টাকার গরম! ২০০ কিমি বেগে গাড়ি চালিয়ে দুজনকে পিষেও সাত খুন মাফ ‘বড়লোকের ব্যাটা’র

বাংলা হান্ট ডেস্ক: পুনের কল্যাণী নগরের এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় (Tragic Accident) প্রাণ গেল বছর ২৪-র তরুণ-তরুণীর। ঘটনায় অভিযুক্ত ১৭ বছরের এক নাবালক যুবক (Teenager Boy)। আকন্ঠ মদ্যপান করে ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি ছুটিয়ে এদিন সোজা গিয়ে ধাক্কা মেরেছিল মোটরবাইকে। সেই গতি এতোটাই তীব্র ছিল যে বাইকে থাকা ওই তরুণ-তরুণী প্রায় ২০ ফুট উড়ে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন।

যার মধ্যে একজন ছিটকে পড়েন রাস্তায় অন্যজন পড়েন পার্কিংয়ে থাকা গাড়ির ওপর। যার ফলে ঘটনাস্থলায় মৃত্যু হয় অনীশ আওয়াধিয়া এবং অশ্বিনী কোশতার। ওইদিন ওই পোর্শে গাড়ির স্টিয়ারিং যে নাবালকের হাতে ছিল সে আসলে পুনের বিখ্যাত রিটেইলারের ছেলে। ঘটনার মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই ওই নাবালক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করলেও শুধুমাত্র নাবালক হওয়ার কারণ দেখিয়ে মাত্র ১৫ঘণ্টার মধ্যেই জামিন পেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে সে। তবে পরে গ্রেফতার করা হয় ওই নাবালকের বাবাকে।

ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী ১৮ বছর না হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায় না, আর মদ্যপানের ক্ষেত্রে  ন্যূনতম বয়স হতে হয় ২৫ বছর। ওইদিন এই দুই নিয়মের মধ্যে কোনোটাই মানেননি ওই নাবালক যুবক। জানা যাচ্ছে, সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেছে সে। এদিন তারই সেলিব্রেশন করতে বন্ধুদের সাথে শহরের দুটি পানশালায় গিয়েছিলেন ওই নাবালক।

ইতিমধ্যেই ওই রেস্তোরাঁ দুটির সিসিটিভি ফুটেজ হাতে এসেছে পুলিশের। এছাড়া ওই নাবালক নিজের মুখে স্বীকার করেছে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও তার বাবা তাকে গাড়ির চাবি দিয়েছিলেন এবং বন্ধুদের সঙ্গে সে যে মদ খেয়েছে সেকথাও জানতেন তার বাবা।জানা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই ওই নাবালকের বাবাকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি মামলা করা হয়েছে দুই রেস্তোরাঁর মালিকের বিরুদ্ধেও। জানা যাচ্ছে,জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টের ৭৫ এবং ৭৭ ধারায় মামলা হয়েছে ওই নাবালকের ওপর।

আরও পড়ুন: মানুষ নয় মুরগি প্রাণ কাড়লো ৩ যুবকের! মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ঘুম উড়লো গ্রামবাসীর

যার মধ্যে প্রথমটি, জেনেশুনে সন্তানের ব্যাপারে গাফিলতি বা সন্তানকে শারীরিক/মানসিক অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেওয়া। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ বছরের জেল ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে। আর দ্বিতীয় ধারাটি, নাবালককে মাদক বা নেশাদ্রব্য দেওয়া, এক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ সাত বছর জেল হতে পারে।প্রসঙ্গত ওই নাবালকের বয়স আর মাত্র চার মাস পরেই ১৮ হতে চলেছে। তাই এত বড় অপরাধ করার পরেও শুধুমাত্র নাবালক বলে তাকে ছাড় দেওয়াতে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে।

এ প্রসঙ্গে পুনের পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন ঘটনার ভয়াবহতা ও গুরুত্ব বিচার করে অভিযুক্তকে সাবালক হিসেবে গণ্য করার আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু আদালত তার গ্রাহ্য করেনি।সে ক্ষেত্রে জামিনের অর্ডারের বিরুদ্ধে সেশনস কোর্টের দ্বারস্থ হবে পুনের পুলিশ। প্রসঙ্গত এদিন ওই নাবালক যে অপরাধ করেছে তাতে তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ (২) ধারায় মামলা রুজু হওয়া উচিত ছিল। তাছাড়া ওই নাবালকের বয়স ১৮ হতে মাত্র চার মাস বাকি।

Porshhe

তাই আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতার দাবি ওই নাবালকের অপরাধের গুরুত্ব বিচার করে তাকে জুভেনাইল হোমে পাঠিয়ে তার সাইকোমেট্রিক টেস্টের উদ্যোগ নেওয়া এবং এই নাবালকের মতো অন্য কেউ যাতে একই অপরাধে বিরত থাকে, সেজন্য দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করা উচিত ছিল। এছাড়াও এদিন তিনি  জানিয়েছেন নির্ভয়া কান্ডের পর আমাদের দেশের সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যদি কোন নাবালক একজন প্রাপ্তবয়স্কের মতো গুরুতর কোন অপরাধ করে তাহলে তাকে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।


Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর