বাংলা হান্ট ডেস্ক: উৎসবের মরশুমে ভারতের (India) অর্থনীতির জন্য আশার আলো দেখা দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর শুল্ক কমাতে রাজি হয়েছেন বলে জানা গেছে। সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, শিগগিরই ভারতের উপর আমেরিকার শুল্কহার ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশে আনা হবে। সেই সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তিও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে এখনও পর্যন্ত ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রক কিংবা হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
ভারতের (India) ওপর কর ছাড় দিতে প্রস্তুত আমেরিকা?
উল্লেখ্য, আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি না হওয়ায় ভারতের (India) ওপর প্রথমে ২৫ শতাংশ এবং পরে রাশিয়ার থেকে তেল আমদানির কারণে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফলে ভারতের উপর মোট শুল্কের বোঝা দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। এই অতিরিক্ত শুল্কভার ভারতীয় অর্থনীতির একাধিক ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে পোশাক, বস্ত্র এবং চিংড়ি রপ্তানি ক্ষেত্র সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশের বিভিন্ন শহরে একাধিক বস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:ক্রমশ কমছে সংখ্যা! ভারত থেকে উধাও হবে মরুভূমির জাহাজ? উট সংরক্ষণে তৎপর কেন্দ্র
‘গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ’-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্কিন শুল্কবৃদ্ধির জেরে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে আমেরিকায় ভারতের পণ্য রফতানি প্রায় ৪৩ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। বর্তমানে ৮৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ভারতীয় পণ্য মার্কিন বাজারে রফতানি হয়, যা কমে ৪৯.৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রশাসনের শুল্ক কমানোর পদক্ষেপকে বিশেষজ্ঞরা স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এতে ভারতীয় রপ্তানি ক্ষেত্র কিছুটা স্বস্তি পাবে এবং দেশের বাণিজ্য ঘাটতিও কমবে।
আমেরিকার এই সিদ্ধান্তের পিছনে বড় কারণ চিন। কৃষিপণ্যের নতুন ক্রেতা খুঁজছে ওয়াশিংটন, কারণ চিন ধীরে ধীরে কমিয়ে দিয়েছে মার্কিন ভুট্টা আমদানি। ২০২২ সালে যেখানে চিন আমেরিকা থেকে ৫.২ বিলিয়ন ডলারের ভুট্টা কিনেছিল, সেখানে ২০২৪ সালে সেই পরিমাণ নেমে এসেছে মাত্র ৩৩১ মিলিয়ন ডলারে। এই প্রবল পতনের ফলে আমেরিকার মোট ভুট্টা রফতানি, যা ২০২২ সালে ছিল ১৮.৫৭ বিলিয়ন ডলার, তা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১৩.৭ বিলিয়ন ডলারে। ফলে, মার্কিন কৃষিপণ্যের জন্য এখন ভারত (India) হয়ে উঠতে পারে এক বড় বাজার। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক দৃঢ় করার পাশাপাশি, আমেরিকা এখন চায় তাদের ভুট্টা, সয়াবিন ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যের জন্য নতুন ক্রেতা পেতে। বিশেষ করে চীনের বাজারে প্রবেশাধিকার কমে যাওয়ায়, ভারতকে বিকল্প হিসেবে দেখছে ট্রাম্প প্রশাসন।
আরও পড়ুন:“গোল্ডেন বয়”-এর মুকুটে নতুন পালক! ভারতীয় সেনার সাম্মানিক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হলেন নীরজ চোপড়া
দীর্ঘদিন ধরে ভারত (India) ও আমেরিকার মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এখনও পর্যন্ত উভয় দেশ একমত হতে পারেনি। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, মার্কিন কর্পোরেট সংস্থাগুলির চাপে কৃষি, মৎস্য এবং দুগ্ধজাত পণ্যের ভারতীয় বাজার উন্মুক্ত করার দাবি তুলছে আমেরিকা। কিন্তু ভারত সে বিষয়ে কোনও ছাড় দিতে রাজি নয়। কারণ, এতে দেশীয় কৃষকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রকাশ্যে জানিয়েছেন যে তিনি কৃষকদের স্বার্থে কোনও ধরনের আপস করবেন না। দেশের অন্নদাতাদের স্বার্থে আঘাত লাগে এমন কোনও চুক্তি কখনও মেনে নেওয়া হবে না, এমনই তাঁর দৃঢ় বার্তা। প্রয়োজনে ভারত অর্থনৈতিক ক্ষতি স্বীকার করতেও প্রস্তুত। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই নতুন সিদ্ধান্ত কূটনৈতিক দিক থেকেও ভারতের (India) জন্য বড় জয়। আগামী দিনে যদি বাণিজ্যচুক্তি বাস্তবায়িত হয়, তবে ভারতীয় রপ্তানি ক্ষেত্রের উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা আরও জোরদার হবে। উৎসবের আগে এমন ইতিবাচক ইঙ্গিত নিঃসন্দেহে দেশের বাজারে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে।