বাংলা হান্ট ডেস্ক: কথায় আছে, যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ। একসময়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দিল্লিতে সমাজকর্মী আন্না হাজারের (Anna Hazare) নেতৃত্বে নাগরিক আন্দোলন সারা দেশের নজর কেড়েছিল। ওই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সৈনিক ছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal)। পরে দিল্লির (Delhi) মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। কিন্তু, এখন তাঁর নাম জড়িয়েছে আবগারি কেলেঙ্কারিতে। এদিকে, কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের পরে ঘটনাক্রম যেদিকে মোড় নিয়েছে তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।
শুধু তাই নয়, একদা কেজরিওয়ালের গুরু আন্না হাজারে আবগারি কেলেঙ্কারিতে প্রিয় শিষ্য অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা কার্যত গুরু-শিষ্য সংঘাতের সৃষ্টি করেছে। উল্লেখ্য যে, আন্না হাজারে মদ্যপানের ঘোরতর বিরোধী। আন্না বলেছেন, “২০১১ সালে রাজধানী দিল্লিতে আমি যখন দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার জন্য আন্দোলন করেছিলাম, সেইসময়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল মদ্যপান বিরোধিতায় আমার সঙ্গে সহমত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে কেজরিওয়াল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে আবগারি নীতি প্রণয়ন করায় আমি যারপরনাই ব্যথিত হয়েছি।”
বিশিষ্ট সমাজকর্মী আন্না হাজারে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে কার্যত দ্বিচারিতার অভিযোগ তোলেন। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ২০২১-২০২২ সালে কেজরিওয়াল পরিচালিত দিল্লি সরকারের আবগারি নীতি প্রণয়ন করা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে। সেইসময়ে যে আবগারি নীতি প্রণয়ন করা হয় তাতে হোলসেল মদ বিক্রেতাদের লাভ ব্যাপক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যা প্রায় ১২ শতাংশ। আর খুচরো পণ্য বিক্রেতাদের লাভ ওই আবগারি নীতিতে ১৮৫ শতাংশ বেড়েছে। সিবিআই এবং ইডির দাবি, এর জেরে দিল্লি সরকারের ২,৮৭৩ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভয়াবহ দুর্ঘটনা! ফের অগ্নিকান্ড এক্সপ্রেস ট্রেনে, চরম আতঙ্কে যাত্রীরা
তবে, একদা গুরু আন্না হাজারে শিষ্য কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে যে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন, সেসম্পর্কে দলের কোনও মন্তব্য এখনও মেলেনি। এই ব্যাপারে আম আদমি পার্টির প্রতিক্রিয়া জানতে জাতীয় সংবাদমাধ্যম মুখিয়ে রয়েছে। উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালে অরবিন্দ কেজরিওয়াল আম আদমি পার্টি গঠন করেন। ১৯৬৮ সালের ১৬ অগাস্ট হরিয়াণায় অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জন্ম। শৈশব ও কৈশোরে কেজরিওয়াল পঠনপাঠন করেছেন সোনিপত, গাজিয়াবাদ এবং হিসারে। ১৯৯৫ সালে IIT-তে পঠনপাঠনের সুযোগ পান কেজরিয়াল। IIT থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে ১৯৮৯ সালে টাটা স্টিলে যোগ দেন। এরপরই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসে কর্মজীবন শুরু করেন।
আরও পড়ুন: কারোর পৌষমাস, কারোর সর্বনাশ! Paytm থেকে চাকরি ছেড়ে ১০,০০০ কোটির কোম্পানি গড়লেন কর্মচারীরা
২০০০ সাল থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং মণীশ শিশোদিয়া দিল্লিতে সুন্দরনগর এলাকায় “পরিবর্তন” নামে এক আন্দোলন শুরু করেন। ২০১৩ সালে ২৮ ডিসেম্বর দিল্লির দ্বিতীয় সবচেয়ে কম বয়স্ক মুখ্যমন্ত্রী হন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কেজরিওয়ালের আগে চৌধুরী ব্রহ্ম প্রকাশ দিল্লির সবথেকে কম বয়স্ক মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। একাধিকবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন অরবিন্দ কেজরিওয়াল আবগারি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হওয়ার পরে ২০২৪ সালের ২১ মার্চ গ্রেফতার হয়েছেন। জানা গিয়েছে যে, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ৯ বার সমন পাঠিয়েছে। তাতে একবারও সাড়া দেননি কেজরিওয়াল। এরপর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে, লোকসভা নির্বাচনের আগে আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি ঘিরে গরমাগরম ভারতীয় রাজনীতি।