‘টাকা ফেললেই লাফায়’, বাংলা পক্ষের গর্গকে ‘তৃণমূলের পোষা কুকুর’ বলে আক্রমণ তরুণজ্যোতির

   

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ তিনি গর্গ চট্টোপাধ্যায় (Garga Chatterjee)। বঙ্গ রাজনীতিতে বেশ চর্চিত নাম। গর্গ চট্টোপাধ্যায় ও তার সংগঠন বাংলা পক্ষকে দেখা যায় ‘বাংলা ভাষার অধিকার’ নিয়ে লড়াই করতে। বাংলা নিয়ে, বাঙালিদের নিয়ে কথা বলে বাংলা পক্ষ। আবার রাজনীতির সাথেও মাঝেমধ্যেই নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন গর্গ। বিভিন্ন রাজনৈতিক মন্তব্য পেশ করতেও দেখা যায় তাকে। এবার সেই গর্গকেই তৃণমূলের পোষা কুকুর বলে নজিরবিহীন আক্রমণ শানালেন বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। বাংলা হান্টের ক্যামেরার সামনেই গর্গকে ফালাফালা আক্রমণ করলেন পেশায় আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি (Tarunjyoti Tewari)।

প্রসঙ্গত সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘প্রতিটা রাজ্যের একটা পরিচয় আছে, সংস্কৃতি আছে। তবে বাংলার পরিচয় যারা নষ্ট করার চক্রান্ত করছেন আমি তাদের সকলকে সাবধান করছি।” মমতা আরও বলেন, “এরপর তো এই রাজ্যের পরিচয় নষ্ট হয়ে যাবে। বাংলায় কথা বলার লোক খুঁজে পাবেন না।” মমতার নিশানায় মূলত ছিলেন এ রাজ্যে বাস করা অবাঙালিরা। আর খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে এমন ‘বিভেদমূলক’ মন্তব্য আসায় কার্যতই বিতর্কের ঝড় ওঠে রাজ্য-রাজনীতিতে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা মমতার মন্তব্যের বিরোধিতা করলেও এই ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পূর্ণ সমর্থন জানান গর্গ চট্টোপাধ্যায়। এই নিয়েই এদিন তরুণজ্যোতি তিওয়ারির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাংলা হান্টের ক্যামেরায় মুখ খোলেন বিজেপি নেতা। অবাঙালি প্রসঙ্গ নিয়ে গর্গ চট্টোপাধ্যায়কে আপাদমস্তক তুলোধোনা করেন তরুণজ্যোতি।

বলেন, “আমি আমার পূর্বপুরুষদের পদবি ত্যাগ করিনি। গর্গ চট্টোপাধ্যায় করেছে। এরা আসলে উপাধ্যায়। এদের অন্য রাজ্য থেকে নিয়ে এসে এখানে বসানো হয়েছে। বারইপুরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প বসেছে সেই নিয়ে কোনো কথা শুনি না গর্গর মুখে। ধর্মতলায় গিয়ে এদের বিক্ষোভ করতে দেখিনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আমলা হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী থেকে শুরু করে রাজীব কুমার, কেউই তো বাঙালি নন। তাদের নিয়ে বিপ্লব করতে শুনিনি। আসলে গর্গ চট্টোপাধ্যায় ও তার বাংলাপক্ষ হল তৃণমূলের একটা বি টিম। তৃণমূলের এজেন্ডা ফুলফিল করে এরা।”

তরুণজ্যোতি আরও বলেন, “নির্বাচনের সময়ও আমরা দেখেছি। কিছুদিন আগেও গর্গ চট্টোপাধ্যায় ন্যাশনাল মিডিয়াতে তৃণমূল সমর্থক হিসেবেই বসতেন। এরা আসলে তৃণমূলের পোষা কুকুর। এর থেকে আর বেশি কিছু নয়। এদের বেশি পাত্তা না দেওয়াই ভালো।”

সম্প্রতি গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন বিজেপি বাংলাবিদ্বেষী একটি দল। এই নিয়ে পাল্টা তরুণজ্যোতি বলেন, “বিজেপির যারা ভোটে দাঁড়িয়েছিল বা এখানে যেসকল বিধায়কেরা আছেন তারা তো সবাই পশ্চিমবঙ্গেরই মানুষ। সকলের এখানেই জন্ম, এখানেই তারা কাজ করেন। আর ওদিকে এদের কথা মতো অত্যন্ত বাঙালি দল তৃণমূল যখন বাইরে থেকে লোক নিয়ে আসে তখন তো কিছু বলে না। তখন চুপ থাকে কেন? টাকা পায় বলে? এরা টাকা পেলে নিজের বাবা-মাকেও বেঁচে দিতে পারে।”

আরও পড়ুন: DA না বাড়লেও ফের নয়া ছুটি, কবে মিলবে? বিজ্ঞপ্তি জারি করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার

তরুণজ্যোতির কথায়, “পশ্চিমবঙ্গ এখনঅ ভারতের বাইরে চলে যায়নি। ভারতবর্ষের সংবিধান অনুমতি দেয় যে কাউকে যে কোনো রাজ্যে গিয়ে বাস করার কথা। গর্গ বা মুখ্যমন্ত্রী যে বিষ পোঁতার চেষ্টা করছে তা যদি পুরো দেশে ছড়ায় তাহলে পারবে তো সামলাতে? বিভিন্ন রাজ্যে যেসব বাঙালিরা কাজ করছে, মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করছে তাদের যদি সেখানের মানুষ তাড়িয়ে দেয় পশ্চিমবঙ্গে তাদের কাজ হবে তো? এখান থেকে যেসকল পরিযায়ী শ্রমিকেরা অন্য রাজ্যে কাজের জন্য যায়, তাদের যদি সেখানের মানুষ তাড়িয়ে দেয় তাহলে পশ্চিমবঙ্গে কাজ হবে তো? পশ্চিমবঙ্গে ভাড়ে মা ভবানী, এখানে শিল্প নেই, কাজ নেই, চাকরি নেই। এখানের ছেলে-মেয়েরা অন্য রাজ্যে গিয়ে টাকা উপার্জন করে আসে। এই যে অদ্ভূত এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে তার দায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং তাদের পোষ্য বাংলাপক্ষ নেবে তো?” সাফ প্রশ্ন তরুণজ্যোতির। প্রসঙ্গত, এর আগেও গর্গকেও আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে তরুণজ্যোতিকে। বিপরীত দিক থেকেও একই প্রতিক্রিয়া এসেছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় বাংলা হান্ট ও আর প্লাস নিউজের এক মেগা কনক্লেভে। সেখানে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গর্গ তরুণজ্যোতি দুজনাই। লোকসভা ভোটের আগের কথা। যেখানে বাংলার লোকসভা ভোটে বাঙালি প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিচ্ছিলেন গর্গ। বলছিলেন ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং কে ভোট না দিয়ে ভোট দেওয়া হোক তৃণমূলের বাঙালি প্রার্থী পার্থ ভৌমিক বা অন্য কোনো বাঙালিকে। সেই সূত্রেই তরুণজ্যোতি উল্লেখ করেন বর্ধমানের তৃণমূল প্রার্থী বহিরাগত অবাঙালি কৃতি আজাদের কথা। সেই শুনেই রেগে গিয়ে তরুণজ্যোতিকে তীব্র আক্রমণ করে গর্গ বলেন , “আমি বাংলায় দাঁড়িয়ে বাঙালির প্রশ্নের উত্তর দেব তবে এই তিওয়ারিদের নয়।” বাংলা হান্ট, আর প্লাস এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করলেও নিজের অবস্থানেই অনড় ছিলেন গর্গ। নিজের কথার সমর্থনে বেশ কিছু যুক্তি দিলেও তা ধোপে টেকেনি বিরোধীদের।

Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর