বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বিগত কয়েকদিন ধরেই শিরোনামে রয়েছে ট্যাব কেলেঙ্কারি। ‘তরুণের স্বপ্ন’ (Taruner Swapna) চুরি নিয়ে উত্তাল বাংলা। সম্প্রতি এই নিয়ে মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাগডোগরা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানান, এখনও যে পড়ুয়ারা ট্যাবের টাকা পায়নি, তাঁদের টাকা দেবে রাজ্য। এবার এই নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ খুললেন এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার। সেই সঙ্গেই কলকাতা পুলিশ সূত্রে পাওয়া গিয়েছে বেশ কিছু খবর।
ট্যাব কেলেঙ্কারি (Taruner Swapna) নিয়ে কী বলছে পুলিশ?
ইতিমধ্যেই ট্যাব কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সেখানে বেশ কিছু তথ্যও উঠে এসেছে। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, টেম্পারিং সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমে ভাবা হয়েছিল, ডকুমেন্ট বানিয়ে কেউ নানান স্কুলের সব লগ ইন আইডি জানে। সব স্কুলের আলাদা আলাদা লগ ইন আইডি রয়েছে। অনেকেরই এত সহজ পাসওয়ার্ড যেটা খুব সহজেই আন্দাজ করা যায় বলে খবর। সেই সঙ্গেই জানা যাচ্ছে, আইপির টাইমিং আনঅথরাইজড। শুধু তাই নয়, পুলিশের হাইপোথিসিসও নাকি মিলে যাচ্ছে। হয়তো ভেতরের কেউ কিংবা চুক্তিভিত্তিক কর্মী জড়িত বলে অনুমান গোয়েন্দাদের। পুলিশ সূত্রে খবর, শিক্ষা দফতর কিষাণগঞ্জে একটা আইপি পেয়েছে। ৪২টা অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণ ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। টাকা উদ্ধার হয়েছে। অধিকাংশ কিষাণগঞ্জের।
আরও পড়ুনঃ আরজি কর পরবর্তী অধ্যায়ে বড় উদ্যোগ অভিষেকের! কী করতে চলেছেন তৃণমূল সাংসদ?
জানা যাচ্ছে, ‘তরুণের স্বপ্ন’এর (Taruner Swapna) এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে শিক্ষা দপ্তরের কেউ বা কারা জড়িত রয়েছেন কিনা সেই সম্ভাবনা লালবাজারের তরফ থেকে সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে আবার এই একই বিষয়ে ভবানী ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার।
এডিজি দক্ষিণবঙ্গ (ADG South Bengal) প্রথমেই জানান, ট্যাব কেলেঙ্কারির মামলাগুলির তদন্তে রাজ্য পুলিশের তরফে জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন মনিটরিং টিম বানানো হয়েছে। তার নেতৃত্বে সিনিয়র অফিসাররা আছেন। সুপ্রতিম সরকার বলেন, এখনও অবধি পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ৯৩টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে এবং গ্রেফতারির সংখ্যা ১১। তাঁদের জেরা করে বেশ কিছু সূত্র পাওয়া গিয়েছে বলে জানান তিনি।
তদন্ত প্রসঙ্গে এডিজি দক্ষিণবঙ্গ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ৩ জন গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২ জন মালদহ এবং ১ জন উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দা। তাঁদের থেকে বেশ কিছু নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে। মোবাইল ফোন সিজ করা হয়েছে। সেখান থেকে ‘তরুণের স্বপ্ন’ (Taruner Swapna) চুরির ক্ষেত্রে একটা আন্তঃরাজ্য অসাধু চক্র কাজ করার প্রবল সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেখা গিয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্তা।
সুপ্রতিম সরকার বলেন, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড এবং রাজস্থানে ডিবিটি স্কিমের টাকা সাইবার প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করার কথা স্বীকার করেছে ধৃতরা। একইসঙ্গে তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া নথি থেকেও সেই প্রমাণ মিলেছে বলে জানান তিনি। এছাড়া ন্যাশানাল স্কলারশিপ পোর্টাল থেকেও মেধাবী পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ টাকা এই প্রতারকরা সাইবার প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে বলে জানান এডিজি দক্ষিণবঙ্গ। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির সিআইডি ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অসাধু ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এডিজি দক্ষিণবঙ্গ বলেন, ‘এই অসাধু চক্র কোনও ভাবে সিস্টেমকে ম্যানিপুলেট করেছে কিনা, গ্রাউন্ড লেভেলে কারোর গাফিলতি ছিল কিনা, কোনও ধরণের চক্র কারোর সঙ্গে যোগসাজশ করে আন্তঃরাজ্য কোনও গ্যাং এর নেপথ্যে রয়েছে কিনা সবটা খতিয়ে দেখা যাচ্ছে। মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখে চলছি। আর কে কে এর সঙ্গে যুক্ত সেটা দেখা হবে। এই চক্রের সঙ্গে যে বা যারা যুক্ত তাঁদের প্রত্যেককে অত্যন্ত দ্রুত আমরা গ্রেফতার করব, এই ব্যাপারে আশাবাদী’।