বাংলা হান্ট ডেস্কঃ শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারি মামলায় হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়। এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি মামলার (SSC Recruitment Corruption case) সোমবার মোট ২৫৭৫৩ চাকরিপ্রার্থীর নিয়োগ বাতিল করল কলকাতা হাইকোর্টের ( Calcutta High Court ) বিচারপতি বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বার রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। এসএসসি মামলায় ২০১৬ সালের প্যানেলের সকলের চাকরি বাতিল করল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে চাকরি হারাতে হল না কেবল সোমাকে।
‘মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোনো চাকরি বৈধ হওয়া উচিৎ নয়’। এসএসসি মামলার রায়ে এদিন স্পষ্ট করে জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। যারা মেয়াদ উত্তীর্ণ পদে চাকরি পেয়েছেন আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে ১২% সুদ সহ বেতন ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তবে এই প্যানেলে চাকরি পাওয়া একমাত্র সোমা দাসের চাকরি বাতিল করেনি হাইকোর্ট। দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ‘মানবিক কারণ’-এই সোমার নিয়োগ বাতিল করা হচ্ছে না।
ধর্মতলার গান্ধীমূর্তির সামনে চাকরিপ্রার্থীদের ধর্নামঞ্চে দেখা গিয়েছিল চাকরিপ্রার্থী বীরভূমের সোমা দাসকে। নিজের জীবনের দুই লড়াই চালাচ্ছিলেন তিনি। ক্যানসার আক্রান্ত সোমাও ন্যায়ের আশায় দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তার অভিযোগ ছিল, ২০১৬ সালে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের (এসএলএসটি) পরীক্ষায় বসেছিলেন। সেখানে নিয়োগের মেধাতালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও তাকে চাকরি দেওয়া হয়নি।
এরপর অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে দায়ের হয় মামলা। এই যুদ্ধের মাঝেই ২০১৯ সালে ব্লাড ক্যানসার ধরা পরে সোমার। তবে তাতেও নিজের অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র পিছিয়ে আসেন নি সোমা। মনের জোরের ওপর ভর করে ঝড়-জল মাথায় করে হকের চাকরির জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
সেই সময় নিয়োগ দুর্নীতির মামলা দেখছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। SSC মামলায় তার এজলাসেও সোমা বহুবার এসেছেন। এরপর একদিন মামলাকারীদের কাছ থেকেই সোমার শারীরিক অবস্থার কথা জানতে পারেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মানবিকতার যুক্তিতে রাজ্য সরকারের কাছে সোমার চাকরি দেওয়ার অনুরোধ রাখেন বিচারপতি। প্রাক্তন বিচারপতির অনুরোধ রাখে সরকার।
আরও পড়ুন: হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ! চাকরিহারাদের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে SSC, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ
২০২২ সালে হাই কোর্টের অনুরোধে ক্যানসার আক্রান্ত সোমাকে চাকরিতে নিয়োগ করে কমিশন। নিজের জেলা বীরভূমের নলহাটি-১ ব্লকের মধুরা হাই স্কুলে বাংলার শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন সোমা। সেই থেকে তিনি চাকরি করছেন। তবে নিজে চাকরি পেয়ে গেলেও আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীর পাশে থেকেছেন সবসময়। নিজের স্কুল, শরীর সামলেও ধর্নামঞ্চে গিয়েছেন সোমা।