বাংলাহান্ট ডেস্ক: বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিন সাহসী লেখিকা হিসেবে পরিচিত। এমনকি তার সাহসী লেখার জন্য নির্বাচিত থাকতে হয়েছে দীর্ঘ ২৫ বছর। এমনকি মাতৃভূমি বাংলাদেশ ঠাঁই হয়নি তাঁর। গত ১৫ই আগষ্ট নিজের ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি পোস্ট লেখেন। সেখানে তিনি লেখেন,”স্ত্রী রোজগার করে আনে, স্বামীরা বসে বসে খায়।” তার এই পোস্টে খুশি বেশির ভাগ মহিলারাই। এক বাক্যে সমর্থন করেছেন তার এই পোস্টটিকে। পড়ে নিন কি লিখেছেন তিনি।
“কয়েক বছর ধরে লক্ষ করছি, বাড়িতে রান্নার কাজে বা সাফ সুতরো করার কাজে সাহায্য করে যে মেয়েরা, তারা মোটা করে সিঁদুর পরে, দু’হাতে শাঁখা পলা পরে। অথচ তাদের স্বামী বলতে কেউ নেই, স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, অন্য কারো সংগে সংসার করছে, অথবা কাউকে বিয়ে করে নিয়েছে। এই মেয়েগুলো কোনও আত্মীয়ের সঙ্গে থাকে, অথবা বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে একা থাকে। গরিবদের মধ্যে পুরুষেরা আকছার বহু বিবাহ করে। আসলে এদের বিয়েগুলো সাধারণত মন্দিরে গিয়ে মালা পরানোর মাধ্যমে ঘটে। রেজেস্ট্রি হয় না বিয়ের। সুতরাং যাকে পছন্দ হলো, তাকে নিয়েই এরা মন্দিরে চলে যেতে পারে। টাকা পয়সা বেশি থাকলে একাধিক স্ত্রীকে এক বাড়িতে রাখে, তা না হলে একটিকে ত্যাগ করে আরেকটিকে নিয়ে থাকে। যেহেতু রেজেস্ট্রি করে বিয়ে হয় না, তালাকও আইনত হয় না। মেয়েরা বাচ্চা কাচ্চাগুলোকে একাই বড় করে, একাই স্কুলে পাঠায়। বাচ্চা কাচ্চাদের বাবারা ফিরেও তাকায় না, টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করা তো দূরের কথা।
এই মেয়েরাই যখন সকালে কাজে বেরোয়, সিঁথিতে মোটা করে সিঁদুর পরে বেরোয়। শাঁখা সিঁদুর পরার এদের প্রয়োজন কেন? প্রয়োজন এই জন্য যে, এরা পাড়া পড়শিকে এবং চেনা-অচেনা সকলকে দেখাতে চায় যে এরা বানের জলে ভেসে আসেনি, এদের একটা ঠিকানা আছে। শাঁখা সিঁদুর না থাকা মানে, এদের কাছে, এদের কোনও ঠিকানা তো নেইই, এদের কোনও চরিত্রও নেই। তাছাড়া মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত সধবারা শাঁখা সিঁদুর পরে, তারাও পরে। অন্তত এই এক ব্যাপারে বড়লোক মহিলাদের সংগে এক কাতারে দাঁড়াতে পারে বাসা-বাড়িতে কাজ-করা মেয়েরা। একটি জায়গা ছাড়া তাদের তো অন্য কোনও কিছুতে মিল নেই। বড়লোকেরা চমৎকার সব বাড়িতে থাকে, তারা বস্তিতে থাকে। বড়লোকেরা ভালো খাবার খায়, তারা খায় অখাদ্য। বড়লোকেরা ঝকঝকে পোশাক পরে, তারা পরে মলিন পোশাক। কিছুতে মেলে না, শুধু শাঁখা সিঁদুরে মেলে। তাহলে কেন খুলে ফেলবে শাঁখা সিঁদুর?
আরেক দল মেয়ে আছে, যারা স্বামীর সংগে থাকছে, কিন্তু স্বামীরা কোনও উপার্জন করে না। স্ত্রী রোজগার করে আনে, স্বামীরা বসে বসে খায়। বছরের পর বছর এভাবেই চলে। মেয়েরা কেন তবে আলসে আর মদখোর স্বামীগুলোকে বের করে দেয় না কেন ঘর থেকে? দেয় না। কারণ স্বামী থাকলে মাথার ওপর একটা অভিভাবক থাকে। তুমি ঘর ভাড়া দিচ্ছ, বাজার করছো, রান্না করছো, বাচ্চাদের ইস্কুলের খরচ দিচ্ছ, ব্যাটা বসে বসে তোমার অন্ন ধংস করছে, আর কাজ নেই কর্ম নেই কথায় কথায় তোমার চুলের মুঠি ধরে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে ঘরের বার করছে, মারছে, পেটাচ্ছে, ও তোমার অভিভাবক কী করে হয়! ওই পেটানোর কাজটা করে বলেই সম্ভবত তাদের অভিভাবক মানে মেয়েরা। অভিভাবকরাই তো শাসন করে!”