বাংলাহান্ট ডেস্ক: দিল্লি-আহমেদাবাদের জনবহুল বাজার গুলিতে বিষাক্ত রিসিন (Ricin Poison) দিয়ে হামলার ছক বানচাল! চারিদিকে আতঙ্কের পরিবেশ। রাজধানী দিল্লি এবং গুজরাতে সোমবারের সকাল যেন এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করাল গোটা দেশকে। দিনের শুরুতেই ফরিদাবাদে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ। আর সেই সময়ই গুজরাত থেকেও আসে আরও ভয়ঙ্কর খবর। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহে হায়দরাবাদের এক ডাক্তারকে গ্রেফতার করে গুজরাত পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী দফতর (এটিএস)। ধৃতের নাম আহমেদ মোহিউদ্দিন সঈদ। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় চার কেজি ক্যাস্টর-বিন ম্যাশ, যা ব্যবহার করে তৈরি করা যায় অত্যন্ত মারাত্মক বিষ ‘রিসিন’। এটিএস সূত্রে খবর, ওই ডাক্তার এই রিসিন তৈরি করে দিল্লি ও আহমেদাবাদের জনাকীর্ণ বাজারে জৈব সন্ত্রাসমূলক হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। সে নিয়মিত নজর রাখছিল আজাদপুর মান্ডি, আহমেদাবাদের নারোদা ফলের বাজার এবং লখনউয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়।
বিষাক্ত রিসিন (Ricin Poison) দিয়ে জৈব সন্ত্রাসবাদের ছক:
ধৃত আহমেদ মোহিউদ্দিন সঈদ পেশায় ডাক্তার। জানা গিয়েছে, সে চিন থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেছে। তদন্তকারীদের দাবি, সঈদ দীর্ঘদিন ধরে ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশ (আইএসকেপি)-এর এক সদস্য আবু খাদিমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল। আবু খাদিমের মাধ্যমেই সঈদ রিসিন বিষের (Ricin Poison) সূত্র সংগ্রহ করে এবং কীভাবে এই বিষ তৈরি করে তা ব্যবহার করা যায়, সেই পরিকল্পনা তৈরি করছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এটিএসের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই ডাক্তার গত ছয় মাস ধরে দিল্লি, আহমেদাবাদ এবং লখনউ-সহ একাধিক জায়গায় গিয়ে ভিড়পূর্ণ স্থানগুলির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিল। বিশেষ করে দিল্লির আজাদপুর মান্ডি, যা এশিয়ার বৃহত্তম ফল ও সবজির পাইকারি বাজার, ছিল তার মূল টার্গেট।
আরও পড়ুন:আরও সহজ হল পরিষেবা! পোস্ট অফিস লঞ্চ করল ‘Dak Seva 2.0’ অ্যাপ, বাড়িতে বসেই হবে প্রতিটি কাজ
রিসিন (Ricin Poison) একটি ভয়ঙ্কর বিষাক্ত পদার্থ। এটি একটি গ্লাইকোপ্রোটিন যা স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করলে কোষের প্রোটিন সংশ্লেষণ বন্ধ করে দেয়, ফলে কোষের মৃত্যু ঘটে। তরল বা গুঁড়ো রিসিন শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে। অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (CDC) রিসিনকে গ্রেড বি জৈব অস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। বিশ্বের নানা প্রান্তে এই রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়েছে হত্যার অস্ত্র হিসেবে। ফলে এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ ছড়িয়েছে গোটা প্রশাসনের মধ্যে।
গুজরাত এটিএসের দাবি, ধৃত ডাক্তার একাই কাজ করছিল না। তাকে সহায়তা করার অভিযোগে আরও দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে— একজন উত্তর প্রদেশের শামলির দর্জি, আরেকজন লখিমপুর খেরির ছাত্র। এই তিনজনই গত কয়েক মাস ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল। সন্দেহ করা হচ্ছে, তারা রিসিন বিষ (Ricin Poison) তৈরি ও বিতরণের মাধ্যমে দেশে বড়সড় জৈব সন্ত্রাস হামলার ছক কষছিল।

আরও পড়ুন:২০০-রও বেশি IED, ২৬/১১-র আদলে একাধিক টার্গেটে হামলার ছক! ঠিক কী পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের?
এটিএসের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এই ঘটনার তদন্তে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও নেমেছে। আহমেদাবাদ, দিল্লি এবং হায়দরাবাদের একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। উদ্ধার করা হয়েছে কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও ডকুমেন্ট, যেগুলির মধ্যে হামলার পরিকল্পনার সূত্র মিলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনার পর থেকেই রাজধানী এবং গুজরাতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, যে কোনও সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ ঠেকাতে এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে (Ricin Poison)।












