‘মিথ্যা কথা বলছেন, রাজ্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিজ় করে দিতে বলব’, বকেয়া মামলায় চরম ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট, বিপাকে সরকার!

Published on:

Published on:

calcutta high court(51)

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ফের এক মামলায় আদালতের কড়া হুঁশিয়ারির মুখে রাজ্য সরকার (Government Of West Bengal)। কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, এরপর রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কে রাজ্যের অ্যাকাউন্ট নম্বরই সিজ় করার নির্দেশ দেওয়া হবে। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের কথায়, ‘‘মুখ্যসচিবকে বলুন রাজ্যের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে। আমরা সিজ় করার নির্দেশ দেব।’’

রাজ্যের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট | Calcutta High Court

দীর্ঘদিন ধরে অর্থের অভাবে কলকাতা হাই কোর্ট এবং বিভিন্ন নিম্ন আদালতের উন্নয়নমূলক কাজ আটকে রয়েছে। এদিন সেই সংক্রান্ত মামলাতেই রাজ্যের ভূমিকায় ক্ষোভ উগরে দেন দুই বিচারপতি। অ্যাকাউন্ট সিজ করার হুঁশিয়ারির পাশাপাশি মামলার পরবর্তী শুনানিতে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং অর্থসচিবকে সশরীরে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ উচ্চ আদালতের।

রাজ্য অর্থ বরাদ্দ না করায় আদালতের ৩৬টি প্রকল্পের কাজ আটকে থাকার অভিযোগ। গত তিন বছর ধরে বিএসএনএল বিলও দেওয়া হয়নি বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ সবমিলিয়ে পাঁচ কোটি টাকার বেশি অর্থ আটকে রাখা হয়েছে। এই ইস্যুতেই রাজ্যের বিরুদ্ধে চরম ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট।

এদিন রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি বসাক বলেন, ‘‘প্রথম লাইনেই মিথ্যা কথা বলছেন। গত তিন বছর ধরে বিল বকেয়া। রাজ্যে কি আর্থিক জরুরি অবস্থা চলছে? বিল না দেওয়ার কারণে বিএসএনএল যদি পরিষেবা বন্ধ করে দেয়, তখন কী হবে?” প্রশ্ন তোলেন জাস্টিস বসাক। বলেন, “তিন বছর সময়টা যথেষ্ট সময়। বিল দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। রাজ্যের কর্মীদের সঠিক ভাবে বেতন দিচ্ছেন না। আদালতের কাজে অর্থ বরাদ্দ কি প্রশাসনিক কাজের মধ্যে পড়ে না নাকি?’’

রাজ্যের অ্যাকাউন্ট কোন ব্যাঙ্কে রয়েছে জানতে চাইলে রাজ্যের আইনজীবী বলেন, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। এরপরই আদালতের মন্তব্য, ‘‘আমরা রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে বলছি কোনও টাকা না ছাড়তে। আদালতের অনুমতি ছাড়া যেন টাকা ছাড়া না হয়। বিএসএনএল সার্ভিস বন্ধ করে দিলে কিছু বলার থাকবে না।” উদ্বেগ প্রকাশ করে বিচারপতিরা বলেন, “হাই কোর্টের অবস্থা যদি এমন হয়, নিম্ন আদালতে কী হচ্ছে!’’

এদিন আদালতে উপস্থিত রাজ্যের অর্থ দফতরের আধিকারিকের কাছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর জানতে চান বিচারপতিরা। উত্তরে আধিকারিক জানান, তিনি অ্যাকাউন্ট নম্বর জানেন না। পাল্টা বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আমরা বসে থাকব। জেনে এখনই বলুন। মুখ্যসচিবকে বলুন অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে।’’

আদালতের ক্ষোভে ওই আধিকারিক বলেন, রাজ্য দু’দিনের মধ্যে অর্ধেক টাকা মিটিয়ে দেবে। তা শুনে বিচারপতিদের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কেন দু’দিন সময় লাগবে কেন? এখন তো সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাঠানো যায়।’’ অর্থ দফতরের আধিকারিক জানান, রাজ্য সরকারের ছুটি রয়েছে। শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন দুই বিচারপতি।

Calcutta High Court

বলেন,‘‘ছুটি? আজ ছুটি? ইন্টারনেটের কি ছুটি? এই আদালত কি ছুটিতে? আজ যদি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়, কী হবে?’’ বিচারপতি বলেন, ‘‘এক মাসের মধ্যে বৈঠক করতে বলেছিলেন। কিছুই অগ্রগতি হয়নি। প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে রয়েছেন মুখ্যসচিব।’’ অনুরোধ করে রাজ্য বলে, “আপাতত ৬০ লক্ষ টাকা মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বাকি টাকাও মিটিয়ে দেওয়া হবে।”

আরও পড়ুন: অপেক্ষায় হাজার হাজার চাকরিহারা! SSC-র শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফলপ্রকাশ কবে? বড় আপডেট দিলেন চেয়ারম্যান

একথা শুনে বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আমরা বাক্‌রুদ্ধ। কিছু বলার নেই।’’ রাজ্যের আইনজীবী ফের আর্জি জানান, ‘‘দয়া করে একটু সময় দেওয়া হোক। বিলের ২.৯ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে।’’ “কিন্তু সেই টাকা আদৌ আদালতের হাতে এসেছে?” প্রশ্ন বিচারপতিদের। রাজ্য মামলার শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করলে আগামী ১০ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। সেদিন রাজ্যের এজি সওয়াল করবেন।