বাংলা হান্ট ডেস্কঃ শীতলকুচি ঘটনা বদলে দিয়েছিল তাঁর গোটা জীবন। সেই প্রাক্তন আইপিএস অফিসার দেবাশিস ধর (Debasish Dhar) এবার রাজনীতির ময়দানে। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে বীরভূম কেন্দ্র থেকে তাঁকে টিকিট দিয়েছে বিজেপি (BJP)। সম্প্রতি বাংলা হান্টের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে যেমন উঠে এল শীতলকুচি কাণ্ডের প্রসঙ্গ, তেমনই রাজনীতিতে আসার ‘গল্প’টাও শোনালেন দেবাশিস।
লোকসভা নির্বাচনের আবহে বাংলা হান্ট (Bangla Hunt) এবং আর প্লাসের যৌথ প্রযোজনায় একটি কনক্লেভের আয়োজন করা হয়েছিল। উপস্থিত হয়েছিল বঙ্গ রাজনীতির একাধিক তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্ব। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দেবাশিস ধর। দাপুটে আইপিএস (IPS Debasish Dhar) থেকে রাজনীতিবিদ, কোমর বেঁধে ভোট ময়দানে নেমে পড়েছেন তিনি। যদিও দেবাশিস জানালেন, ১৫ দিন আগেও ভাবেননি ভোটে দাঁড়ানোর কথা।
বীরভূমের পদ্ম প্রার্থী (Birbhum BJP Candidate) বলেন, ‘একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলাম, আর সবটা বদলে গেল। এটা অনেকটা ওরকম ব্যাপার। তিন বছর আগে এমন কিছু তো ভাবিইনি। তবে ১৫ দিন আগে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম। বিষয়টা লজ্জার হয়ে দাঁড়িয়েছিল! আর নেওয়া যাচ্ছিল না’। দেবাশিস জানান, তিনি ভেবেছিলেন যা কিছু একটা করে জীবন কাটিয়ে দেবেন। তবে চাকরি আর করতে পারছিলেন না।
সাক্ষাৎকারে কথার সূত্রে উঠে আসে শীতলকুচি প্রসঙ্গও। এই ঘটনায় বদলে গিয়েছিল দেবাশিসের সম্পূর্ণ জীবন। এর জন্য কাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন? উত্তরে পদ্ম প্রার্থী বলেন, ‘আমার কাছে যা রিপোর্ট এবং বাস্তবের ফ্যাক্টস ছিল, তার ওপর ভিত্তি করে আমি আমার কাজ করেছিলাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিনা কারণে কাউকে চড় মারতেও বিশ্বাসী নই। আমি এই কাজ করি না…। এটা আসলে সিস্টেমের দোষ। আমাদের সার্ভিস রুল, হয়তো ১৯৬৮-১৯৬৯ সালে ফ্রেম হয়েছে, সেটার কোনও মডিফিকেশন হয়নি। যুগের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিবর্তন হওয়া দরকার’।
শীতলকুচির সেই ঘটনা কি এখনও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে বেড়ায়? প্রশ্ন করা হয়েছিল দেবাশিসকে। জবাবে পদ্ম প্রার্থী জানান, ‘দেখুন শীতলকুচিতে যা ঘটেছিল, সেটা একটা চেইন অফ ইভেন্টস। ওরা এল আর এরা ফায়ার করে দিল, এটা হয়নি। কোনও মৃত্যুই অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। মায়ের কোল খালি হওয়া, বাবার সন্তানের মৃত্যু দেখা খুব দুর্ভাগ্যজনক। কারোর সঙ্গে যেন না হয়! তবুও আমি একটাই কথা বলব, ব্যক্তিগতভাবে অন্যায় কাজ করলে বিবেকের দংশন তাড়া করবে। কিন্তু যেখানে আমার ০০০.১% যোগ ছিল না, এমনকি রাজ্য পুলিশের কারোরই ছিল না। সম্পূর্ণ ঘটনাটাই ঘটেছিল সেন্ট্রাল ফোর্সের সঙ্গে। তবে আমায় যে প্রশ্নটা তাড়া করে বেড়াত, সেটা হল ‘আমি কেন?’ আমি তো কাউকে বাজে কথা বলিনি, একটা চড়ও মারিনি। তাহলে আমি কেন?’
এদিন শীতলকুচি কাণ্ড নিয়ে ২-৩ জন অফিসারের দিকেও আঙুল তোলেন দেবাশিস। কারোর নাম না নিয়েই বিজেপি প্রার্থী বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেসের যারা জেলা প্রেসিডেন্ট ছিলেন বা অন্যান্য অনেক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যাঁদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তাঁরা আমায় বলেছিলেন, এর জন্য ২-৩ জন অফিসার দায়ী। তাঁরা যেভাবে সরকারকে বুঝিয়েছিলেন, একটা ধারণা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। সেই জায়গা থেকে মনে হয় আমি ৩ বছর চেষ্টা করেও বেরোতে পারিনি। ভবিষ্যতেও বেরোতে পারতাম কিনা জানি না’।
একসময় উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তা ছিলেন, এবার সেই দেবাশিসই পা রাখতে চলেছেন রাজনীতির ময়দানে। কীভাবে সবটা হল? ‘আমি একটা কাউকে বলিনি, কোনও আবেদন করিনি। ১৫ দিন আগে একটা ফোন আসে। এরপরেই সব হয়ে যায়’। বীরভূমের বিজেপি প্রার্থী জানান, তিনি এবার মানুষের জন্য কাজ করতে চান। নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও ফাঁস করেন দেবাশিস। বিজেপি প্রার্থী স্পষ্ট বলেন, ‘খালি হাতে এসেছি, খালি হাতে চলে যাব। আমার একটাই উদ্দেশ্য, আগামী ১৫-২০ বছর কাজ করব। এরপর যদি বেঁচে থাকি তাহলে সব ছেড়ে সন্ন্যাস নিয়ে চলে যাব’।