বাংলা হান্ট ডেস্ক : বিশ্বকাপ ফাইনালে (World Cup Finale) ভারতের (India) হারের পর সমগ্র বাংলাদেশ (Bangladesh) জুড়ে শুরু হয়েছিল উৎসবের আয়োজন। কেউ বাজি ফাটিয়ে অকাল ইদের খুশি নিয়েছেন তো কেউ আবার লোক ডেকে রীতিমত ভোজের আয়োজন করছিলেন। অস্ট্রেলিয়া জেতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ক্রমাগত ভারতীয়দের পোড়া ঘায়ে নুনের ছিটে দিয়ে চলেছে পড়শিদেশের লোকজন। এদিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কিছু নাগরিকের এই আচরণ দেখে এবার গোটা বাংলাদেশকেই বয়কটের ডাক দিয়েছে ভারতীয়দের একাংশ।
বাংলাদেশিদের নিষিদ্ধ করেছে ভারতীয় হোটেল
সীমান্তের ওপারের কিছু মানুষের আচরণ দেখার পর ইতিমধ্যেই বাংলাদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে পাহাড়ের এক হোটেল। বেশ কিছু কোম্পানিও বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশে তাদের পণ্য রপ্তানি বন্ধ করেছে। ছোটব্যবসায়ীরাও কেউ কেউ বাংলাদেশ থেকে পণ্য কেনায় বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তারপর থেকেই গোটা দেশজুড়ে প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ কি সত্যিই ভারতকে এতটাই ঘৃণা করে? আর এটা সত্যি হলে বিষয়টা অবশ্যই চিন্তার বটে বৈকি!
বাংলাদেশের উন্নতিতে ভারতের ভূমিকা
আসলে বাংলাদেশ ভারতের অন্যতম বৃহৎ ট্রেডিং পার্টনার। ইন্ডিয়া বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের সাথেই ভারতের বাণিজ্যিক লেনদেন এত বেশি নয়। তাছাড়া বাংলাদেশের কোনো ইনফাস্ট্রাকচার তৈরি হোক (যেমন বাংলাদেশের মেট্রো রেল) বা যে কোনো রাজনৈতিক সমস্যা, সবকিছুতেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ভারত। এসব যদি বাদও দেওয়া হয়, ইতিহাস ঘাঁটলেও দেখতে পাবেন যে, পরাধীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে ওঠার পেছনেও ভারতের ভূমিকা সবার আগে।
আরও পড়ুন : সিট থাকলেও নেই গদি! হাজার হাজার টাকার টিকিট কেটে বিপাকে বিমান যাত্রী, প্রশ্নের মুখে Indigo পরিষেবা
সমস্ত বিপদ আপদেই পাশে থাকে ভারত
ভারত হচ্ছে প্রথম সেই দেশ যে বাংলাদেশকে ‘স্বাধীন দেশ’র মর্যাদা দিয়েছিল। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বিপদ আপদ যে কোনও সময়েই ভারতের দিকেই তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশ। ভূ রাজনীতির কথা বললে, বাংলাদেশ এবং আমেরিকার অম্লমধুর সম্পর্কের কথা কারোরই অজানা নয়। কিছুদিন আগেই কিছু USA প্রতিবেদনে দাবি করা হয় বাংলাদেশের নির্বাচন ন্যায়সঙ্গত ভাবে হয়না। যে কারণে কিছু বাংলাদেশি অফিসারের উপর সাংশেনও লাগায় USA। এই বিতর্কের সময়ও বাংলাদেশের একমাত্র ভরসা ছিল ভারত। স্বাভাবিকভাবেই পড়শিদেশের ভরসা রেখেছিল ভারত। এছাড়াও কোভিড মহামারির সময় উপহারস্বরূপ ২ মিলিয়ন ভ্যাক্সিন বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল আমাদের দেশ। এমনকি আগামী সময়ে বাংলাদেশে যে বিদ্যুৎ সাপ্লাই করা হবে তাতেও ভারতের বড় ভূমিকা রয়েছে। এতকিছুর পরেও ভারতের প্রতি বাংলাদেশের এই নেতিবাচক মনোভাব বিরক্তির উদ্রেক করেছে ভারতীয় নাগরিকদের মনে। আর এর কারণ হিসেবে ধর্মীয় বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন : প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির বয়স বেঁধে দিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার, কত বছরে কোন ক্লাস? রইল তালিকা
ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কারণ কী?
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশটিকে স্বাধীন করার পাশাপাশি সেই সময় প্রায় এক কোটির বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয় ভারত। সেই ইতিহাসের ৫২ বছর পর দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটা ‘লাভ-হেট’ অর্থাৎ একই সাথে ভালোবাসা ও ঘৃণার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। দুই দেশের সরকারের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক থাকলেও পড়শিদেশের নাগরিকদের ভারতকে নিয়ে বড়োই সমস্যা। সে ভারতের ‘চন্দ্রযান ৩’র সাফল্য হোক কী ক্রিকেটের মাঠে ভারতের দোর্দন্ডপ্রতাপ ভাবমূর্তি__এসবের কোনোটাই বিশেষ পছন্দ করেনা সীমান্তের ওপারের মানুষজন। এর কারণ ঠিক কি? কারণ খুঁজতে গেলে সামনে আসে নানা গল্প। প্রথমত দুই দেশের ভিন্নধর্মী মানুষের বসবাস। যারফলে গঙ্গার এপার আর ওপারের মানুষের মধ্যে সখ্যতা সেভাবে কোনোদিন গড়ে ওঠেনি।
ভারত পাকিস্তান বৈরাগ্যের কারণেও এদেশের সাথে খানিক দূরত্ব বাড়িয়েছে এককালীন পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ। দুই দেশের সম্পর্ক কেবল প্রশাসন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এছাড়া ফী বছর দুর্গাপুজোর সময় মন্দির এবং প্রতিমা ভাঙার হিড়িক দুই দেশের সম্পর্কের ব্যাঘাত ঘটানোর অন্যতম বড় কারণ। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে রুবেল হোসেনের বলে রোহিত শর্মার নট আউটের পর বাংলাদেশিদের আচরণ ক্রিকেট প্রেমীদের মধ্যেও বেশ দূরত্ব বাড়ায়। এদিকে তিস্তা, গঙ্গা (ওপারে পদ্মা) ইত্যাদির জলচুক্তির সমস্যা তো রয়েইছে। সেই সাথে ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে বেশ সমস্যায় ভুগছে আমাদের দেশ। এই বিষয়টার কারণেও দূরত্ব বাড়ছে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে। তবে কূটনীতিকরা এই ব্যাখ্যাও দিয়ে থাকেন যে, বাংলাদেশ কিছুটা হলেও ‘মেক্সিকান সিন্ড্রোমের’ শিকার।
উল্লেখ্য, আমেরিকা এবং মেক্সিকো পরস্পর পড়শি দেশ। মেক্সিকো নিজে উন্নয়নশীল দেশ হলেও আমেরিকার সামনে তা অতি নগণ্য। বলা চলে সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে আমেরিকার প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে মেক্সিকানদের মধ্যে। এবং বিশেষজ্ঞরা এই একই প্যাটার্ন খুঁজে পেয়েছে ভারত বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যেও। ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি, মিলিটারি আধিপত্য, সাংস্কৃতিক আধিপত্য, সারা বিশ্বে ভারতের গ্রহণযোগ্যতা__সমস্ত দিক দিয়েই অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। যে কারণে সীমান্ত পারের মানুষের কাছে ভারতের জয়, হিংসা এবং ভয় উভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার প্রমাণ মিলেছে চলতি বছরের ক্রিকেট বিশ্বকাপেও। ভারত পরপর ১০ টা ম্যাচ জিতলেও ফাইনালের হার অকাল ইদের খুশি নিয়ে এসেছে পড়শিদেশে। যার ঝলক ধরা পড়েছে সমগ্র সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই সমগ্র উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় বাংলাদেশের ভারত বিদ্বেষী মনোভাব। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ ভারতে ভিসা ফ্রী এন্ট্রির আবেদন করলেও তার কোনও প্রশ্নই ওঠেনা বলে জানাচ্ছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।