বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গত সপ্তাহের প্রথমদিনই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নজিরবিহীন এক রায় দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। কলমের এক খোঁচায় চাকরি হারিয়েছেন ২৫,৭৫৩ জন। বাতিল করা হয়েছে ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেল। তবে এবার নিয়োগ নিয়ে একটি বিরাট নির্দেশ দিল আদালত। দীর্ঘ ২৬ বছরের টানাপোড়েন শেষে আইসিডিএস সুপারভাইজার (ICDS Supervisor) নিয়োগের জট খুলল।
মামলার বয়ান অনুসারে, ১৯৯৮ সালে আইসিডিএস (ICDS) সুপারভাইজার পদে সর্বশেষ নিয়োগ হয়। এরপর ২০১৯ সালে ফের শুরু হয় নিয়োগ প্রক্রিয়া। মোট ৩৪৫৮টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এদিকে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনামায় স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে, সম্পূর্ণ শূন্যপদের ৫০% পদে অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীদের থেকে পদোন্নতির ভিত্তিতে নিয়োগ করতে হবে।
তবে অভিযোগ উঠেছে, ৩৪৫৮টি শূন্যপদের মধ্যে মাত্র ৪২২টি শূন্যপদ রেখে বাকি পদগুলিতে সরাসরি নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন।
গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারকে ৫০% শূন্যপদে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের থেকে প্রোমোশনের ভিত্তিতে নিয়োগের নির্দেশ দেন। তবে অভিযোগ, বিচারপতির সেই নির্দেশ না মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া বহাল রাখে রাজ্য সরকার। এদিকে অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীদের পদোন্নতির ভিত্তিতে সুপারভাইজার পদে নিয়োগের জন্য একটি পরীক্ষা হয়। প্রকাশিত হয় ১১৫২ জনের একটি মেরিট লিস্ট। তাঁরা পরবর্তীতে ভাইভা দিতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ ময়নায় ‘নৃশংসভাবে’ খুন BJP কর্মী! ভোটের আবহেই বিরাট নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট
তবে ফের অভিযোগ ওঠে, প্যানেল প্রকাশ না করে রাজ্য সরাসরি নিয়োগ চালু রেখেছে। সেই কারণে মেধা তালিকায় নাম থাকা ২০০ জন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ফের উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে জাস্টিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে জাস্টিস সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের হয়। তবে ডিভিশন বেঞ্চ কোনও স্থগিতাদেশ দেয় না।
এরপর ৩০ জন মামলাকারীর আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরী জাস্টিস রাজশেখর মান্থার এজলাসে জানান, কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী ৫০% শূন্যপদে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের থেকে পদোন্নতির ভিত্তিতে নিয়োগ করতে হবে। হাই কোর্ট এই মর্মে নির্দেশ দিলেও তা মানা হয়নি। যা কিনা বেআইনি। ৫০% শূন্যপদে যাতে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মধ্যে থেকেই নিয়োগ করা হয়, সেই অনুযায়ী আদালতকে নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানান তিনি।
সবটা শোনার পর জাস্টিস মান্থা বলেন, বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের ওপর যেহেতু কোনও স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়নি, সেই কারণে পিএসসি এবং রাজ্য সরকারকে ৫০% শূন্যপদে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের থেকে পদোন্নতির ভিত্তিতে নিতে হবে। অর্থাৎ ৩৪৫৮ শূন্যপদের মধ্যে ১৭২৯টি পদে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মধ্যে থেকেই পদোন্নতির ভিত্তিতে নিয়োগ করতে হবে। গত ১২ এপ্রিল সরকারের তরফ থেকে যে ৪০৯ জনের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, সেই অনুযায়ী সরকার নিয়োগ চালিয়ে যেতে পারবে। তবে বাকি ১১৫২ পদেও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের থেকেই নিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই বিষয় যেহেতু ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন, সেই কারণে আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারকে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।