‘৩ মাসের মধ্যে…’, আরও একটি মামলায় হাইকোর্টে মুখ পুড়লো রাজ্যের! বিরাট জয় সরকারি কর্মীর

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বরাহনগরের বাসিন্দা উত্তম কুমার ঠাকুর পেশায় বাস কন্ডাক্টর। সিএসটিসির (CSTC) বরাহনগর কাশীপুর ডিপোতে কর্মরত ছিলেন উত্তমবাবু। ২০০৫ সালের অতিরিক্ত ২২৫ টাকার জেরে জীবনে গভীর অন্ধকার নেমে আসে তার। তারপর থেকে দীর্ঘ ১৮ বছর পর অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে রেহাই পেলেন তিনি।

২০০৫ সালের এক সকালের ঘটনা। বাসের প্রথম যাত্রীকে খুচরো টাকা দেওয়ার জন্য বাসের চালকের কাছ থেকে ৫০০ টাকার একটি নোট খুচরো করেন কন্ডাক্টর উত্তম কুমার ঠাকুর। তার কিছুক্ষণ পরই মাঝ পথে সিএসটিসির কর্তব্যরত আধিকারিকরা চেকিংয়ের জন্য বাসে ওঠেন। দেখেন ক্যাশ বাক্সে অতিরিক্ত ২২৫ টাকা রয়েছে।

কিসের টাকা? কিভাবে এল? প্রশ্ন করা হয় উত্তম কুমারকে। তিনি জানান, যাত্রীকে খুচরো টাকা দেওয়ার জন্য বাসের চালকের কাছ থেকে ৫০০ টাকা খুচরো করিয়েছিলেন তিনি। তবে কোনোমতেই তার কথা মানেন নি সিএসটিসির আধিকারিকরা। সেই ২২৫ টাকার জন্য সিএসটিসির আধিকারিকরা উত্তম কুমার ঠাকুরের ব্যাগ বাজেয়াপ্ত করে। শো কজ করা হয় তাকে। পাশাপাশি দেওয়া হয় বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশও।

উত্তমবাবুর অভিযোগ, বিভাগীয় তদন্তের সময় তৎকালীন সেই বাস ড্রাইভারকে গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে কোন জিজ্ঞাসাবাদই করা হয়নি। সবদিক বিচার বিবেচনা না করে দোষী সাব্যস্ত করা হয় উত্তম কুমারকে। তার বেতন ১৫০০০ টাকা কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাই সমস্ত বৈধ ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর সি এস টি সির চেয়ারম্যানের কাছে অ্যাপিল করেন উত্তমবাবু। তবে দীর্ঘদিন কোনো সুরাহা না হওয়ায় ২০০৬ সালে কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) মামলা করেন তিনি।

hc kolkata hc

আরও পড়ুন: ভোটের মুখে বেফাঁস দেব! মুখ ফসকে বলেই ফেললেন, ‘ গত ১০ বছরে…’, জোর চাপে তৃণমূল

ওদিকে হাইকোর্টের নির্দেশেই সিএসটিসির অ্যাপিলেট সাইড বাস কন্ডাক্টর উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে সিএসটিসির আধিকারিকদের যে নির্দেশই বহাল রেখেছিল অ্যাফিলিয়েট সাইড। তবে পিছিয়ে আসেন নি উত্তমবাবু। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ফের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। হাইকোর্টের বিচারপতি পার্থসারথী চ্যাটার্জীর এজলাসে ওঠে মামলাটি।

আদালতে উত্তমবাবুর আইনজীবী জানান, ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্ভিস রুলের ৫২ নম্বর ধারা না মেনেই একতরফাভাবে উত্তমবাবুকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তার বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্ট পরিবহন দফতরকে বারবার উত্তম কুমারের ফাইল কোর্টে তলব করলেও পরিবহন দফতর তার কোন ফাইলই
আদালতে পেশ করতে পারছে না। এ কিভাবে সম্ভব যে ওই ফাইল হারিয়ে গেল। এরপরই গোটা পক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ তোলেন তার আইনজীবী। ওদিকে রাজ্যের আইনজীবী যুক্তি দেখালেও ফাইল কিভাবে হারিয়ে গেল তা আদালতে জানাতে পারেনি।

এরপরই উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ বেআইনি বলে খারিজ করে দেন বিচারপতি। পাশাপাশি তাকে অবিলম্বে আগের বেতন পরিকাঠামোয় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। যেসকল সুযোগ-সুবিধা থেকে তাকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে তাও আগামী ৩ মাসের মধ্যে ফিরিয়ে দিতে হবে বলে নির্দেশ দেন বিচারপতি।

Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর