বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ‘নরকের’ রূপ নিয়েছে ভূস্বর্গ! কাশ্মীরের (Kashmir Attack) বুকে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন। জলপাই রঙের পোশাক পরে পর্যটকদের কাছে, তারপর ধর্ম শুনেই নির্বিচারে শতাধিক রাউন্ড গুলি! গোটা ঘটনায় যখন তোলপাড় গোটা দেশ সেই সময়ই বিস্ফোরক তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin)।
কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে কলম ধরলেন তসলিমা। সমাজ মাধ্যমে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে তসলিমা (Taslima Nasrin) লিখেছেন,
‘ইসলাম যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন সন্ত্রাস বেঁচে থাকবে।
ইসলাম যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন অমুসলিমদের কোনও নিরাপত্তা থাকবে না, মুক্তচিন্তক এবং যুক্তিবাদীদের কোনও নিরাপত্তা থাকবে না, নারীর কোনও নিরাপত্তা থাকবে না।
ইসলাম যতদিন বেঁচে থাকবে, ফুল শুকিয়ে যেতে থাকবে, শিশুরা মরে যেতে থাকবে, বৃষ্টির মতো ঝরে পড়তে থাকবে লক্ষ লক্ষ মৃত পায়রা,
ইসলামের গর্ভ থেকে জন্ম নিতে থাকবে ঘৃণা, জন্ম নিতে থাকবে কুৎসিত দানব।
ইসলাম যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন সভ্য হবে না কোনও রাজ্য, কোনও রাষ্ট্র, সভ্য হবে না পৃথিবী।’
বুধবার সমাজমাধ্যমে তসলিমা আরও লেখেন,
‘যে ধর্ম মানবিক নয়, সে ধর্মকে হয় মানবিক করো, নয়তো সে ধর্মকে ত্যাগ করো।
মিথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ধর্মগুলো। এক ফুঁয়ে উড়ে যেতে পারে সব। কিন্তু অজ্ঞতা আর অশিক্ষার মাটি এমন কামড়ে ধরে আছে ধর্মের শেকড় যে ধর্মগুলোকে উপড়ে ফেলা সহজ হচ্ছে না।
যুগে যুগে মানবিক হয় মানুষ। যত সে বর্বরতা থেকে মুক্ত হয়, সে তার ধর্মকেও বর্বরতা থেকে মুক্ত করে।
একটি ধর্মেরই বিবর্তন থমকে আছে। একটি ধর্মেই জঙ্গিবাদ সমর্থন পায়, একটি ধর্মই একবিংশ শতাব্দিতে সন্ত্রাসী লেলিয়ে মানবতাকে আবর্জনার স্তূপে ছুড়ে দেয়, মানবাধিকারকে হত্যা করে, নারীর অধিকারকে কবর দিয়ে দেয়।
যে ধর্ম মানবিক নয়, সে ধর্মকে হয় মানবিক করো, নয়তো সে ধর্মকে ত্যাগ করো।’
প্রসঙ্গত, পহেলগাঁওয়ের বৈসারন ভ্যালির রিসর্টে অতর্কিত হামলার নেপথ্যে রয়েছে জঙ্গি সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ বা TRF (The Resistance Front)। হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছে পাক ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার সহযোগি সংগঠন TRF। জানা গিয়েছে ‘লস্কর-ই-তইবা’র (Lashkar-e-Taiba) ছত্রছায়ায় থাকা TRF হামলা চালানোর আগে প্রায় সাতদিন ধরে গোটা এলাকা রেইকি করে। তারপরই হয়ে আট্যাক।
বহুদিন ধরে কাশ্মীরে সক্রিয় থাকা এই জঙ্গি সংগঠন সকলকে বিভ্রান্ত করতে হামলার দিন জলপাই রঙের পোশাক পরে পর্যটকদের কাছে আসে। হাতে ছিল রাইফেল। জানা যাচ্ছে ঘোড়ায় চেপে ৬-৭ জন জঙ্গি রিসর্টে প্রবেশ করে। তারপর তারা একাধিক দলে ভাগ হয়ে শতাধিক রাউন্ড গুলি চালায়। অভিযোগ, ধর্ম দেখে ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে চালানো হয় হামলা।
জানা যাচ্ছে এই জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছে সাজিদ জাট, সাজ্জাদ গুল ও সালিম রেহমানি। সামাজিক মাধ্যমে এই সংগঠন নিজেদের প্রচার চালায় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। বহুদিন ধরে তারা টার্গেট করে রেখেছিল পহেলগাঁওকে। এপ্রিলে পর্যটনের ভরা মরসুমে হামলার ছক কষা হয়।
আরও পড়ুন: ‘শুধু দুর্ভাগ্যজনক ও ভয়াবহ নয়, বরং এই হামলা…’! পহেলগাঁও-কাণ্ডের পর মুখ খুললেন অভিষেক
২০১৯ সালে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর, পাকিস্তানের আইএসআই-এর ছত্রছায়ায় TRF গঠিত হয় বলে খবর মিলেছে। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা নাগাদ পহেলগাঁও হিল স্টেশন থেকে প্রায় ৫ কিমি দূরে বৈসরন উপত্যকায় ঢুকে জঙ্গিরা হামলা চালায়। মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। নিহতদের মধ্যে ২ জন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। আহত অন্তত ২০। সদ্য বিবাহের পর কেউ গিয়েছেন হানিমুনে, কেউ গিয়েছিলেন পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে। কিন্তু কয়েক মিনিটের এলোপাতাড়ি গুলিতে শ্মশানপুরীতে পরিণত হল স্বপ্নের ন্যায় পহেলগাঁও (Pahalgam)।