প্রাথমিকে ‘টাকার খেলা’! কোন চাকরির কত ‘দাম’? এবার CBI চার্জশিটে ফাঁস সব

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ প্রাথমিক নিয়োগে (Primary Recruitment Scam) ‘টাকার খেলা’! দীর্ঘদিন ধরে এই দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্ত করছে সিবিআই (CBI)। সম্প্রতি এই মামলায় তৃতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তার সঙ্গে বেশ কিছু ‘প্রামাণ্য নথি’ দেওয়া হয়েছে। সেখানেই তুলে ধরা হয়েছে মহিদুল হক আনসারি নামের একজন সাক্ষীর বয়ান। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় এজেন্সির কাছে সাক্ষী হিসেবে সেই বয়ান দেন তিনি।

প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে (Primary Recruitment Scam) চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস!

বিএড কলেজে রেজিস্ট্রেশন, এনওসি, শিক্ষকতার প্রশিক্ষণের তোরজোড় থেকে চাকরি! প্রাথমিক নিয়োগের প্রত্যেক ধাপেই ছড়িয়েছিল দুর্নীতির জাল! সর্বত্র ছিল ‘টাকার খেলা’। সেখানে যেমন পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee), কুন্তল ঘোষ, মানিক ভট্টাচার্যদের মতো রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা ছিলেন, তেমনই ছিলেন তাপস মণ্ডল, বিভাস অধিকারীদের মতো নানান মাপের এজেন্টরা। সিবিআইয়ের দাবি, প্রাথমিক নিয়োগের কোন ধাপে কত টাকা নেওয়া হবে সেটার একটা ‘অলিখিত তালিকা’ ছিল।

‘প্রভাবশালী’দের মাধ্যমে কীভাবে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি (Primary Recruitment Scam) হয়েছে সেটা মহিদুলের বয়ানের সূত্রেই চার্জশিটে তুলে ধরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কাছে সেই বয়ানের প্রতিলিপি এসেছে। সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, আদলে মুর্শিদাবাদ জেলা নিবাসী মহিদুল বর্তমানে কলকাতায় থাকেন। একাধিক বিএড কলেজের মালিক তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। বিএড ও ডিএলএড কলেজের কর্ণধার ও টেট প্রার্থী হিসেবে নিয়োগ দুর্নীতিতে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তদন্তকারীদের সামনে তুলে ধরেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ ‘কে অর্জুন? BJP-ই তো ওকে বসার চেয়ার দেয় না’! ঝাঁঝালো আক্রমণ মদন মিত্রর

মহিদুলের দুই ভাই। ছোট ভাই চঞ্চল ওরফে মোহাম্মদ জাভেদ মিয়াঁদাদ আনসারি পিএইচডি করেও চাকরি পাননি। সেই কারণে বিএড কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন মহিদুল। তিনি নিজে হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। এরপর এমবিএ পড়া শুরু করলেও তা শেষ করেননি। ২০১৪ সালে তাঁর ভাইয়ের বউ তথা চঞ্চলের স্ত্রী খাদিজা খাতুন টেট পরীক্ষায় বসলেও পাশ করতে পারেননি।

সিবিআইয়ের দাবি মহিদুল তাদের জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে কুন্তলের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তাঁর। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে কুন্তলের সঙ্গে পরিচয় হয়। বিএড কলেজগুলির কর্ণধারদের বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন তিনি। মহিদুল কুন্তলের বিষয়ে জানতেন যে তিনি রাজনৈতিক ‘প্রভাবশালী’। সেই কারণে এক বন্ধুকে নিয়ে কুন্তলের সঙ্গে আলাপ করেন তিনি।

CBI Primary recruitment scam Partha Chatterjee

মহিদুল কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে জানিয়েছেন, কুন্তল তাঁদের জিজ্ঞেস করেন তিনি ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় বসেছিলেন কিনা। জবাবেব মহিদুল বলেন, তিনি ও তাঁর ভাইয়ের বউ এই পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তবে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। একথা শুনে কুন্তল বলেন, তিনি প্রাথমিক (Primary Recruitment Scam) বিদ্যালয়ে চাকরি ‘জোগাড়’ করে দিতে পারেন। এই নিয়ে ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার ৬টি ভুল প্রশ্নের কথা বলেন কুন্তল। পরবর্তীতে কুন্তল তাঁদের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা করে চান। মহিদুল জানান, মোট পাঁচ জন চাকরিপ্রার্থীর জন্য ১ লক্ষ করে মোট ৫ লক্ষ টাকা কুন্তলকে দিয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও চাকরি হয়নি। এরপর বছর দুয়েক পর কুন্তলকে টাকা ফেরানোর জন্য চাপ দেওয়া হলেও তিনি আশ্বস্ত করেন যে চাকরি হবেই! তবে পাঁচ জন নয়, শুধু মহিদুল ও তাঁদের বিএড কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ নন্দীর চাকরির বন্দোবস্ত করে দেবেন। এরপর ফের ২ লক্ষ টাকা করে দাবি করা হয় বলে অভিযোগ করেন মহিদুল।

আরও পড়ুনঃ ছাব্বিশের ভোটের আগেই বিরাট দাবি! ‘আর ক্ষমতায় ফিরবেন না মমতা’! বোমা ফাটালেন সাংসদ

এর মধ্যেই আবার মহিদুলের এক ভাই ও চারজন বন্ধু উচ্চ প্রাথমিকে পাশ করে যান। তবে ইন্টারভিউয়ে ডাক পাননি। সেই সময়ও এগিয়ে আসেন কুন্তল। সিবিআইকে মহিদুল জানিয়েছেন, পাঁচ জনকে উচ্চ প্রাথমিকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মোট ২৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন তিনি। এরপর কয়েকদিনের মধ্যেই ওই পাঁচ জন ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পান। এরপর কুন্তলকে ২৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২০ সালে হাইকোর্টের নির্দেশ মতো উচ্চপ্রাথমিকের ওই প্যানেল বাতিল হয়ে যায়। এরপর কুন্তলের কাছে ২৫ লক্ষ ফেরত চান মহিদুল। আস্তে আস্তে ২৪ লক্ষ টাকা ফেরতও পেয়ে যান তিনি। কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে মহিদুল জানিয়েছেন, সেই সময়ই কুন্তল তাঁকে জানিয়েছিলেন, তিনি ‘কালীঘাটের কাকু’ (Kalighater Kaku) তথা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের মাধ্যমে সকল চাকরির বন্দোবস্ত করেন।

মহিদুল সিবিআইকে আরও জানিয়েছেন, বিএড পড়ুয়াদের অফলাইনে নাম নথিভুক্ত করতে টাকা দিতে হতো। ২০২০ সাল অবধি অফলাইন রেজিস্ট্রেশনের জন্য ১০,০০০ টাকা, এরপর তা কমিয়ে ৫০০০ টাকা করা হয়। তখন অনলাইন রেজিস্ট্রেশন হতো। তবে পোর্টালে নানান সমস্যা লেগেই থাকতো। সাক্ষ্যে মহিদুল দাবি করেছেন, ‘ইচ্ছা’ করে ওই পোর্টালে গোলযোগ করা হতো ও তা করাতেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য।

আরও পড়ুনঃ উপকৃত হবে কয়েক হাজার পরিবার! মহিলাদের জন্য দুর্দান্ত প্রকল্প আনল সরকার! কী সুবিধা মিলবে?

সিবিআইয়ের কাছে দেওয়া বয়ানে মহিদুল জানিয়েছেন, ডিএলএড পড়ুয়া থেকে চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা তোলার তাগিদ তৈরি হয়েছিল মহিদুলের জন্য। সেই কারণে নিয়োগ দুর্নীতিতে (Primary Recruitment Scam) প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন বিভাস অধিকারী ও তাপস মণ্ডল। কেন্দ্রীয় এজেন্সির কাছে মহিদুল দাবি করেছেন, নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতেন বিভাস। এনওসির দ্বারা বিএড কলেজ থেকে টাকা তোলার ফন্দি প্রাক্তন মন্ত্রীকে বিভাসই দিয়েছিলেন।

পার্থর নির্দেশ মতো, বিভাসের ঠিক করে দেওয়া কলেজগুলিকে এনওসি দেওয়া হতো (Primary Recruitment Scam)। এর জন্য কলেজের কর্ণধারদের ৭ লক্ষ টাকা করে দিতে হতো। সিবিআইকে দেওয়া বয়ানে মহিদুল জানিয়েছেন, বোর্ড অফ এডুকেশনের তত্ত্বাবধানে বিএড কলেজগুলির রেজিস্ট্রেশন হতো। এর সূত্রেই রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করেছিলেন বিভাস।

Sneha Paul
Sneha Paul

স্নেহা পাল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়াকালীন সাংবাদিকতা শুরু। বিগত ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত। রাজনীতি থেকে বিনোদন, ভাইরাল থেকে ভ্রমণ, সব ধরণের লেখাতেই সমান সাবলীল।

সম্পর্কিত খবর