বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নিজের বিরুদ্ধে হওয়া রাজ্য পুলিশের এফআইআর-কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Ganguly)। সেখানেই মিলল স্বস্তি। বৃহস্পতিবার অভিজিতের করা মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta high court) স্পষ্ট জানিয়ে দিল, ভোটের মধ্যে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে না রাজ্য সরকার।
এদিন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মামলার শুনানি চলে। বিচারপতি ঘোষ জানিয়েছেন, আগামী ২১ জুন এফআইআর-এর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে কিনা তার বিচার হবে। তবে তার আগে কোনোভাবেই অভিজিতের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারবে না পুলিশ।
বিজেপি প্রার্থীর মামলায় শুনানি দিতে গিয়ে এদিন আদালতে উঠে আসে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল প্রসঙ্গও। রাজ্যের এজিকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি ঘোষ বলেন, ”আপনি জানেন কয়েকদিন আগেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জামিন হয়েছে। এই লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে কোনও রকম হয়রানি করবেন না।” বিচারপতির পাল্টা রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ১৫ জুন পর্যন্ত অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে না, নিশ্চিত করছি। অর্থাৎ লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ পর্যন্ত আপাতত মহা স্বস্তিতে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রেক্ষাপট:
সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটে তমলুক আসন থেকে গেরুয়া শিবিরের হয়ে লড়ছেন তিনি। বিজেপিতে যোগদানের পর গত ৫ মে এক ঘটনার সূত্র ধরে FIR হয় প্রাক্তন বিচারপতির বিরুদ্ধে।
ওই দিন তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময় রীতিমতো ধুন্ধুমার বেঁধে যায়। সেই ইস্যুতেই মামলা দায়ের হয়েছিল অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে।
৫ তারিখ তমলুকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান অভিজিৎ। সেই উপলক্ষে শান্তিপূর্ণভাবেই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করে বিজেপি। তবে সেখানেই অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে। একদিকে বিজেপির পথসভা, অন্যদিকে তমলুকের হাসপাতাল মোড়ে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে চাকরিহারাদের ধর্না-অবস্থান চালাচ্ছিলেন তৃণমূলপন্থী চাকরিহারারা শিক্ষকরা। বিজেপির মিছিল সেই চত্বরে পৌঁছতেই ঝামেলা শুরু হয়।
হঠাৎই বিজেপির মিছিলকে উদ্দেশ্য করে ‘চোর’ স্লোগান দিতে শুরু করেন তারা। ক্রমাগত ‘চোর’ স্লোগান তোলা হয় চাকরিহারা শিক্ষকদের মঞ্চ থেকে। অনশন মঞ্চের স্লোগানে উত্তেজনা ছড়ায়। পাল্টা স্লোগান দিতে শুরু করেন বিজেপি কর্মীরা। এরপরই পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলেছে যায়।
এরপর পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি। এরই মধ্যে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। অভিযোগ, বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা শিক্ষকদের অনশন মঞ্চের দিকে তেড়ে আসে। পাথর ছোঁড়া থেকে চেয়ার ভাঙ্গা সবমিলিয়ে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। পাথরের আঘাতে একজন শিক্ষক ও এক শিক্ষিকা আহত হন বলে খবর মেলে।
আরও পড়ুন: গরম থেকে মুক্তি! একটু পরই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হবে দক্ষিণবঙ্গের এই ৫ জেলায়: আবহাওয়ার খবর
এই ঘটনার পরই আন্দোলনকারীদের তরফে থানায় অভিযোগ জানানো হয়। বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, ময়নার তিলখোজা এলাকার প্রশান্ত দাস-সহ অন্তত ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয় তমলুক থানায়। খুনের চেষ্টা, হামলা, ভাঙচুর-সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ।
তবে বিজেপি সূত্রে জানানো হয়, অশান্তির সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না অভিজিৎ। প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে একটি হুড খোলা গাড়িতে চেপে পথসভা করছিলেন তিনি। তারপরও কেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হল তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন ওঠে। সেই নিয়েই পুলিশের এফআইআর-কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যান অভিজিৎ। এদিন সেই মামলারই শুনানি ছিল।