OMR পুনর্মূল্যায়ন নাকি নতুন করে পরীক্ষা! কীভাবে হবে SSC পুনর্নিয়োগ? হাই কোর্ট কী বলছে?

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সোমবার ২০১৬ সালের এসএসসির সম্পূর্ণ প্যানেলকে বাতিল করেছে কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। আদালতের এক রায়ে এক ধাক্কায় চাকরিহারা হয়ে পড়েন ২৫,৭৫৩ জন। যদিও যোগ্য চাকরিপ্রাপকদের কাছে পুনরায় চাকরি পাওয়ার সুযোগ থাকছে। সেক্ষেত্রে কীভাবে এসএসসির (SSC Recruitment Scam) শূন্যপদগুলিতে পুনর্নিয়োগ হবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। হাই কোর্টের রায় নিয়ে শুরু হয়েছে বিস্তর ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও জল্পনা।

ওএমআর শিট পুনর্মূল্যায়ন করা হবে নাকি প্রত্যেক চাকরিহারাকে নতুন করে পরীক্ষায় বসতে হবে? এই নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। এই মামলার সঙ্গে জড়িত আইনজীবীদের একাংশের দাবি, গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক পদে সকল চাকরিহারাকে নতুন করে পরীক্ষায় বসতে হবে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া ফের নতুন করে হবে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, পরীক্ষা থেকে শুরু করে ইন্টারভিউ, নিয়োগ, সম্পূর্ণ পদ্ধতি নতুন করে হবে। যদিও আইনজীবীদের আরেকাংশের এই বিষয়টি নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সোমবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের তরফ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে এসএসসিকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ঘোষিত শূন্যপদের ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। এর জন্য নতুন করে আয়োজন, মূল্যায়ন ও ওএমআর শিট স্ক্যান করতে হবে। তার জন্য ওপেন টেন্ডার করতে হবে। এর জন্য মানদণ্ড কোন শর্তসাপেক্ষে হবে সেটাও ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আরও পড়ুনঃ পুলিশের চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতা! ১০ বছরের চেষ্টায় সফল, হাইকোর্টের রায়ে আঁধার নামল প্রদীপের জীবনে

হাই কোর্টের এই নির্দেশ নিয়েই এবার আইনজীবীদের মধ্যে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। কারোর দাবি, সম্পূর্ণ নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার কথা বলেছে হাই কোর্ট। কেউ আবার বলছেন, নতুন করে আয়োজনের কথা বলেনি আদালত। হাই কোর্টের নির্দেশ নিয়ে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও, প্রত্যেকেই একটি কথা একবাক্যে মেনে নিয়েছেন, উত্তরপত্র তথা ওএমআর শিটের আসল কপি কিংবা ‘মিরর ইমেজ’ যদি না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে নতুন করে পরীক্ষা নিতেই হবে।

এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায়দানের সময় হাই কোর্টের তরফ থেকে ১৭ দফা দুর্নীতির কথা বলা হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম হল এসএসসির তরফ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তরপত্রের আসল কপি নষ্ট করে দেওয়া। এমনকি এসএসসির সার্ভার থেকে ‘মিরর ইমেজ’ও পায়নি সিবিআই। কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, ‘মিরর ইমেজ’ সংরক্ষণ না করেই উত্তরপত্রের আসল কপি নষ্ট করে দিয়েছে এসএসসি। যদিও স্কুল সার্ভিস কমিশন তথ্য জানার অধিকার আইনের অধীন ২০১৮-২০২৩ সাল অবধি আবেদনকারীদের স্ক্যানড ওএমআর শিট দেখিয়েছে। তাদের ডেটাবেস থেকেই এগুলি নেওয়া হয়েছে বলে দাবি। নিয়োগ প্রক্রিয়ার বহু উত্তরপত্র ইতিমধ্যেই এসএসসির ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। যেগুলো হয়নি তা দ্রুত আপলোডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

calcutta high court

পুনর্নিয়োগ প্রসঙ্গে মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘পুরনো আসল ওএমআর শিট কিংবা তার মিরর কপি যা সিবিআই বাজেয়াপ্ত করেছে, সেটা আপলোড করলে যদি কোনও প্রকার বিতর্ক না হয়, তাহলে তার ভিত্তিতেই ফের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। এর জন্য নতুন করে পুনর্মূল্যায়নকারীদের নিয়োগ করতে হবে। পুনর্মূল্যায়নের পর যদি দেখা যায়, যারা আগে চাকরি পেয়েছিলেন তাঁরা ফের নম্বরের ভিত্তিতে চাকরি পাচ্ছেন তাহলে তাঁদের চাকরি বাতিল হবে না। নাহলে বাতিল হয়ে যাবে। নতুন করে পরীক্ষার অবকাশ থাকবে না’।

অন্যদিনে বিতর্কিত চাকরিপ্রাপকদের আইনজীবী অনিন্দ্য লাহিড়ী বলেন, ‘এসএসসি মামলায় হাই কোর্টের রায়ে ওএমআর পুনর্মূল্যায়নের কথা কোথাও বলা হয়নি। এটা নিয়ে একটা ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানো হচ্ছে। দ্বিতীয়তো, প্রথম থেকে  ‘সিলেকশন’ হবে বলা হয়েছে। অর্থাৎ নতুন করে বিজ্ঞাপন। এতে বর্তমান সময়ের চাকরিপ্রার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। সেই সঙ্গেই নতুন প্রক্রিয়ায় ওএমআর মূল্যায়নকারী টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাছতে হবে। ওএমআর মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে কী কী যোগ্যতা দরকার, সেই বিষয়েও এসএসসি-কে ওয়েবসাইটে দিতে হবে’। অনিন্দ্যর কথায়, সব কিছু নতুন করে শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

এদিকে চাকরিহারাদের একাংশ আবার মঙ্গলবার থেকে আন্দোলন শুরু করেছেন। কিছু অযোগ্যদের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ যোগ্যরা কেন বঞ্চিত হবে? উঠেছে সেই প্রশ্ন। এবার যদি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নতুন করে শুরু হয় তাহলে সেই বিতর্ক আরও জোরালো হবে বলেই অনুমান ওয়াকিবহাল মহলের।

Sneha Paul
Sneha Paul

স্নেহা পাল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তরের পর সাংবাদিকতা শুরু। বিগত প্রায় ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর