বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গত বছরের আগস্ট মাসে আরজি কর (RG Kar) মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-হত্যা কাণ্ডের রেশ কাটেনি আজও। ইতিমধ্যেই এই নির্মম ধর্ষণ হত্যাকাণ্ডে দোষী, সঞ্জয় রায়কে (Sanjay Roy) যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতার শিয়ালদহ আদালত। যদিও এই মামলার শুরু থেকেই নির্যাতিতার বাবা-মা বারবার দাবি জানিয়ে এসেছেন এই ঘটনায় সঞ্জয় রায় একমাত্র দোষী নয়, এই ধর্ষণ খুনের ঘটনায় আরও অনেকেই জড়িত রয়েছে। একইসাথে আরজি কর মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও অসন্তুষ্ট তাঁরা।
আরজি কর (RG Kar) দোষী সঞ্জয় বেকসুর খালাস পেয়ে যাবে?
মেয়ের জন্য ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় আরজি কর (RG Kar)মামলায় সিবিআই তদন্ত নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। কিন্তু নির্যাতিতার পরিবারের পিটিশন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সজিব খান্নার নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ গুরুতর আপত্তির কথা জানিয়েছেন।
নির্যাতিতার পরিবারের তরফে আইনজীবীরা আদালতে জানিয়েছেন তাঁরা দোষী সঞ্জয়ের ফাঁসি চান না। একই সাথে সিবিআই-এর তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও ৫৫ টি পয়েন্টে বিরাট গড়বড় রয়েছে বলেই নাকি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। সেসব শুনে আগে থেকে সাবধান করে দিয়ে নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী করুণা নন্দীর উদ্দেশ্যে এদিন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে, ‘আপনাদের আবেদনে এমন কিছু বিষয় আছে যা বিতর্কিত। আদালতে আজ যাই বলা হোক সেটার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।’
একই সাথে আরও জানানো হয়েছে, ‘ আদালতে পিটিশন করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। আপনাদের পিটিশনে এমন বিষয় উল্লেখ করবেন না যা অভিযুক্ত পক্ষ ব্যবহার করতে পারে’। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তিলোত্তমার বাবা মা তাঁদের পিটিশানে যা যা বলেছেন তা ভবিষ্যতে সঞ্জয় রায়ের আইনজীবীরা ব্যবহার করতে পারেন।
তারপরেই এদিন নির্যাতিতার বাবা-মার তরফ থেকে পিটিশন ফিরিয়ে নেওয়া হয়। অর্থাৎ সামনে-পিছনে কিছু না ভেবেই যেভাবে তাঁরা বিভিন্ন পয়েন্ট সামনে নিয়ে এসেছেন তা আদতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সঞ্জয় রায়কেই সুবিধা পাইয়ে দিতে পারে। এমনকি তাকে বেকসুর খালাসও করে দিতে পারে। ফলে এইভাবে আসলে অভিযুক্তকেই তারা সাহায্য করবে। তাই প্রশ্ন উঠছে আরজি কর (RG Kar) মামলায় এই সঞ্জয় রায় সত্যিই কি ভবিষ্যতে বেকসুর খালাস হয়ে যেতে পারে? এখনও পর্যন্ত সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ তার বিরুদ্ধে আছে বলে সিবিআই এবং রাজ্য সরকার তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে উচ্চ আদালতে আপিল করেছে।
তাহলে সঞ্জয় রায়ের বেকসুর খালাস পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই বা কেন? আসলে তিলোত্তমার বাবা-মায়ের তোলা ৫০ থেকে ৫৫ টা প্রশ্নকে সামনে রেখে আদালতে এই সাওয়াল করা যেতে পারে। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের একটি ধর্ষণ হত্যাকাণ্ডে নিন্ম আদালতে দোষী ঘোষিত হওয়ার পরেও সেই আসামীকে প্রমাণের অভাবে এবং বিভিন্ন বিষয় খুঁটিয়ে দেখে আইনজীবীর সওয়ালে সন্তুষ্ট হয়ে বেকসুর খালাস করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
আরও পড়ুন: জেলফেরত জ্যোতিপ্রিয়র জন্য বিরাট ‘সারপ্রাইজ’! এই প্রথম জোড়া বিধানসভা কমিটিতে ঠাঁই বালুর
পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণের ওপর নির্ভর করেই যখন, কোন অপরাধ প্রমাণের জন্য নির্ভর করতে হয় তখন তা সন্দেহাতীতভাবে কোর্টের সামনে রাখা তথ্যপ্রমাণের উপর নির্ভর করেই প্রমাণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ১৯৮৪–র ‘শরদ বিরধিচাঁদ সারদা বনাম স্টেট অফ মহারাষ্ট্র’ মামলায় এই পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণের সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল। মহারাষ্ট্রের ওই ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় নিন্ম আদালত দোষীকে ফাঁসির শাস্তি দেওয়ার পর বোম্বে হাইকোর্টেও সেই নির্দেশ বহাল ছিল। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তি এই রায়ের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টে। সেখানেই তার সমস্ত তথ্যকে সামনে রেখে সুপ্রিম কোর্ট ওই অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছে।
তাই সঞ্জয় রায়ের ক্ষেত্রেও নিম্ন আদালত আরজি কর (RG Kar) মামলায় যে রায় দিয়েছে সেই রায় ও তদন্ত নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা গেলে সঞ্জয় রায়ও ভবিষ্যতে বেকসুর খালাস পেতেই পারে। তখন আরজি কর কান্ডের ধর্ষণ হত্যা মামলাও রহস্য হয়েই থেকে যাবে। তাই এদিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা তিলোত্তমার বাবা-মাকে তাঁদের পিটিশন নিয়ে সতর্ক করেছেন। এখন দেখার শেষমেষ ওই তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা কি সিদ্ধান্ত নেন।