বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের প্রতিটি রাজ্যেই বিপুল হারে হয় কৃষিকাজ। স্বাভাবিকভাবেই ভালো ফসল লাভের জন্য প্রয়োজন উর্বর মাটির। যেই কারণে কৃষকরা সার প্রয়োগের মাধ্যমে বাড়িয়ে তোলেন জমির উর্বরতা।
এমতাবস্থায়, বাজারে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার পাওয়া যায়, যা মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। কিন্তু এই প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাকে কেঁচো সার প্রস্তুতকারী অমিত ত্যাগী সম্পর্কে জানাতে যাচ্ছি, যিনি একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে লাখ টাকার চাকরি ছেড়ে ভার্মিকম্পোস্ট (কেঁচো সার) তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন এবং আজ কোটি টাকার ব্যবসা করছেন।
উত্তর প্রদেশের মিরাট শহরের বাসিন্দা, অমিত বর্তমানে কেঁচো সার বিক্রি করে একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি বার্ষিক ২ কোটি টাকারও বেশি আয় করেন। অমিত গাজিয়াবাদের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এমবিএ শেষ করার পরে ১৯৯৬ সালে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেছিলেন, যেখানে তিনি বার্ষিক কয়েক লক্ষ টাকার বেতনের প্যাকেজ পেয়েছিলেন।
সেই সময় অমিতের স্ত্রী তাঁকে নিজের ব্যবসা শুরু করে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির পরামর্শ দেন। তারপরে অমিত নেটওয়ার্ক মার্কেটিং-এর সাহায্য নিয়ে একটি ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। নিজের ব্যবসা শুরু করার জন্য, অমিত শহুরে জীবন ছেড়ে তাঁর গ্রামে ফিরে আসেন, যেখানে তিনি পৈতৃক জমিতে কম্পোস্ট তৈরি করতে শুরু করেন।
এর পরে, অমিত তাঁর সারের প্রথম নমুনা একটি নার্সারির কাছে বিক্রি করেছিলেন। সেই কেঁচো সার এতই ভালো ছিল যে, এক সপ্তাহের মধ্যেই ফের ওই নার্সারিটি অমিতের কাছ থেকে সার নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করে। তারপরেই তিনি ব্যাপক হারে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে গ্রামের মানুষেরা তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে থাকেন এবং তাঁর ব্যবসাও বাড়তে থাকে।
অমিত তাঁর ৩ একর জমিতে প্রতি মাসে ৩০০ টনেরও বেশি সার তৈরি করেন। কম্পোস্ট করার জন্য তিনি অস্ট্রেলিয়ান আইসোনিয়া ফোটিডা ব্যবহার করেন, যা উৎকৃষ্ট জৈব সার তৈরি করে। ১ কেজি সার তৈরি করতে খরচ হয় ৩ টাকা, যা বাজারে বিক্রি করা হয় ৬ থেকে ২০ টাকার মধ্যে।
অমিত গ্রাম ও শহরে সার বিক্রির জন্য আলাদা আলাদা প্যাকিং পদ্ধতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গ্রামে ১,৫,১০,২০ এবং ৪০ কেজি সারের প্যাকেট পাওয়া যায়। যেখানে শহরগুলিতে, সার বিক্রি করার জন্য ১,২,৫ এবং ১০ কেজির প্যাকেট তৈরি করা হয়। অমিত সজাগ ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ড নামে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভার্মিকম্পোস্ট বিক্রি করছেন। কেঁচো সারে গোবরের চেয়ে তিনগুণ বেশি পুষ্টি থাকে, যা ফসলের উৎপাদন বাড়ায়। তাই, এর চাহিদাও ক্রমশ বাড়ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সারা দেশে ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদনকারী লোকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শুধু মিরাটেই ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির জন্য ৮০ টিরও বেশি ইউনিট রয়েছে। পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাট, উড়িষ্যা এবং আসাম সহ মোট ১৪ টি রাজ্যে কেঁচো সার তৈরির জন্য ৮ হাজার ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে কৃষকদের সার তৈরির প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।