কিন্তু তাঁর সাহসিকতার গল্প ইতিহাসে অমর হয়ে রইল।