পৃথ্বীরাজ নিউদিল্লি :- সদ্যসমাপ্ত দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমের এক্সিট পোল সমীক্ষা বলছে আবারো ক্ষমতায় আসতে চলেছেন আম আদমি পার্টি (AAP) স্বাভাবিক ভাবেই আরো একবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal)। দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমের এই সমীক্ষা কে কার্যত চ্যালেঞ্জ করে বাংলা হান্ট এর দিল্লীর প্রতিনিধির সমীক্ষায় উঠে এলো ভিন্নমত 2020 বিধানসভা নির্বাচনে দিল্লীর ক্ষমতায় আসতে চলেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)।
সদ্যসমাপ্ত দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন হল মূলত আঞ্চলিক বিষয়গুলির উপরে ক্ষমতায় থাকার কেজরিওয়াল সরকার মূলত তাদের প্রচারের মুখ করে দিল্লির তাদের করা দিল্লীর উন্নয়ন কে সামনে রেখে, অপরদিকে বিজেপি তাদের প্রচারের মুখ করেছিল সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় দিল্লী জুড়ে তৈরি হওয়া বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস সিলামপুর, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া সর্বশেষ শাহিনবাগের আন্দোলনকে সামনে রেখে।
আম আদমি পার্টি কেজরিওয়াল সরকার যখন গরিব মানুষদের 200 ইউনিট ইলেকট্রিক ফ্রি এবং বিনামূল্যে জল প্রত্যেকটি বস্তি অঞ্চল উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে, ঠিক তখন কংগ্রেস তাদের সময়কালের উন্নয়ন এবং আগামী সরকার করলে এর থেকেও বেশি মানুষকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এই নির্বাচনে।
নির্বাচনের পরবর্তী পর্যায়ে দেশের প্রথম সারির প্রত্যেকটি গণমাধ্যমে স্থানীয় উন্নয়নের প্রচারকে দিল্লীর মানুষ গুরুত্ব দিয়েছে বলে ধরে নিই তাদের সমীক্ষা ফলাফল প্রকাশ করে আমাদের সমীক্ষা হয় একইভাবে আঞ্চলিক ভিত্তি করে বিগত পৌর নির্বাচন ফলাফল গত বিধানসভার অর্থাৎ 2015 সালের বিধানসভার ফলাফল নিরিখে ও একই সাথে সাম্প্রতিককালে কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু সাহসী পদক্ষেপ রাম মন্দির এর মতন দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধান ও নাগরিকত্ব আইন কে কেন্দ্র করে দিল্লীর উত্তাল পরিস্থিতি মানুষের সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এর নিরিখে।
এবার দেখে নেওয়া যাক 2015 সালে বিধানসভা নির্বাচনে কত শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছিলেন এবং সেই ভোটের ফলাফল শতাংশের হার কোন দলের পক্ষে কতটা কে ছিল এবং তার পরবর্তী সময়ে তার ঠিক দু বছর পর 2017 সালে স্থানীয় পৌর নির্বাচনে একইভাবে ফলাফল।
2015 সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট হয় 67.14% যার মধ্যে বিজেপি পায় 32.3% কেজরিওয়াল 54.3% কংগ্রেস 9.7%। অর্থাৎ যখন দিল্লি কংগ্রেস সরকার বিকল্প স্বচ্ছ প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া রাজনীতির বাইরে নতুন মুখ কেজরিওয়ালের সমর্থনে জনপ্লাবন ছিল দিল্লিতে ভোট পড়েছিল 67.14% সেই নির্বাচনেও বিজেপি দিল্লিতে 32 শতাংশ ভোট নিতে পেরেছিল নিজেদের ঝুলিতে।
ঠিক তার দু’বছর পরেই অর্থাৎ 2017 সালে দিল্লি পৌরনিগম নির্বাচনে ফলাফল ছিল এইরকম ভোট পড়েছিল 54% যার মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল 37% শতাংশ ভোট, কেজরিওয়াল 26% ও কংগ্রেস 21% ভোট। যদি এই বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টি অর্থাৎ কেজরিওয়াল সরকারের উন্নয়নের নিরিখেই ভোট হয়ে থাকে তাহলে 2015 সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর দিল্লির পৌরনিগম নির্বাচনের ফলাফল কিন্তু জনসমর্থন হারিয়েছিল কেজরিওয়াল সরকার শুধু তাই নয় 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে কেজরিওয়ালের দলের ভোট কমে ছিল অনেকটাই।
এবার বিচার্য বিষয় হল 2015 সালে বিধানসভা নির্বাচনে কেজরিওয়াল যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দিল্লির সাধারণ মানুষকে সেই প্রতিশ্রুতি থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল তার সরকার যেমন প্রতিশ্রুতি ছিল দিল্লির প্রতিটি বাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া, লোকপাল বিল দিল্লি বিধানসভায় পাস করিয়ে তা বাস্তবায়িত করা, শিক্ষাক্ষেত্রেও প্রতিশ্রুতি ছিল সরকারি বিদ্যালয় এর ব্যবস্থা এতটাই উচ্চতায় পৌছাবে যে ব্যক্তি মালিকানাধীন বিদ্যালয় গুলির ছাত্রছাত্রীরা সেখান থেকে বেড়িয়ে এসে সরকারি বিদ্যালয় পড়াশোনা করবে।
