বাংলা হান্ট ডেস্কঃ শুক্রবার রাতেই হুগলি সেতুতে আচমকাই বিবাদে জড়িয়ে পড়েন রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং তমলুকের সাংসদ অভিজিৎ গাঙ্গুলী (Abhijit Ganguly)। বাবুলের (Babul Supriyo)বিরুদ্ধে অভিজিৎ গাঙ্গুলীর অভিযোগ তিনি নাকি আচমকাই মাঝ রাস্তায় গাড়ি থেকে নেমে তাঁর দিকে তেড়ে আসেন। এমনকি তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করারও চেষ্টা করা হয়। শুধু তাই নয় পাশাপাশি তাঁকে ‘বুড়ো ভাম’-এর মতো অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। অন্যদিকে বাবুল সুপ্রিয়র অভিযোগ তমলুকের সাংসদ ট্রাফিক নিয়ম ভেঙে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি ছোটাচ্ছিলেন। তারই প্রতিবাদ জানাতে তিনি বিজেপি সাংসদের গাড়ির উপর চড়াও হন বলেই দাবি বাবুলের।
অভিজিৎ-কে (Abhijit Ganguly) গালিগালাজ, মারধর বাবুলের?
গতকাল রাতে ঘড়িতে তখন রাত ন’টা। এমন সময় বিজেপি সাংসদ এবং রাজ্যের মন্ত্রীর এই ঝামেলার জেরে হুগলি সেতুতে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়েছিল। বাবুলের দাবি অভিজিৎবাবু নিয়ম ভেঙে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোয় তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। আর তখনই গাড়ির মধ্যে বসেই অভিজিৎবাবু (Abhijit Ganguly) নাকি তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করেন। এই ঘটনার ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে অভিজিৎবাবুকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করছেন বাবুল সুপ্রিয়। যদিও অভিজিৎবাবু গাড়ি থেকে নামেননি। আর বাবুল সুপ্রিয় জানিয়ে দেন ক্ষমা না চাইলে তিনি তাঁর গাড়ি যেতে দেবেন না।
গত রাতের এই ঘটনা প্রসঙ্গে অভিজিৎ অভিজিৎ গাঙ্গুলী (Abhijit Ganguly) বলেছেন, ‘হাওড়ার দিকে তিনি যাচ্ছিলেন তার একটু তাড়া ছিল তাই তিনি হর্ন বাজিয়ে ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ তিনি দেখেন তাঁর গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। আর চিৎকার করে জানতে চাওয়া হয় হর্ন কেন দেওয়া হচ্ছে? তারপর অভিজিৎবাবু আবার হর্ন দিতে বলেন। তারপরেই তিনি দেখেন গাড়ি থেকে নেমে এসেছেন বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও ৩-৪ জন। এরপর গাড়ির সামনে এসেই বাবুল সুপ্রিয় নাকি অভিজিৎ বাবুকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করেন। এমনকি গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা চালানো হয়। গাড়ির কাঁচ খোলা থাকার কারণে এবং বাবুল সুপ্রিয় হাত চালানোর কারণে নাকি অভিজিৎবাবুর মোবাইল পড়ে গিয়ে খারাপ হয়ে যায়।
অভিজিতের (Abhijit Ganguly) সঙ্গে থাকা Y ক্যাটাগরির সিকিউরিটিও নাকি বাবুলকে আটকানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাবুল সুপ্রিয় অভিজিৎবাবুকে ক্ষমা চাইতে বলেন তখন। অভিজিৎবাবু স্পষ্ট জানান, ‘কিছুই বলবো না আপনাকে। বিজেপির দিকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর হাতে-পায়ে ধরে এখন তৃণমূলে রাজনীতি করছেন। সেটাই করুন। আপনাকে গ্রেপ্তার করাবো।’ অভিজিৎবাবুর একথা শুনে নাকি আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন বাবুল সুপ্রিয়। তারপর আরও জঘন্য কথা বলতে থাকেন তিনি। আর তখনও গাড়িতেই বসে ছিলেন অভিজিৎবাবু। তাঁর অভিযোগ এদিন বাবুল সুপ্রিয় গোটা কান্ডটাই ঘটিয়েছেন পুরো মদ্যপ অবস্থায়।
আরও পড়ুন: শীত হবে উধাও! পশ্চিমী ঝঞ্ঝায় ফের তাপমাত্রা বাড়বে দক্ষিণবঙ্গে, হবে বৃষ্টিও: আবহাওয়ার খবর
অন্যদিকে বাবুল সুপ্রিয়র অভিযোগ তাঁকে নাকি বাবা-মা তুলে গালাগালি দিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন অভিজিৎ (Abhijit Ganguly)। কিন্তু অভিযোগ অস্বীকার করে রাজ্যের প্রাক্তন বিচারপতি পাল্টা বলেন, ‘ওর তো রাগ আছে। বহু লোককে চাকরি বিক্রি করেছিলেন। সেই চাকরি গিয়েছে তাই নিয়ে গালি দিয়েছেন আমাকে। যদিও বাবুল সুপ্রিয় স্পষ্ট বলেন, ‘উনি বলছেন আমি নাকি মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলাম। কিন্তু সকলেই জানে যে বাবুল সুপ্রিয় মদ্যপান করে না।’ এরপর বাবুল জানান, ‘সেতুতে কাজ চলছিল বলে একটা লেন বন্ধ রয়েছে। আমার গাড়িতে বাতিও ছিল না। নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলাম।’
বাবুলের অভিযোগ, তিনি দেখেন হঠাৎ একটা গাড়ি সাইরেন বাজাতে বাজাতে বেপরোয়াভাবে ছুটে চলেছিল। সবাইকে ওভারটেক করেই এগিয়ে যাচ্ছিল গাড়িটি। তাঁর গাড়িও এমনভাবে ওভারটেক করেছিল যে একটা বাইকে আর একটু হলে ধাক্কা লেগে যেত। তাই তিনি চালকের কাছে জানতে চান কেন এইভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন? তারপর তিনি দেখেন গাড়িতে তমলুকের সাংসদ লেখা। তখন তিনি অভিজিৎবাবুর সাথে প্রথমে ভালোভাবেই কথা বলছিলেন। কিন্তু উনি শুরু থেকেই নাকি অশ্রাব্য ভাষায় তাঁর সাথে কথা বলছিলেন। ব্যক্তিগত আক্রমণ করার পাশাপাশি বাংলায় গালাগালি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ বাবুলের। মন্ত্রীর কথায়, ‘উনি জানালেন যা করেছেন বেশ করেছেন’। এরপর তুই-তোকারি করে নাকি অভিজিৎবাবু তাঁকে বলেন, ‘তুই এখানে দাঁড়া। দেখ তোর কি করি?’ এইভাবে প্রকাশ্য রাস্তায় বাবুল এবং অভিজিতের এমন সংঘাত ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি।