চিনের কড়াকড়ির জবাব দিল দিল্লি, বিরল খনিজ চুম্বক তৈরিতে স্বদেশি শক্তি গড়তে বড়সড় ঘোষণা কেন্দ্রের

Published on:

Published on:

Follow

বাংলাহান্ট ডেস্ক: বিরল খনিজ চুম্বকের ক্ষেত্রে বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভর হওয়ার পথে বড় পদক্ষেপ নিল ভারত (India)। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পেল ‘স্কিম টু প্রোমোট ম্যানুফ্যাকচারিং অফ সিন্টার্ড রেয়ার আর্থ পার্মানেন্ট ম্যাগনেট’ নামে একটি বিশেষ প্রকল্প। আন্তর্জাতিক বাজারে বিরল খনিজের ক্ষেত্রে চিনের একচ্ছত্র আধিপত্য এবং সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক ভাবে ৭২৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে দেশেই বিরল খনিজ প্রক্রিয়াকরণ করে স্থায়ী চৌম্বক পদার্থ তৈরি শুরু করা হবে।

বিরল খনিজ চুম্বকে বিদেশি নির্ভরতা কমাতে বড় পদক্ষেপ ভারতের (India)

বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় সরকারের বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রথম পর্যায়ে দেশে বছরে প্রায় ৬ হাজার টন বিরল খনিজ প্রক্রিয়াকরণ করে শক্তিশালী চৌম্বক পদার্থ উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি করা হবে। এতে শুধু রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট উৎপাদনে নয়, দীর্ঘমেয়াদে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি ও কাঁচামালেও ভারত (India) স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারবে। সরকারি দাবি, অত্যাধুনিক শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে দেশীয় উৎপাদন বাড়লে আন্তর্জাতিক বাজারেও ভারতের অবস্থান শক্তিশালী হবে। বর্তমানে নিওডিমিয়াম এবং সামারিয়াম-জাতীয় বিরল খনিজ থেকে শক্তিশালী চৌম্বক পদার্থ তৈরি হয়, যেগুলি ইলেকট্রিক মোটর, ড্রোন, স্মার্টফোন, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এবং বিমান পরিবহণ শিল্পে অপরিহার্য।

আরও পড়ুন:ওয়াশিংটনের দুই ব্লক দূরেই চলল এলোপাথাড়ি গুলি, গুরুতর জখম ২ ন্যাশনাল গার্ড, “কাউকে রেয়াত নয়” হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

এই খনিজগুলির বাজারে বহু বছর ধরে চিনের প্রায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশই বেজিংয়ের ওপর নির্ভরশীল। ভারতও (India) ব্যতিক্রম নয়। সাম্প্রতিক সময়ে চিন রফতানিতে কড়াকড়ি শুরু করায় আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। বিভিন্ন দেশ অভিযোগ করে, চিন কৌশলগত কারণে রেয়ার আর্থ সরবরাহে নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে। বেজিংয়ের অভিযোগ, তাদের রফতানি করা খনিজ বহু দেশ সামরিক খাতে ব্যবহার করছে। সেই যুক্তিতে তারা রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করেছে। এর জেরে ভারতেও প্রায় ছ’মাস বিরল খনিজ আমদানিতে বিপত্তি দেখা দেয়, পরে গত মাসে শর্তসাপেক্ষে আবার ভারতকে রফতানি শুরু করেছে চিন। তবে শর্ত অনুযায়ী ভারত চিন থেকে আনা খনিজ আমেরিকাকে রফতানি করতে পারবে না এবং সামরিক খাতে ব্যবহারও নিষিদ্ধ।

ভারতের (India) চার সংস্থা—হিতাচি, কন্টিনেন্টাল, জে-শিন এবং ডিই ডায়মন্ডস—কে এই শর্তে রফতানির অনুমতি দিয়েছে চিন। ফলে ভারতীয় শিল্পে খনিজ সরবরাহ আংশিকভাবে স্বাভাবিক হলেও ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক জটিল পরিস্থিতিতে এমন কৌশলগত খনিজের ক্ষেত্রে বিদেশি নির্ভরতা দেশের প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি ব্যবস্থার জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতিতে বুধবারের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে ‘টাইমলি’ এবং ‘কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ বলেই দেখা হচ্ছে।

India took big step to build rare earth magnets.

আরও পড়ুন:শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে মরিয়া বাংলাদেশ! ইউনুস সরকারের চিঠির জবাবে কি বলল ভারত?

সরকারি অনুমান অনুযায়ী, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে স্থায়ী চৌম্বক পদার্থের চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। বর্তমানে ভারতে (India) এ ধরনের উপাদানের প্রায় পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সেই প্রেক্ষিতে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশ শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণেই নয়, ভবিষ্যতে একটি বড় রপ্তানিকারক দেশ হিসেবেও উঠে আসতে পারে—এমনটাই আশা নয়াদিল্লির।