এছাড়াও নাগরিকত্ব আইন কে কেন্দ্র করে দিল্লি জুড়ে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল একাধিক সরকারি সম্পত্তি সরকারি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল সিলামপুর, জামা মসজিদ, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং সর্বশেষ শাহীনবাগ আন্দোলন। যেগুলো বিরুদ্ধে বারবার উঠে এসেছে রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান অভিযোগ এমনকি দেশের আইন ব্যবস্থা কেউ তারা মানে না এমনও অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
এবং দীর্ঘদিন ধরে শাহীনবাগে আন্দোলন জীবনকে বিপর্যস্ত করেছে রাস্তা বন্ধ করে তাদের আন্দোলন থেকে আর এই আন্দোলনকে সরাসরি সমর্থন করে কেজরিওয়াল সরকার এমনকি আম আদমি পার্টির বিধায়ক কে এই শাহীনবাগে আন্দোলনের মঞ্চে দেখা যায় এছাড়াও শাহীনবাগে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশ বিরোধী স্লোগানে অভিযুক্ত পরবর্তীকালে গ্রেপ্তার হওয়া মানুষদের সাথে সেই বিধায়কের নাম প্রকাশ্যে আসে। যার ফলে বলা যেতে পারে যে একটা বড় অংশের মানুষের সমর্থন কেজরিওয়ালের থেকে সরে আসে।
এরপর সাম্প্রতিককালে কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু সাহসী পদক্ষেপ 370 ধারা বিলোপ দেশের দীর্ঘদিনের তিনি ধর্মীয় সমস্যা রাম মন্দির যা কোন সমস্যা ছাড়া নির্বিঘ্নে সেই সমস্যার সমাধান করে ফেলার মতন কৃতিত্বের পালক যুক্ত হয়েছে এই কেন্দ্রীয় সরকারের মাথায়। এছাড়াও সাম্প্রতিক সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রমাণ করেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিস্টান সম্প্রদায় ভুক্ত নিপীড়িত মানুষের নাগরিকত্বের প্রশ্নে নির্বাচন কেন্দ্রিক নয় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে সক্ষম।
আমাদের সমীক্ষা বলছে এই কারণগুলির জন্য একটি বড় অংশের মানুষ বাড়তি সমর্থন সংঘটিত হবে বিজেপির ভোট বাক্সে। 2015 সালের নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্ত 32 শতাংশ ভোট বেড়ে 2017 সালে হয়েছিল 37 শতাংশ অর্থাৎ 5 শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপির এ সবটাই ছিল স্থানীয় উন্নয়নের প্রশ্নে। বিজেপি পরিচালিত দিল্লির পৌরনিগমের কাজকর্ম, নাগরিকত্ব আইন কে কেন্দ্র করে দিল্লি জুড়ে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হওয়া, শাহীনবাগের আন্দোলনে ওঠা দেশ বিরোধী স্লোগান এই সমস্ত কার্যকলাপকে আম আদমি পার্টির প্রকাশ্যে সমর্থন করা এই সবটা মিলিয়ে 2017 থেকে 2019 এ তিন বছরে যদি আরো 5 শতাংশ বাড়তি ভোট বিজেপির পক্ষে যাবে বলে মনে করছে আমাদের সমীক্ষা। সর্বশেষ প্রাপ্ত ভোট এর সাথে যদি আরো 5% যুক্ত হয় তাহলে মোট ভোট শতাংশ হবে 42%।
অপরদিকে 2017 সালে দিল্লির পৌরনিগম নির্বাচনে আম-আদমি পার্টির প্রাপ্ত 26% ভোট ও 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী আপের প্রাপ্ত 23% ভোটের আংঙ্ক ছেড়ে দিয়ে যদি 2015 সালের বিধানসভা নির্বাচনে কেজরিওয়ালের পক্ষে থাকা বিপুল জনসমর্থনের ফলাফল ধরে হিসাব করি, তা হবে এইরকম 2015 সালে মোট ভোট পড়েছিল 67% আপ পেয়েছিল 54% বিজেপি 32%।
আর 2020 সালে আপের পক্ষে সেই জন প্লাবন না থাকা বিধানসভা নির্বাচনে মোট ভোট পরেছে 62%। অর্থাৎ 5% ভোট কম। 2015 এর পরে 2017 ও 2019 এর নির্বাচনে ভোট কম পড়ায় কমেছে আপের ভোট, সেই ধারা অনুযায়ী আপের কমে হবে 54 -5 = 49% আর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না হওয়া, মহিলা সুরক্ষা, নির্ভয়াকান্ডে অভিযুক্ত দের ফাঁসি না হওয়া, 2015 সালের পর দলীয় মতানৈক্যের ফলে আপ ছেড়েছেন আপের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা, এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে নাগরিকত্ব আইনের বিরোধীতায় দিল্লি জুড়ে অরাজকতাকে ও শাহিনবাগ আন্দোলনকে কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের প্রকাশ্যে সমর্থন আর কেজরিওয়ালের মধ্যপন্থা অবস্থান আপের সমর্থক মুসলিম ভোটের একাংশ হবে কংগ্রেস মুখি।
এই সব মিলিয়ে বিগত লোকসভার মত না কমলেও, আপের কমতে পারে 8% -10% ভোট, যার পর শতাংশের হার দাড়াবে 49% – 10% = 39% 2020 সালে বিধানসভা নির্বাচনে ফলাফলে আমাদের সমীক্ষায় শতাংশ হারে বিজেপি পেতে পারে 42%, কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি পেতে পারে 39%
Polled vote 67.14% in 2015 :-
BJP- 32.3%. APP- 54.3%. INC- 9.7%.
2) Delhi MCD Election 2017 :- 54%
BJP- 37%. APP- 26%. INC- 21%.
3) 58.24% polled in 2019 election :-
BJP- 56.58%.APP- 22.46%.INC- 18%
4) 61.56% Polled in 2020 Assembly Election in Delhi.
37% to 40% APP
39% to 42% BJP
11% to 14% INC
‘ভারত আজ পর্যন্ত অলিম্পিকে সোনা পায়নি …’ ভরা মঞ্চে বেফাঁস মমতা