গানটা গাইতে গাইতে মনে হচ্ছিল নিজেকে গালি দিচ্ছি, কিছুই তো করা হল না জীবনে: অরিজিৎ

বাংলাহান্ট ডেস্ক: ১৮ ফেব্রুয়ারির রাতটা বহু প্রতীক্ষিত রাত ছিল কলকাতাবাসীর কাছে। একটা লম্বা সময় পর শহরে পারফর্ম করলেন জিয়াগঞ্জের ছেলে অরিজিৎ সিং (Arijit Singh)। জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক মহলে তিনি বাঙালির মুখ উজ্জ্বল করছেন। কলকাতার অ্যাকোয়াটিকায় ওয়ান নাইট ওনলি ট্যুর আয়োজিত হয়েছিল অরিজিতের। গানে গানে একটা অবিস্মরণীয় সন্ধ্যা উপহার দিলেন তিনি শহরবাসীকে।

তবে শুধু নানান ধরণের গান নয়, অরিজিতের কিছু মন্তব্যও এদিন আলাদা করে নজর কেড়ে নিয়েছে শ্রোতা এবং নেটিজেনদের। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অরিজিতের ‘গেরুয়া’ গানটি গাওয়ার পরেই বিতর্ক শুরু হয়েছিল। রাজ্যের শাসক দলকে খোঁচা দিয়েছিল বিজেপি। তারপরেই ইকো পার্কে শো বাতিল হয়ে যাওয়ায় বিতর্ক আরো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

arijit singh

কিন্তু এদিনের অনুষ্ঠানে গেরুয়া বিতর্ক নিয়ে স্পষ্ট মন্তব্য করে সপাটে জবাব দেন অরিজিৎ। গান গাইতে গাইতে তিনি বলেন, ‘আরে এই গানটা নিয়ে খামোকাই বিতর্ক হল। এটা তো সন্ন্যাসীদের রঙ রে বাবা! স্বামীজির রঙ। স্বামীজি যদি সাদা পরতেন তাহলে কি সেটা নিয়েও এরম হত নাকি?’

শুধু তাই নয়, এদিন ‘মানবজমিন’ গানের শ্যামাসঙ্গীত ‘মন রে কৃষিকাজ জানো না’ও গাইতে শোনা যায় অরিজিৎকে। অত্যন্ত জনপ্রিয় রামপ্রসাদী গানটি অরিজিতের কণ্ঠে পছন্দ করেননি অনেকেই। এমনকি খোদ রামপ্রসাদ পুত্র শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।

এদিন ভিড়ে ঠাসা অ্যাকোয়াটিকায় গানটি গাইতে গাইতে অরিজিৎ বলে ওঠেন, ‘এই গানটা গাইতে অনেকটা সময় নিয়েছিলাম। কিছুতেই গানটা গাইতে পারছিলাম না। গানের কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছে যেন নিজেকে গালি দিচ্ছি বা যেন রামপ্রসাদ বাবুই গালি দিচ্ছেন। আসলে কিছুই শিখলাম না। কীভাবে ফসল কাটতে হয়। এ দেহের, জীবনের কাজ কিছুই জানলাম না।’

Arijit pasoori

অরিজিতের ভিডিওটি শেয়ার করে একটি ঘটনা শেয়ার করেছেন মানবজমিন এর পরিচালক শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখেছেন, ‘সারারাত ধরে স্টুডিওতে গেয়েছিল গানটা, ভোরবেলা পাঠিয়েছিল। সে-গান কেমন হয়েছে, এখন গোটা ভারতবর্ষ জানে। কিন্তু কথা সেটা নয়। কথা হলো, তারপর একটা মেসেজ এসেছিল আমার ফোনে। ‘শ্রীজাতদা, গানটা গাইতে গাইতে মনে হচ্ছিল নিজেকে গালি দিচ্ছি। কিছুই তো করা হলো না জীবনে’। আমি জানি, এ-কথার সত্যতা একশো ভাগ, কোথাও কোনও মেকি বিনয় নেই। উত্তরে তাই বলেছিলাম, ‘আমরা কেউই কিছু করে উঠতে পারিনি, তুমি কেবল এই অতৃপ্তিটুকু জিইয়ে রেখো, তাহলেই হবে’।’

তিনি আরো লিখেছেন, ‘সামান্য খ্যাতির কাদায় যখন চারপাশের বহু মানুষের পা পিছলে যাচ্ছে, তখন চূড়ায় বসে থাকা একজন শিল্পীর এমন অতৃপ্তি হয়তো বিস্ময় আনে। পরক্ষণেই মনে হয়, ব্যাপারটা আদতে উল্টোই। এমন অতৃপ্তি অন্তরে বয়ে বেড়ায় বলেই আজ সে চূড়ায়। এবং সেখানেই থাকবে।’ শ্রীজাত আরো জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানে শ্যামাসঙ্গীতটা গাওয়ার কথাও রাতে তাঁকে মেসেজে জানাতে ভোলেননি অরিজিৎ।


Niranjana Nag

সম্পর্কিত খবর