বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। ইসরো (ISRO) ঘোষণা করেছে দেশের প্রথম এক্স-রে পোলারিমেট্রি স্যাটেলাইট ‘এক্সপোস্যাট’ (X-ray Polarimeter Satellite বা XPoSat)-এর জন্য প্রথম ‘অ্যানাউন্সমেন্ট অফ অপরচুনিটি’ (Announcement of Opportunity) সাইকেল। গত সোমবার প্রকাশিত এই ঘোষণার ফলে ভারতের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সামনে খুলে গেল এক ঐতিহাসিক দরজা—এখন তাঁরা নিজেদের দেশের তৈরি বিশ্বমানের মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ব্যবহার করে গবেষণার সুযোগ পাবেন।
দেশীয় বিজ্ঞানীদের জন্য বিরাট ঘোষণা ইসরোর (ISRO)
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি PSLV C-58 রকেটের মাধ্যমে এক্সপোস্যাট সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। এটি ভারতের প্রথম ডেডিকেটেড এক্স-রে পোলারিমেট্রি মিশন, যার মূল উদ্দেশ্য মহাকাশের চরম পরিবেশে বিভিন্ন জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক উৎস থেকে নির্গত এক্স-রশ্মির বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করা। বর্তমানে উপগ্রহটি নিরক্ষীয় কক্ষপথে পৃথিবীর প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার উপরে অবস্থান করছে এবং নিয়মিতভাবে তথ্য পাঠাচ্ছে ইসরোর (ISRO) বিজ্ঞানীদের কাছে।
আরও পড়ুন: চিনের সমর্থন করা তিস্তা মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন বাংলাদেশে! প্রভাবিত হবে ভারত?
ইসরো (ISRO) জানিয়েছে, এই ‘অ্যানাউন্সমেন্ট অফ অপরচুনিটিতে’ মূল ফোকাস থাকবে XPoSat-এর প্রধান পেলোড XSPECT (X-ray Spectroscopy and Timing)-এর ওপর। এই পেলোডের ৬০ শতাংশ পর্যবেক্ষণ সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে শুধুমাত্র ভারতীয় গবেষকদের জন্য। অর্থাৎ, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতীয় গবেষকরাই এই মিশনের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবেন।
ইসরোর (ISRO) বিজ্ঞান কর্মসূচি দফতর (Scientific Program Office) জানিয়েছে, এই উদ্যোগ ভারতীয় বিজ্ঞানীদের জন্য মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এখন দেশের যেকোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় বা স্বীকৃত কলেজের বিজ্ঞানী ও গবেষক এই AO প্রোগ্রামের আওতায় আবেদন করতে পারবেন। আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অনলাইনে হবে—ইচ্ছুক প্রার্থীদের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ISSDC (ISRO Science Data Centre)-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে XPPS (XPoSat Proposal Processing System) সেকশনে আবেদন করতে হবে।
আরও পড়ুন:চিনের “না”-তেই মালামাল হবে ভারত! শুল্ক কমাতে বাধ্য হবেন ট্রাম্প? কী এমন ঘটল?
ইসরোর (ISRO) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচিত গবেষণা প্রস্তাবগুলির পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এতে বিজ্ঞানীরা সরাসরি মহাকাশ থেকে প্রাপ্ত এক্স-রে তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারবেন এবং নতুন জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক তথ্য উন্মোচন করতে সক্ষম হবেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ ভারতের বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষতাকে আন্তর্জাতিক স্তরে আরও মজবুত করবে। অতীতে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা মহাকাশ গবেষণায় অনেক সময় বিদেশি উপগ্রহ ও সংস্থার উপর নির্ভরশীল ছিলেন, কিন্তু এক্সপোস্যাটের মাধ্যমে ভারত এখন নিজস্ব স্পেস অবজারভেটরি ব্যবহার করে স্বাধীন গবেষণা চালাতে পারবে।
ইসরোর (ISRO) এই পদক্ষেপকে ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে “একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত” বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, এটি শুধু তরুণ বিজ্ঞানীদের উৎসাহ দেবে না, বরং ভবিষ্যতে ভারতকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণার অগ্রভাগে নিয়ে যাবে।