বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: ফের একবার পদক এল জুডো থেকে। অল্পের জন্য সোনা হাতছাড়া হলেও মহিলাদের ৭৮ কেজি বিভাগ থেকে রৌপ্য পদক এনে দিলেন দিল্লির জুডোকা তুলিকা মান। এর আগে জুডোতে ভারতকে পদক এনে দিয়েছিলেন সুশীলা দেবী (রুপো) এবং বিজয় কুমার যাদব (ব্রোঞ্জ)। সুশীলার পর এটি ২০২২ কমনওয়েলথে জুডো থেকে ভারতের দ্বিতীয় রুপো। পরপর কোয়ার্টারে মরিশাসের প্রতিপক্ষ ট্রেসি বোরহান এবং সেমিতে নিউজিল্যান্ডের সিডনি অ্যান্ড্রুসকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে ছিলেন তিনি। কিন্তু ফাইনালে স্কটল্যান্ডের সারাহ এডলিংটনের কাছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে হেরে সোনা হাতছাড়া করেন তুলিকা।
কিন্তু তুলিকার এই রৌপ্য পদক পাওয়া কোন অংশে স্বর্ণপদকের চেয়ে কম নয়। তার বাবা শতবীর মান ছিলেন একজন ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী। ব্যবসায়িক শত্রুতার কারণেই কোনো অজ্ঞাত শত্রুর হাতে মারা যান তিনি। তুলিকার তখন মাত্র দুই বছর বয়স। এরপর থেকে তুলিকার নিজের মা অমৃতাই বড় করেছেন তাকে। তার মা অমৃতা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তার বাবা শতবীরকে। সেই কারণে চেয়েও নিজের বাপের বাড়ির সঙ্গে আর কোনওরকম সম্পর্ক রাখতে পারেননি তিনি। বর্তমানে দিল্লি পুলিশের এএসআই অমৃতা নিয়েছেন তিনি যখন প্রথম দিকে কাজ করতেন এবং দীর্ঘসময় ডিউটি করতেন তখন তুলিকা পুলিশ স্টেশনে কর্মরত এক আত্মীয়ের কাছে থাকতেন। মায়ের নাইট ডিউটির সময় অনেকদিন রাতে বাড়িতে একা ও থেকেছেন তুলিকা। খুব স্বাভাবিকভাবে নিজের ছোটবেলা কাটাতে পারেননি তিনি। ফলে একসময় সহজেই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাথা গরম এবং চিৎকার করার স্বভাব ছিল ভারতের হয়ে রুপোজয়ী এই জুডোকার।
এরপর নিজের প্রথম প্রশিক্ষক সঙ্গীতা দত্তের কাছে জুডো শিখতে শুরু করেন তুলিকা। এই সময় আস্তে আস্তে নিজের রাগের উপরে অদ্ভুতভাবে দখল নিয়ে আসেন তিনি। তারপর ২০১৭ সালে তার মা অমৃতা, তাকে প্রাক্তন জুডোকা এবং বর্তমানে প্রশিক্ষকের কাজে রত যশপাল সোলাঙ্কির কাছে নিয়ে আসেন। তিনি জানিয়েছেন যে প্রথমদিকে তুলিকার ট্রেনিংয়ে কোন আগ্রহ ছিল না এবং অনেক বেশি অলস স্বভাবের ছিলেন তিনি। নিজের ওজনও ধরে রাখতে পারতেন না তিনি। তার ওপর তিনি জুডো ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার পলিটিক্সের শিকারও হয়েছেন। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাকে অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জন পর্বের জন্য পাঠায়নি ফেডারেশন। সেই নিয়ে আফসোসও জানিয়েছেন তার কোচ যশপাল সোলাঙ্কি।
খুব সম্ভবত তার অনিয়মের কারণেই জুনিয়র ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নের খেতাব থাকা সত্ত্বেও তাকে কমনওয়েলথে পাঠাতেও রাজি ছিল না জুডো ফেডারেশন। ফেব্রুয়ারি মাসে তারা প্রাথমিকভাবে কমনওয়েলথ গেমসের জন্য যে স্কোয়াড বেছে নিয়েছিল তার অংশ ছিলেননা তুলিকা। এরপর স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া এসবের মাঝে হস্তক্ষেপ করে তুলিকাকে রক্ষা করেন। তাদের সুপারিশ শেষে দলে জায়গা পায় তুলিকা। কিন্তু তখনও কাজ শেষ হয়নি তাঁর কোচ যশপালের। কমনওয়েলথ গেমসের যখন এক বছর বাকি ছিল তখনও প্রায় ৪০ কেজি ওজন বেশি ছিল তুলিকার। কিন্তু তার মার করা অনুশাসনে এবং কোষের তত্ত্বাবধানে এই বাধা কাটিয়ে উঠে তিনি কমনওয়েলথের জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠেন এবং দেশকে আজ পদকও এনে দিয়েছেন।