ট্যাবের ১০০০০ টাকা নিয়েই পগারপার! এবার বড় পদক্ষেপ নিলেন শিক্ষামন্ত্রী

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের পড়াশোনায় সুবিধার জন্য ট্যাব কেনার টাকা দিয়ে থাকে রাজ্য (West Bengal) সরকার। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) মস্তিষ্কপ্রসূত এই ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যেক বছর উচ্চমাধ্যমিক স্তরে একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হচ্ছে ট্যাব কেনার টাকা। কিছুদিন আগে এই ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের টাকা নিয়ে কারচুপির অভিযোগে তোলপাড় হয়ে উঠেছিল রাজ্য রাজনীতি।

রাজ্যে (West Bengal) স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়তে থাকায় বড় সিদ্ধান্ত শিক্ষামন্ত্রীর

ট্যাব দুর্নীতিতে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ নিয়েছিলেন খোদ রাজ্যের (West Bengal) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই ট্যাবের টাকা মিলতেই রাজ্যের স্কুলগুলিতে আশ্চর্যজনকভাবে বাড়তে শুরু করেছে স্কুল ছুটের সংখ্যা। আগে থেকে ঠিক এই আশঙ্কাই করেছিলেন রাজ্যের শিক্ষকদের একাংশ। তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পে ট্যাব কেনার জন্য একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দশ হাজার করে টাকা পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। ওই টাকা পাওয়ার পর থেকেই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্যের অধিকাংশ পড়ুয়া।

শুধু ট্যাবের টাকা পাওয়ার জন্যই যে এতদিন তারা স্কুলে আসছিলেন এই আশঙ্কা আগেই করেছিলেন শিক্ষকরা। কেউ কেউ বলছেন তারা স্কুল ছেড়ে কাজ করছেন। শিক্ষকদের দাবি স্কুলের উপস্থিতি হার ৭০% না হলে পরের সেমিস্টারে বসার সুযোগ পাওয়া যাবে না। একথা জানানোর পরেও কেউ স্কুলে আসতে চাইছে না। এক পড়ুয়া স্কুল ছাড়ার কথা স্বীকার করে নিয়ে জানিয়েছেন তিনি ট্যাবের টাকায় মোবাইল কিনে নিয়েছেন। আর এখন পড়াশোনা ছেড়ে একটা রেস্তোরাঁয় কাজ করছে।

স্কুল শিক্ষকদের কথায় প্রথম সেমিস্টারের পর দ্বিতীয় সেমিস্টারে ক্লাসে পড়ুয়াদের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমতে শুরু করেছে। স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন পড়ুয়ারা। প্রধান শিক্ষকের একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি এপ্রসঙ্গে বলেছেন, শিক্ষা দপ্তর স্কুলে মোবাইল আনা নিষিদ্ধ করলেও সেই শিক্ষা দপ্তরের তরফ থেকেই আবার পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার টাকা দেওয়া হচ্ছে। তাই অনলাইনে ক্লাস চলার সময় ট্যাব কেনার টাকা দেওয়া আদৌ জরুরী কিনা তা নিয়ে এবার শিক্ষা দফতরকে ভাবা উচিত বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: এতদিনে টনক নড়ল রাজ্যের! টাইট ডেডলাইন বেঁধে দিল নবান্ন

শিক্ষকের অভাবে রাজ্যের (West Bengal) অধিকাংশ সরকারি স্কুলগুলির অবস্থা এমনিতেই অত্যন্ত শোচনীয়। একই সাথে পাল্লা দিয়ে ইদানিং বেড়ে চলেছে স্কুল ছুটদের সংখ্যা। বিশেষ করে ট্যাবের টাকা ঢোকার পর থেকে অধিকাংশ একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া আর স্কুলমুখী হতে চাইছে না। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রীদের ‘ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস’-এর ২০২৩-২৪-এর রিপোর্ট অনুযায়ী মাধ্যমিক স্তরের স্কুলছুটের সংখ্যা রীতিমতো ভয় ধরাচ্ছে।

Tab Scam

জানা যাচ্ছে এই কেন্দ্রীয় রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক স্তরে স্কুল ছুটদের  সংখ্যা বর্তমানে ১৭.৮৫ শতাংশ। যা সর্বভারতীয় হার ১৪.১ শতাংশ তুলনায় বেশি। যদিও ওই সমীক্ষায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুল ছুটদের সংখ্যা দেওয়া হয়নি। যা আরও ভয়ানক। এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে গিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রকের রিপোর্ট কতটা নির্ভুল তা হলফ করে বলা যায় না। তবে বেশ কিছু স্কুলে ছাত্রছাত্রী কম। এমন কিছু স্কুলকে একসঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে।’

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর