তৃণমূলের সঙ্গে বাড়ছে দূরত্ব! পূর্ব বর্ধমানের তিন বিধানসভা কেন্দ্র থেকে কেষ্টকে ছাঁটাইয়ের পর জল্পনা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সম্প্রতি সিবিআইয়ের (CBI) হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) নেতা অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। গরু পাচার মামলায় ইতিমধ্যে আদালতের নির্দেশে জেল হেফাজত হয়েছে তৃণমূল নেতার। ফলে এই পরিস্থিতিতে অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে তৃণমূল কংগ্রেস দলের সংগঠন কিভাবে চালানো হবে, তা ঘিরে একাধিক প্রশ্ন চিহ্ন সৃষ্টি হয়। অবশেষে এদিন দীর্ঘ বৈঠকের পর অনুব্রতকে নিয়ে বড়সড় সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল নেতৃত্ব।

দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে বীরভূম জেলার সভাপতি পদে নিযুক্ত রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। এক্ষেত্রে জেলার সংগঠন দেখার পাশাপাশি বর্ধমানের বেশ কয়েকটি বিধানসভা এলাকাও ছিল কেষ্টর দখলে। বর্তমানে যখন বিরোধীরা তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে চলেছে, সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে দল কি সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, সেই দিকে নজর ছিল সকলের। এদিন দীর্ঘ বৈঠকের পর অবশেষে বড় সিদ্ধান্ত নিল শাসক দল।

বৈঠক সূত্রের খবর, বীরভূম জেলায় আপাতত সভাপতি পদে বহাল থাকছেন অনুব্রত। তবে পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম ও আউশগ্রাম, এই তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র হাতছাড়া হতে চলেছে তৃণমূল নেতার। বর্তমানে সেই জায়গায় নিয়ে আসা হতে চলেছে রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে।

উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান জেলার সভাপতি। অতীতে বর্ধমানের কয়েকটি বিধানসভা এলাকা অনুব্রতর দখলে থাকলেও বর্তমানে সেই দায়িত্ব রবীন্দ্রনাথকে দেওয়া হতে চলেছে। অপরদিকে, বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা-কর্মী এবং সাংসদ বিধায়কদের ওপর সংগঠন দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছে দল। তবে এক্ষেত্রে সভাপতি পদে কোনরকম পরিবর্তন হবে না বলে জানা গিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে গোটা বাংলায় জল্পনা উঠতে থাকে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো কি তবে এবার অনুব্রত মণ্ডলের ক্ষমতা খর্ব করা হতে চলেছে? যদিও এক্ষেত্রে সিবিআই দ্বারা গ্রেফতার হওয়ার পরেও অনুব্রতর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এক্ষেত্রে পার্থর মতো যে অবস্থা হবে না অনুব্রত মণ্ডলের, তা একপ্রকার নিশ্চিত ছিল। এদিন অনেকটা সেই চিত্রই সামনে উঠে এলো। বীরভূমে জেলা সভাপতি রাখার পাশাপাশি অনুব্রততেই আস্থা রাখলো দল। তবে অপরদিকে, পূর্ব বর্ধমানের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে তাঁকে সরানোর মাধ্যমে কিছুটা হলেও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে দলে।

এদিন অনুব্রত ইস্যুতে বৈঠকে বসেন তৃণমূল কংগ্রেস সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক চলাকালীন প্রধানত মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম ও আউশগ্রাম, এই তিনটি জেলার কথাই উঠে আসে বলে জানা গিয়েছে। অবশেষে এদিন তিন বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। এদিন প্রায় পাঁচ ঘন্টা ব্যাপী বৈঠক মাঝে অন্যান্য একাধিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

Untitled design 50

উল্লেখ্য, মঙ্গলকোট বিধানসভা এলাকায় অতীতে অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর সম্পর্কে অবনতি আসে। তাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণে শাসক দলকে যথেষ্ট অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়। এমনকি, কেষ্টর বিরুদ্ধে সেই মুহূর্তে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীরাও ক্ষুব্ধ ছিলেন বলেও জানা যায়। ফলে এদিন পূর্ব বর্ধমানের একটি বিরাট অংশের দায়িত্ব অনুব্রত মণ্ডলের হাত থেকে সরিয়ে নেওয়া আদতে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘মাস্টারস্ট্রোক’ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


Sayan Das

সম্পর্কিত খবর