বাংলাহান্ট ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। করোনার চিকিৎসায় আয়ুর্বেদিক ওষুধ ভাল কাজ করতে পারে, এমনই দাবি করল বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি (Benares Hindu University)। আয়ুর্বেদিক ওষুধ ফিফাট্রল নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হচ্ছে বিএইচইউ-তে। গবেষকদের দাবি, এই ইমিউনো-বুস্টিং ড্রাগ করোনা রোগীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকগুণ বাড়িয়ে তুলবে।
আয়ুষ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট টাস্ক ফোর্সের (AYUSH Research and Development Task Force) উদ্যোগে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে করোনা প্রতিরোধে আয়ুর্বেদিক ওষুধ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্রব্যগুণ বিভাগের প্রধান ও এই প্রজেক্টের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ডক্টর কে এন দ্বিবেদী বলেছেন, “যে কোনও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ভারতের সনাতন আয়ুর্বেদের উপর ভরসা করা যেতে পারে। এই ওষুধ ফিফাট্রল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে করোনা রোগীদের উপরে এই ওষুধের ভূমিকা কতটা।“ ফিফাট্রল সম্পূর্ণ সুরক্ষিত ও এই ওষুধের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলেই জানিয়েছেন ডক্টর দ্বিবেদী।
দেশে কোভিড-১৯ গবেষণা কোন পর্যায়ে রয়েছে তা জানতে ইতিমধ্যেই উচ্চপর্যায়ের প্যানেল তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্যানেলে রয়েছেন আয়ুষ, আইসিএমআর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা। কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর), ডিপার্টমেন্ট অব বায়োটেকনোলজি (ডিবিটি), ডিআরডিও, ডিরেক্টোরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিস ও কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলও রয়েছে এই প্যানেলে। গত ৩১ মার্চ আয়ুষ মন্ত্রকের তরফে নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছিল, কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে আয়ুর্বেদিক, যোগ, প্রাকৃতিক চিকিৎসা, ইউনানী, সিদ্ধ, হোমিওপ্যাথি কতটা কাজে দিতে পারে তার গবেষণা ও থেরাপির তালিকা কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হোক। দেশের এই সংক্রান্ত প্রায় ২০০০ প্রস্তাব জমা পড়েছে আয়ুষ মন্ত্রকে।
আয়ুষ টাস্ক ফোর্সের তরফে জানানো হয়েছে, আয়ুর্বেদিক ওষুধ ও থেরাপি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও সায়েন্স রিসার্চ ফার্ম। তারমধ্যে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির ফিফাট্রল আয়ুর্বেদিক ওষুধের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। এই ওষুধ নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও শুরু হতে চলেছে।
ফিফাট্রল ওষুধের নির্মাতা এআইএমআইএল ফার্মাসিউটিক্যালস। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ, ফ্লু, শ্বাসজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এই ওষুধ। যে কোনও জটিল সংক্রামক রোগ সারাতে আগেও এই ওষুধের কার্যকরি ভূমিকা দেখা গেছে। স্ট্যাফাইলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সর্দি-কাশি, জ্বর, ত্বকের সমস্যার দাওয়াই হিসেবে কাজে লেগেছে ফিফাট্রল। তবে নভেল করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় প্রথম এই ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিএইচইউ-এর অধ্যাপক দ্বিবেদী বলেছেন, শ্বাসজনিত রোগের চিকিৎসায় ফিফাট্রল খুবই উপকারি ফিফাট্রল। আর যেহেতু সার্স-কভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণে রোগীদের মধ্যে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটারি সিনড্রোম দেখা যাচ্ছে, তাতে আশা করাই যায় এই ওষুধ সংক্রমণ কমাতে কিছুটা হলেও কাজে দেবে। এখন করোনা রোগীদের কতটা ডোজে এবং কতদিনে বিরতিতে এই ওষুধ দিতে হবে তার একটা প্রোটোকল ঠিক হচ্ছে। এই প্রোটকল কেন্দ্রের টাস্ক ফোর্সের কাছে পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলে তবেই রোগীদের ওষুধ খাওয়ানো হবে।