বাংলা হান্ট ডেস্ক: দীর্ঘ ১৮ দিন মহাকাশে কাটিয়ে এবার পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের পথে অ্যাক্সিয়ম মিশন ৪ (Axiom Mission 4)-এর চার মহাকাশচারী। শুভাংশু এবং তাঁর তিন সহযাত্রী স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্যাপসুলে চড়ে ফিরছেন। এমতাবস্থায়, সোমবার অর্থাৎ ১৪ জুলাই, ২০২৫-এ বিকেল ৪ টা বেজে ৪৫ মিনিটে, স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্যাপসুল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (ISS) হারমনি মডিউল থেকে পৃথক হয়ে যায়। এই ঘটনাটি অ্যাক্সিওম মিশন ৪ (অ্যাক্স-৪)-এর সমাপ্তি চিহ্নিত করে। উল্লেখ্য যে, এটি ছিল চতুর্থ বেসরকারি মহাকাশ মিশন। এই মিশনে, চারজন মহাকাশচারী দুই সপ্তাহ ধরে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন। এখন তাঁরা পৃথিবীতে ফিরে আসছেন।
অ্যাক্সিয়ম মিশন ৪ (Axiom Mission 4)-এর মহাকাশচারীরা পৃথিবীতে ফিরতে চলেছেন:
প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি: ড্রাগন ক্যাপসুলটি বিকেল ৪ ট বেজে ৪৫ মিনিটে ISS থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটি এখন ধীরে ধীরে স্টেশন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মহাকাশযানটি এমন একটি কক্ষপথে প্রবেশ করছে যা সেটিকে এবং ক্রু-দের নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনবে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই, ২০২৫) বিকেল ৩ টা নাগাদ ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে সম্পন্ন হবে “স্প্ল্যাশডাউন”। সবকিছু যাতে সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় সেই জন্য নাসা এবং স্পেসএক্স টিম এই প্রক্রিয়াটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। অ্যাক্সিওম স্পেস (Axiom Mission 4) তার ওয়েবসাইটে ড্রাগনে রি-এন্ট্রি এবং অবতরণ সম্প্রচার চালিয়ে যাবে।
কারা পাড়ি দিয়েছিলেন মহাকাশে: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, অ্যাক্সিওম মিশন ৪ (Axiom Mission 4) শুরু হয়েছিল গত ২৫ জুন, ২০২৫ তারিখে। সেই সময়ে ড্রাগন মহাকাশযানটি ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ফ্যালকন ৯ রকেটে করে উৎক্ষেপণ করা হয়। যেটি গত ২৬ জুন ISS-এর সাথে সংযুক্ত হয় এবং ক্রু-রা সেখানে প্রায় ১৮ দিন কাটিয়েছিলেন। এই মিশনে চারজন মহাকাশচারী ছিলেন। তাঁরা হলেন:
পেগি হুইটসন (কমান্ডার): নাসার প্রাক্তন মহাকাশচারী
শুভাংশু শুক্লা (পাইলট): ইসরো-র মহাকাশচারী
স্লাওস উজনানস্কি-উইজনিউস্কি: পোল্যান্ডের ESA প্রোজেক্টের মহাকাশচারী
টিবোর কাপুস: হাঙ্গেরির HUNOR প্রোগ্রামের মহাকাশচারী
এই মহাকাশচারীরা মাইক্রোগ্রাভিটিতে ৬০ টিরও বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে পেশী ক্ষয় এবং মহাকাশে ফসল চাষের মতো বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শুভাংশু শুক্লা ভারতের হয়ে এই ঐতিহাসিক মিশনটি (Axiom Mission 4) সম্পন্ন করেছেন। যা ৪১ বছর পর ভারতের দ্বিতীয় মানব মহাকাশ অভিযান ছিল।
আরও পড়ুন: অপারেশন সিঁদুরের পর তুঙ্গে ব্রহ্মোসের চাহিদা! কিনতে ইচ্ছুক ১৫ টি দেশ
কী কী নিয়ে ফিরছে ড্রাগন: উল্লেখ্য যে, ড্রাগন মহাকাশযানটি ৫৮০ পাউন্ডেরও বেশি (প্রায় ২৬৩ কিলোগ্রাম) জিনিসপত্র নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসছে। যার মধ্যে নাসার হার্ডওয়্যার এবং মিশনের (Axiom Mission 4) সময়ে পরিচালিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই তথ্য বিজ্ঞানীদের মহাকাশে মানুষের জীবন এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে নতুন দিক উন্মোচন করবে। মহাকাশযানটি আবর্জনা এবং পরীক্ষামূলক সরঞ্জামও বহন করছে। যা ISS-কে পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি এবং দক্ষতার সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন: বিদেশের মাটিতে সফলতার শিখরে বাঙালি স্থপতি! মার্কিন মুলুকে দৃষ্টান্ত গড়লেন উত্তর কলকাতার সৃঞ্জয়
ভবিষ্যতের জন্য তাৎপর্য: অ্যাক্সিওম মিশন ৪ (Axiom Mission 4) হল বেসরকারি মহাকাশ মিশন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি উদাহরণ। নাসা থেকে শুরু করে ইসরো, ইএসএ এবং হাঙ্গেরির মধ্যে এই মিশন বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বৃদ্ধি করেছে। এই অভিযান ভবিষ্যতে চাঁদ এবং মঙ্গলের মতো গভীর মহাকাশ অভিযানের জন্য একটি প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করবে। এর পাশাপাশি এই মিশন ভারতের গগনযান অভিযানকেও প্রত্যক্ষভাবে অনুপ্রাণিত করবে।