বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে বিশ্বব্যাপী রেয়ার আর্থ মিনারেলসের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেটি স্মার্টফোন থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক যানবাহন, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এবং রিনিউয়াবেল এনার্জি ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে, চিন বিশ্বব্যাপী রেয়ার আর্থ বাজারের ৯০ শতাংশ দখল করে আছে। কিন্তু, এখন ভারত (India) রাজস্থানের বালোত্রা জেলায় আবিষ্কৃত রেয়ার আর্থ খনিজ পদার্থ দিয়ে এই একচেটিয়া অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
চিনকে টক্কর দেবে ভারত (India):
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, ১৭ ধরণের বিরল মাটির খনিজ পদার্থ রয়েছে। যেগুলি হল ল্যান্থানাম, সেরিয়াম, প্রাসিওডিয়ামিয়াম, নিওডিয়ামিয়াম, প্রোমিথিয়াম, সামারিয়াম, ইউরোপিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম, টারবিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, হোলমিয়াম, এরবিয়াম, থুলিয়াম, ইটারবিয়াম, লুটেটিয়াম, স্ক্যান্ডিয়াম এবং ইট্রিয়াম। বর্তমানে ব্যবহৃত অনেক আধুনিক প্রযুক্তিতে এগুলি ব্যবহৃত হয়।
রাজস্থানে বড় আবিষ্কার: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যেই জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (GSI) এবং অ্যাটমিক মিনারেলস ডিরেক্টরেট ফর এক্সপ্লোশন এন্ড রিসার্চ (AMD) বালোত্রা জেলার সিওয়ানা তহসিলের ভাটি খেদায় বৃহৎ রেয়ার আর্থ মিনারেলের ভাণ্ডার আবিষ্কার করেছে। এই আবিষ্কার ভারতকে (India) আত্মনির্ভর করতে এবং বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করতে পারে। এদিকে, ইতিমধ্যেই বালোত্রা এবং জালোর জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে সার্ভে চালানো হয়েছে। ভাটি খেদায় অনুসন্ধানের কাজ প্রায় সম্পন্ন। ওই এলাকায় শীঘ্রই প্রায় ১০ কোটি টাকার খনির নিলাম শুরু হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। যেখানে বেসরকারি কোম্পানি এবং সরকারি সংস্থাগুলি অংশগ্রহণ করবে।
আরও পড়ুন: ক্রিকেটের দুনিয়ায় “দাদাগিরি” পাকিস্তানের! অদ্ভুত দাবি নিয়ে এই দলকে দিল “হুমকি”
জানিয়ে রাখি যে, ভাটি খেদায় পরিবেশগত ছাড়পত্র সহজেই পাওয়া যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই এলাকাটি কোনও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বা পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকার মধ্যে নেই।ওই অঞ্চলে বাস্টনাসাইট থেকে শুরু করে ব্রিথোলাইট এবং জেনোটাইমের মতো খনিজ পদার্থ পাওয়া গেছে, যা রেয়ার আর্থ মিনারেলসের প্রধান উৎস।
রেয়ার আর্থ বিশ্বব্যাপী একটি কৌশলগত সম্পদ: উল্লেখ্য যে, স্থায়ী চুম্বক তৈরির জন্য রেয়ার আর্থ মিনারেলস অপরিহার্য। যা স্মার্টফোন থেকে শুরু করে কম্পিউটার, বৈদ্যুতিক যানবাহন, লেজার এবং মিসাইল গাইডেন্স সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়। ভারতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম রেয়ার আর্থের মজুত রয়েছে। যে পরিমাণ হল প্রায় ৬.৯ মিলিয়ন টন। কিন্তু, পুরনো প্রসেসিং টেকনোলজির কারণে, কারিগরি দক্ষতার অভাব এবং খনির পরিকাঠামোর অভাবে, ভারত (India) বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের মাত্র ১ শতাংশ অবদান রাখে। যে পরিমাণ হল বার্ষিক, ৯০০ টন।
আরও পড়ুন: অবসর ভেঙে কোহলির উচিত টেস্টে প্রত্যাবর্তন করা! বিরাটকে পরামর্শ দিলেন ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার
ন্যাশনাল ক্রিটিকাল মিনারেল মিশন: এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য, কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৫ সালে ন্যাশনাল ক্রিটিকাল মিনারেল মিশন (NCMM) চালু করে। এই মিশন দেশে (India) গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের অনুসন্ধান, খনন এবং প্রক্রিয়াকরণকে উৎসাহিত করবে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে ২০২৪-২৫ থেকে ২০৩০-৩১ পর্যন্ত ১,২০০ টি অনুসন্ধান প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ভাটি খেদা একটি কৌশলগত কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি: এই মিশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, সরকার রেয়ার আর্থ চুম্বকের দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ১,০০০ কোটি টাকার একটি PLI স্কিম চালু করেছে। এমতাবস্থায়, নীতিগত সহায়তা এবং সাম্প্রতিক আবিষ্কারের মাধ্যমে, ভারতের (India) এখন চিনের ওপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী রেয়ার আর্থ বাজারে একটি শক্তিশালী খেলোয়াড় হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে।