বাংলাহান্ট ডেস্ক: ব্রিটেনের (Britain) নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের এবং পাকিস্তানের ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির আবেদনে ক্রমশই কড়াকড়ি বাড়ছে। ব্রিটিশ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর এক বিস্ফোরক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, অন্তত নয়টি উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশের পড়ুয়াদের ভর্তির আবেদন বাতিল করছে বা স্থগিত রাখছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি ছাত্রদের বিরুদ্ধে ভিসার অপব্যবহারের অভিযোগই এ সিদ্ধান্তের অন্যতম কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, স্টুডেন্ট ভিসায় ব্রিটেনে গিয়ে নির্ধারিত কোর্স সম্পন্ন না করে আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন জানাচ্ছেন পড়ুয়ারা। ফলে সন্দেহ আরও বেড়েছে লন্ডনের প্রশাসনের মনে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পড়ুয়াদের ভর্তি বন্ধ ব্রিটেনের (Britain) বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানাচ্ছে, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নতুন আবেদনকারীদের সাময়িকভাবে ভর্তির বাইরে রাখছে তাদের মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ চেস্টার, ইউনিভার্সিটি অফ উলভারহ্যাম্পটন, ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট লন্ডন, লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সান্ডারল্যান্ড ইউনিভার্সিটি, কভেন্ট্রি ইউনিভার্সিটি, হার্টফোর্ডশায়ার ইউনিভার্সিটি, অক্সফোর্ড ব্রুকস এবং বিপিপি ইউনিভার্সিটি লন্ডন। এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশি পড়ুয়াদের ভিসা আবেদন বাতিল হয়েছে ২২ শতাংশ ক্ষেত্রে, আর পাকিস্তানি পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে তা ১৮ শতাংশ। বছরের প্রথম নয় মাসে ব্রিটিশ (Britain) কর্তৃপক্ষ মোট ২৩ হাজার স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন বাতিল করেছে, যার প্রায় অর্ধেকই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানি আবেদনকারীদের।
আরও পড়ুন:যাত্রীদের স্বস্তি! ছুটির দিনে মেট্রো চলবে সকাল থেকে, বিস্তারিত সময়সূচি দেখুন
এই পরিস্থিতির মধ্যেই ব্রিটেনে (Britain) বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন নজরকাড়া হারে বেড়ে উঠেছে বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। অভিযোগ উঠছে, দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশের বহু ছাত্র ভিসা ব্যবস্থাকে অপব্যবহার করে ব্রিটেনে প্রবেশ করে পরে কোর্স সম্পূর্ণ না করেই ‘অ্যাসাইলাম সিকার’-এ পরিণত হচ্ছে। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটিশ সীমান্ত নিরাপত্তা মন্ত্রী ডেম অ্যাঞ্জেলা স্পষ্টভাবে মন্তব্য করেছিলেন—“ভিসা পাওয়া মানেই ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি নয়”, যা অভিবাসন নীতি আরও কঠোর হওয়ার ইঙ্গিতই দেয়।
তার উপর সাম্প্রতিক সময়ের আরও কিছু বিতর্ক পরিস্থিতিকে জটিল করেছে। ব্রিটেনে (Britain) বসবাসকারী বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি ইসলামপন্থী কিছু তরুণের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ নাবালিকাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে কয়েকটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এসব ঘটনা ব্রিটিশ জনমতে ক্ষোভ বাড়িয়েছে। এমনকী ধনকুবের ইলন মাস্কও ব্রিটেনে ইসলামপন্থীদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়েছিলেন। লন্ডনজুড়ে এই ইস্যুতে বড় মিছিলও হয়েছে সম্প্রতি। ফলে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি অভিবাসীদের প্রতি ব্রিটেনে নেতিবাচক মনোভাব আরও গভীর হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ‘মোদীই ভারতের সৌভাগ্য’, প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা পুতিনের, আমেরিকার উদ্দেশ্যেও দিলেন বার্তা
সব মিলিয়ে, কঠোর অভিবাসন নীতি, ভিসা অপব্যবহারের অভিযোগ এবং সাম্প্রতিক সামাজিক অশান্তির জেরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আস্থা দ্রুত কমছে। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি কতদূর গড়ায় বা ব্রিটিশ (Britain) প্রশাসন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কোনও নতুন নিয়ম আনে কি না, সেই দিকেই এখন নজর থাকবে দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পড়ুয়া ও অভিভাবকদের।












