বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারতীয় রেলকে (Indian Railways) দেশের লাইফ লাইন হিসেবে ধরা হয়ে থাকে অনেক সময়েই। এর কারণ এমন পরিষেবা অন্য কোনও পরিবহন ব্যবস্থা দিতে পারেনা। দেশের প্রতিটি রেল স্টেশন তার নিজস্বতার জন্য বিখ্যাত। এই প্রতিবেদনে জানাবো এমন কয়েকটি স্টেশনের ব্যাপারে যা পড়লে আপনি ভাববেন, এমনও আবার হয় নাকি?
রেল পরিষেবায় একটি স্টেশন রয়েছে নওয়াপুর নামে। এটি সবচেয়ে চমকপ্রদ স্টেশনের তালিকায় শীর্ষস্থানে। এর কারণ এটি কোনও নির্দিষ্ট রাজ্যে পড়েনা। মহারাষ্ট্র ও গুজরাট সীমান্তে অবস্থিত এই স্টেশনটির কিছুটা পড়ে গুজরাটে, আর অন্য ভাগটি পড়ে মহারাষ্ট্রে। দু’টি ভিন্ন রাজ্যের মধ্যে বিভক এই রেল স্টেশন। এই স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম থেকে বেঞ্চ অবধি স্টেশনের প্রতিটি জায়গায় উল্লেখ রয়েছে রাজ্যের নাম। এছাড়াও এই স্টেশনে হিন্দি ও ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি মারাঠি ও গুজরাটিতেও ঘোষণা করা হয়।
কারণ এখান দিয়ে দু’টি রাজ্যের যাতায়ত করেন। এই স্টেশনের একটি ছোট্ট ইতিহাস রয়েছে। যখন এই স্টেশন তৈরি হয়েছিল, তখন মহারাষ্ট্র ও গুজরাট একক রাজ্য ছিল। পড়ে দুই রাজ্য ভাগ হয়ে যাওয়ায় নওয়াপুর স্টেশন মুম্বই প্রদেশের অধীনে চলে আসে। এই অবস্থায় দু’ই রাজ্যই এই স্টেশনের উপর নিজেদের অধিকার দাবি করে। ফলত, সরকার স্টেশনটিকে ভাগ করে দেয়।
ভারতে শুধু একটি স্টেশনই দু’টি আলাদা রাজ্যে বিভক্ত নয়। এমন আরও একটি স্টেশন রয়েছে। দিল্লি-মুম্বই রেললাইনে অবস্থিত এই স্টেশনটির নাম ভাওয়ানি-মান্ডি। সাধারণত একটি রাজ্যের অধীনে এলেও এই স্টেশন দু’টি রাজ্যে অবস্থান করে। রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের মধ্যে বিভক্ত এই স্টেশন। এই স্টেশনে ট্রেন থামলে ইঞ্জিন থাকে রাজস্থানে ও কোচগুলি থাকে মধ্যপ্রদেশে। এই স্টেশনের এক প্রান্তে রাজস্থানের বোর্ড লাগানো, এবং অন্য প্রান্তে মধ্যপ্রদেশের বোর্ড বসানো রয়েছে।
দেশের প্রতিটি স্টেশনের একটি নাম আছে যা দিয়ে সেটিকে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু জানেন কি, এমন একটি স্টেশন রয়েছে যার কোনও নামই নেই। শুনতে অবাক লাগলেই সত্যি। বলতে পারেন কোথায় এই স্টেশন অবস্থিত? জানলে অবাক হবেন, এই স্টেশন রয়েছে আমাদের রাজ্যেই। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার অধীনে এমন একটি রেল স্টেশন রয়েছে যার কোনও নাম নেই! বর্ধমান থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে বাঁকুরা-মাসগ্রাম রেল রুটে অবস্থিত এই স্টেশন।
এই নামহীন স্টেশনটি তৈরি করা হয় ২০০৮ সালে। তখন এর নাম দেওয়া হয় রায়নাগর। কিন্তু রায়না গ্রামের মানুষের এই নাম পছন্দ না হওয়ায় তাঁরা স্টেশোনের নাম পরিবর্তন করতে চেয়ে রেলওয়ে বোর্ডে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই মতো রেলের তরফে রায়নাগড় নামটি সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপর নতুন নাম আর দেয়নি তারা। সেই থেকেই নাম না জানা স্টেশন হিসবে এটি বিখ্যাত হয়ে যায়।
এমন একটি স্টেশন রয়েছে ঝাড়খণ্ডেও। সেই রাজ্যের রাজধানী রাঁচি থেকে টোরির লাইনে অবস্থিত এই স্টেশন। ২০১১ সালে এই লাইনে প্রথম ট্রেন পরিষেবা চালু হয়। তখন এই স্টেশনের নাম রাখা হয় বারকিচাম্পি। তবে কামলে গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদ শুরু করেন। তাঁদের দাবি ছিল, এই রেলপথ বানাতে যাঁরা জমি দিয়েছেন, সেই কামলে গ্রামের নামে রাখতে হবে স্টেশনের নাম। ফলে এই নামটি সরিয়ে ফেলে রেল। তখন থেকেই এই স্টেশনের কোনও নাম নেই।
দেশের আইন অনুযায়ী, ভারতীয় নাগরিকরা দেশের যেকোনও প্রান্তে ভ্রমণ করতে পারবেন। এর জন্য তাঁদের আলাদা করে পাসপোর্ট বা ভিসা লাগবে না। কিন্তু জানেন কি, দেশে এমন এক রেল স্টেশন রয়েছে যেখানে যেতে গেলে ভিসার প্রয়োজন হয়! দেশের ভিতরে এমন এক স্টেশন যেখানে যেতে ভিসা লাগে।
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে আটারীতে অবস্থিত এই স্টেশন। এখানে যেতে গেলে আপনাকে পাকিস্তানি ভিসা নিতে হবে। ভিসা ছাড়া এই স্টেশনে চলে গেলে আপনার বিরুদ্ধে নেওয়া হতে পারে আইনি পদক্ষেপও! এই আটারী স্টেশন থেকেই ভারত এবং পাকিস্তানকে যুক্ত করার ট্রেন সমঝোতা এক্সপ্রেস ছাড়ে। যার ফলে এই স্টেশন ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার বেষ্টনীতে ঘেরা থাকে।