বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমাদের দেশে অনেকেই চাকরির সন্ধানে অন্য শহরে পাড়ি দেন। আবার কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা অন্যত্র পাড়ি দিয়ে নিজের ব্যবসাও শুরু করেন। এমন মানুষদের অধ্যাবসায় এবং সাহসের প্রশংসা করতেই হয়।
বর্তমান প্রতিবেদন আমরা এমন একজন নারীর কাহিনি তুলে ধরবো যিনি বাড়ির আর্থিক পরিস্থিতিতে নাজেহাল হয়ে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে পাড়ি জমান এবং নিজের প্রবল ইচ্ছাশক্তির জেরে সাফল্যের এক অনন্য জগৎ তৈরি করেন।
উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের বাসিন্দা কৃষ্ণা যাদব ১৯৯৫-৯৬ সালের এই সময়টায় আর্থিকভাবে অত্যন্ত খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। পাশাপাশি, তাঁর স্বামীও এই অবস্থায় মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে, পুরো পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন কৃষ্ণা।
জীবনের সবচেয়ে কঠিন এই সময়কে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে রাজধানী শহর দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর এক পরিচিতের কাছ থেকে ৫০০ টাকা ধার নিয়ে, কৃষ্ণা পৌঁছে যান দিল্লিতে।
কিন্তু অচেনা শহরে পৌঁছেই চাকরি পাওয়া তাঁর পক্ষে মোটেও সহজ ছিল না। বহু চেষ্টা করেও কোনো কাজ না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত খানপুরের রেভলালা গ্রামে কমান্ড্যান্ট বিএস ত্যাগীর খামারবাড়ির দেখাশোনা করার কাজ করতে থাকেন কৃষ্ণা।
সেই সময় কমান্ড্যান্ট ত্যাগীর ফার্ম হাউসে কিছু বিজ্ঞানীদের পরামর্শ মত বেশ কিছু ফলের চাষ করা হয়। পাশাপাশি, তৎকালীন বাজারে এই ফলগুলির ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছিল। তাই বিজ্ঞানীরা কমান্ড্যান্ট ত্যাগীকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মত বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে অবহিত করেন।
এদিকে, ফার্ম হাউসে কাজ করার সময়, কৃষ্ণাও চাষাবাদের প্রতি খুব আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং তারপরে ২০০১ সালে তিনি উজওয়া কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তিতে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এই প্রশিক্ষণের পর কৃষ্ণা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সাহস দেখিয়ে তিন হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ১০০ কেজি গোলমরিচের আচার এবং পাঁচ কেজি লঙ্কার আচার তৈরি করেন এবং সেগুলি বিক্রি করে মোট ৫,২৫০ টাকা লাভ করেন। লাভের পরিমাণ তেমন বেশি না হলেও তিনি এই কাজ করে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
যদিও, এই সময়ে, কৃষ্ণাকে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল কিন্তু তিনি কখনই হাল না ছেড়ে তাঁর লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। এই কাজে তাঁর স্বামীও তাঁকে অনেক সমর্থন করেছিলেন। কৃষ্ণা বাড়িতে সমস্ত জিনিসপত্র প্রস্তুত করতেন এবং তাঁর স্বামী নাজাফগড়ে রাস্তার পাশে গাড়ি করে তা বিক্রি করতেন।
বর্তমানে কৃষ্ণা যাদব “শ্রী কৃষ্ণ পিকলস” ব্র্যান্ডের অধীনে বিভিন্ন ধরনের চাটনি, আচার, মোরব্বা সহ মোট ৮৭ ধরনের পণ্য তৈরি করেন। পাশাপাশি, এখন তাঁদের ওই ব্যবসায় প্রায় ৫০০ কুইন্টাল ফল ও সবজি ব্যবহার করা হয়, যার মূল্য প্রায় কয়েক কোটি টাকা।
একসময়ে রাস্তা থেকে বিক্রি শুরু করে, আজ কোম্পানিটি সফলতার শীর্ষে পৌঁছেছে। এই কারণে ২০১৬ সালের ৮ মার্চ কৃষ্ণাকে ভারত সরকারের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক দ্বারা নারী শক্তি সম্মানের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল। কৃষ্ণা যাদবের এই সাফল্য স্বাভাবিকভাবেই দেশের সকলের কাছে এক দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।