বাংলা হান্ট ডেস্ক: গাছ-গাছালির কাছাকাছি থাকতে কার না ভালো লাগে! পাশাপাশি, বাড়িতে যদি একটি সুন্দর বাগান থাকে, সেখানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রকৃতি উপভোগ করার চেয়ে ভালো কিছু হতে পারেনা। এমতাবস্থায়, পেটলাদের (গুজরাট) বাসিন্দা সেজল কানসারার বাড়িতে এমনই একটি বাগান তৈরি করা হয়েছে। তবে এই সুন্দর বাগানটি তৈরির পেছনের কারণ জানলে আবেগাপ্লুত হবেন সকলেই। মূলত, বাড়ির পেছনে কিছুটা জায়গা বেশ কয়েকবছর যাবৎ খালি পড়ে ছিল।
এমতাবস্থায়, সজলের বাবা রজনীকান্ত কানসারা সবসময় সেখানে একটি সুন্দর বাগান করতে চেয়েছিলেন। পাশাপাশি, তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তাও ছিলেন। যদিও, বর্তমানে রজনীকান্ত আর এই পৃথিবীতে নেই! তবে তাঁর নামে “রজনী উপবন” অবশ্যই আছে! মূলত, লকডাউনের সময়, তাঁর ছেলে সেজল এই সুন্দর বাগানটি তৈরি করা শুরু করেন এবং আজ এখানে কয়েকশ গাছপালা লাগানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই বাগানে রয়েছে বহু পাখির বাসাও।
এই প্রসঙ্গে সেজল জানিয়েছেন, বাগান করার তেমন অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল না। পাশাপাশি, তিনি জানান “যেহেতু আমি আমার বাবার স্মরণে এই বাগানটি তৈরি করছিলাম তাই ইন্টারনেট এবং নার্সারি থেকে সঠিক তথ্য নিয়ে এই ১,৬০০ বর্গফুট জায়গাটি সঠিকভাবে ডিজাইন করে চারা রোপণ শুরু করি।”
বাড়িতে পিকনিক স্পট পেয়েছেন পরিবারের সদস্যরা:
জানা গিয়েছে, বাড়ির পেছনের জায়টিগাতে একটি বাড়ি থাকলেও তা বেশ কয়েকবছর আগে ভেঙে দেওয়া হয়। এমতাবস্থায়, আর সেখানে কোনো নির্মাণ করা হয়নি। পাশাপাশি সজল জানান, “যখনই আমরা জায়গাটি পরিষ্কার করতে যেতাম, বাবা ওই জায়গায় বাগান করার কথা বলতেন। এদিকে, লকডাউনের সময়, যখন আমি সেখানে পরিষ্কারের কাজ করছিলাম, তখন আমার বাবার কথা মনে পড়ল এবং আমি এই কাজ শুরু করলাম।”
পাশাপাশি, তিনি পরিবারের বাকি সদস্যদের চমক দিতে এই ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানাননি। তারপর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, তাঁর বাবার জন্মদিনে, সজলের মা “রজনী উপবন” নামে বাগানটির উদ্বোধন করেছিলেন। এদিকে, এই বাগানটি সবাই খুব পছন্দ করেছেন। সেজল জানান, এই পড়ে থাকা খালি জায়গাটির পুনর্জীবন দেখে পরিবারের সদস্যরা অবাক হয়েছেন।
এই বাগানে রয়েছে শত শত গাছ-গাছালি:
বর্তমানে এই বাগানে তুলসী, ঘৃতকুমারী, অপরাজিতা সহ ৩-৪ প্রকারের জবা, নিম, অশোক, আম, লেবুসহ অনেক গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। গাছের সঠিক বৃদ্ধির জন্য সজল ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহার করেন। এর পাশাপাশি তিনি এখন সবজির চাষও শুরু করেছেন। পাশাপাশি, যেহেতু সেজল ছবি আঁকার বিষয়ে আগ্রহী, তাই তিনি তাঁর দাদার মেয়েদের সাথে বাগানের দেওয়ালে এবং বিভিন্ন পাত্রে অঙ্কন করেছেন। যা এই বাগানটিকে এক আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এখন যখনই বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুবান্ধবরা আসেন, আমরা তাঁদের দুপুরের খাবারের জন্য ওই বাগানে নিয়ে যাই।”
এক বছরে তৈরি হয়েছে সুন্দর ইকো-সিস্টেম:
জানা গিয়েছে, সেজল ঘুরতে ভালোবাসেন। এছাড়াও, পাখির প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা রয়েছে। তাই তিনি যখন বাগান করার কথা ভেবেছিলেন, তখন তিনি চেয়েছিলেন বাগানটি যেন পাখিদেরও আশ্রয়স্থল হয়। যে কারণে তিনি ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন এবং দেখতে থাকেন ঠিক কোন কোন গাছে পাখি বাসা তৈরি করে। সেই অনুযায়ী, বাগানে বিভিন্ন ধরণের ফলের গাছ লাগানো রয়েছে এবং আজ তাঁর বাগানে বহু পাখির বাসাও রয়েছে।
পাশাপাশি, বাগানের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করেন তিনি। প্রতি ১৫ দিনে সমস্ত গাছে সার দেওয়ার পাশাপাশি কীটনাশক হিসেবে স্প্রে করা হয় নিমের তেল। এছাড়াও, এই বাগান থেকেই তাঁর মা প্রতিদিন পুজোর জন্য বিভিন্ন ধরণের ফুলও পান। এদিকে, বাবার স্মৃতিতে নির্মিত এই সুন্দর বাগানটি সত্যিই এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এছাড়াও, ফেসবুকে এই বাগানের একটি পেজও খোলা হয়েছে। যার মাধ্যমে “রজনী উপবন” সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন নেটিজেনরা। পাশাপাশি, এই বিরল কৃতিত্বের জন্য সেজলকে কুর্ণিশও জানিয়েছেন তাঁরা।
‘ভারত আজ পর্যন্ত অলিম্পিকে সোনা পায়নি …’ ভরা মঞ্চে বেফাঁস মমতা