বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ছোট থেকে বড় সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক বাঙালির মধ্যে কাজ করে এক আলাদা আবেগ। তবে অন্যান্যবারের তুলনায় এবারের পুজোটা খানিক ব্যতিক্রমী হয়েই থেকে গেল। বিগত কয়েকদিন ধরে রাজ্যের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উঠে এসেছে সরস্বতী পুজো করতে না দেওয়ার অভিযোগ। এমনকি খাস কলকাতার বুকে নজিরবিহীনভাবে পুজো হয়েছে পুলিশ পাহাড়ায়। এই ঘটনার জেরে রীতিমতো শোরগোল পরে গিয়েছে সারা বাংলায়। এরই মাঝে বাগদেবী সরস্বতী প্রসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন বাংলা বিনোদন জগতের পরিচিত মুখ তথা ‘বামপন্থী’ অভিনেতা অম্বরীশ ভট্টাচার্য (Ambarish Bhattacharya)।
অম্বরীশের (Ambarish Bhattacharya) বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি BJP নেতার
গোটা বাঙালি সমাজে দেবী সরস্বতী বিদ্যার দেবী, জ্ঞানের দেবী হিসাবেই পুজিত হন। প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে দেবীর আরাধনায় মেতে ওঠেন সবাই। এবার স্বয়ং বাগদেবী সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছেন অম্বরীশ (Ambarish Bhattacharya)। রবিবার সরস্বতী পুজোর দিন একটি সংবাদমাধ্যমে লেখা কলমে অভিনেতা দাবি করেছেন পুরাণ মতে সরস্বতী নাকি কামেরও দেবী। তাঁর সেই দাবি ঘিরেই শুরু হয়েছে বিস্তর সমালোচনা। বছরের পর বছর ধরে বাঙালি ছেলেমেয়েদের কাছে সরস্বতী পুজো মানেই প্রেম দিবস অর্থাৎ ‘বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। তাই বলে মা সরস্বতীকে সরাসরি ‘কাম দেবী’ বলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন অভিনেতা।
অম্বরীশের (Ambarish Bhattacharya) এই মন্তব্য আঘাত হেনেছে হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে। এবার এই বিষয়ে অভিনেতাকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি (Tarunjyoti Tewari)। তিনি বলেছেন অম্বরীশ অবিলম্বে ক্ষমা না চাইলে আইনি ব্যবস্থা নেবেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় অম্বরীশের মন্তব্যের স্ক্রিনশট শেয়ার করে তরুণজ্যোতি লিখেছেন, ‘আমাদের সমাজে ধর্ম ও দেব-দেবীদের প্রতি শ্রদ্ধা একটি ঐতিহ্যবাহী এবং সংবেদনশীল বিষয়। দেবী সরস্বতী শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের নয়, ভারতীয় সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি জ্ঞান, বিদ্যা, সঙ্গীত ও শিল্পকলার দেবী হিসেবে সম্মানিত। পুরাণে বা শাস্ত্রগ্রন্থে সরস্বতীকে কামের দেবী হিসেবে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।’
বিজেপি নেতা একইসাথে লিখেছেন, ‘অম্বরীশ ভট্টাচার্যের (Ambarish Bhattacharya) মতো বামপন্থী অভিনেতারা নিজেদের মতামত বা ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিকোণ থেকে দেব-দেবীদের নিয়ে মন্তব্য করতে পারেন। কিন্তু তা যেন অপমানজনক ও বিভ্রান্তিকর না হয়। ধর্মীয় বিশ্বাসকে আঘাত করা বা অবমাননাকরভাবে উপস্থাপন করা শিল্পের নামে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হঁশিয়ারি দিয়ে বিজেপি নেতা আরও বলেছেন, ‘এটি স্পষ্ট যে, দেবী সরস্বতীকে বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী হিসেবে উপস্থাপন করাই হিন্দু পুরাণ ও ধর্মগ্রন্থের মূল বার্তা। অম্বরীশ ভট্টাচার্যের মন্তব্য একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার সামিল। আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, কিন্তু সেই স্বাধীনতা যেন কারও ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানার মাধ্যম না হয়। এই ধরনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং যদি লেখক ক্ষমা না চায় এই মন্তব্যের জন্য তাহলে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব’। জানা যাচ্ছে, বিতর্ক তৈরী হতেই ওই বিতর্কিত আর্টিকেল থেকে ‘সরস্বতী কামের দেবী’ এই অংশটুকু বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে এই নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাননি অম্বরীশ।
উল্লেখ্য ওই লেখার মধ্যে অভিনেতা নিজে জানিয়েছেন বামপন্থী পরিবারে বেড়ে ওঠায় তিনি নাকি ছোট থেকে কখনও সরস্বতী পুজোয় অঞ্জলি দেননি। একইসাথে সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন,‘অর্ধেক জীবন’ পড়ে জেনেছিলাম, সুনীলের প্রথম চুম্বন বাগদেবীকে। ওঁর সেই রোম্যান্টিক ভাবনা আমার বেশ লেগেছিল।’