বাংলাহান্ট ডেস্ক: বাংলাদেশের (Bangladesh) রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল ইউনূস সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকেই প্রশাসনিক স্থিতি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। আর সেই চাপ আরও প্রকট হয়ে উঠেছে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে। বিশেষত পেঁয়াজের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাইকারি বাজার থেকে খুচরো বাজার—সব ক্ষেত্রেই পেঁয়াজের কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে সরকারের ওপর চাপ বাড়তে থাকে দ্রুত আমদানি শুরু করার। এই পরিস্থিতির মধ্যেই বাধ্য হয়ে ভারত থেকে বড় পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিল ঢাকা।
ভারত (Bangladesh) থেকে ফের পিঁয়াজ রপ্তানি বাংলাদেশের
ভারতের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করার মতো কড়া অবস্থান নেওয়ার পরও বাস্তব পরিস্থিতির কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছে বাংলাদেশকে (Bangladesh)। কয়েক মাস আগেই ইলিশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে ভারতকে সরবরাহ করতে রাজি হয়েছিল ঢাকা। আর এবার উলটো দিক থেকে ভারতও পেঁয়াজ পাঠাতে রাজি হয়েছে বাংলাদেশে। মোট ১,৫০০ টন পেঁয়াজ যাচ্ছে সীমান্ত পেরিয়ে হিলি বন্দর দিয়ে। দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি ও বাজারের লাগামছাড়া মূল্য সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সেই কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউনূস প্রশাসন, জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রক।
বাংলাদেশ (Bangladesh) সরকার মোট ৫০ জন আমদানিকারককে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তবে প্রতিজনকে মাত্র ৩০ টন করে পেঁয়াজ আনার অনুমতি মিলেছে। ব্যবসায়ী মহলের দাবি, এই পরিমাণ খুবই কম এবং বাজার স্বাভাবিক করতে আরও বেশি আমদানির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সরকার সীমিত অনুমতি দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখতে চাইছে, যাতে দাম কমে এলে অযথা অতিরিক্ত আমদানির কারণে বাজারে চাপ না পড়ে। এই অনুমতির মেয়াদ আগামী বছর ২৬ মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে। ফলে কয়েক মাসের জন্য হলেও বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে।
হিলি সীমান্তের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তে এপারের ব্যবসা যেমন বাড়বে, ওপারের মানুষেরও কিছুটা স্বস্তি মিলবে। ভারতের রপ্তানি শর্ত ও পরিবহন খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় দ্রুত বড় পরিমাণে পেঁয়াজ বাংলাদেশে (Bangladesh) পৌঁছানো সম্ভব হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, যদি বাজারে পেঁয়াজের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হবে। সরকার এখন ‘মানিটর অ্যান্ড অ্যাকশন’ নীতি নিয়ে এগোচ্ছে, যাতে বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা যায়।

আরও পড়ুন:৯০০ বছরের পুরনো শিবমন্দিরকে ঘিরে বিবাদ! যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফের লড়াই শুরু এই দুই দেশের
উল্লেখ্য, এর আগে বাংলাদেশ (Bangladesh) ট্যারিফ কমিশন পরামর্শ দিয়েছিল, ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, তুরস্ক, মিসর, চিন কিংবা মায়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার ব্যাপারে ভাবতে। বাংলাদেশ অতীতেও মায়ানমার, চিন ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছে, তবে তার পরিমাণ ছিল খুবই কম। সীমান্ত নিকটবর্তী হওয়ার কারণে ভারত থেকেই সবচেয়ে দ্রুত ও সস্তায় সরবরাহ সম্ভব, ফলে শেষ পর্যন্ত সেই পথই বেছে নিতে বাধ্য হল ঢাকা। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জনঅসন্তোষ বাড়ার মুখে ইউনূস সরকারের এই সিদ্ধান্ত আপাতত কিছুটা স্বস্তি দিলেও, পেঁয়াজের বাজার কবে স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।












