বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ২০১৮ সালে দাড়িভিটে (Darivit Case) ‘পুলিশের’ গুলিতে দুই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। দুই পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন জাস্টিস রাজাশেখর মান্থা। সেই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিল হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
দাড়িভিট মামলায় বড় নির্দেশ হাইকোর্টের (Calcutta High Court)
হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণ হিসেবে দু’লক্ষ টাকা ধার্য করলেও মৃত ছাত্রদের পরিবারের ক্ষতিপুরণের অঙ্ক নিয়ে আপত্তি ছিল। রাজ্য সরকারকে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে দাবি তুলেছিলেন তারা। সেই দাবি নিয়ে বুধবার প্রশ্ন তোলে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, দুই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয়েছিল মামলা। সেই মামলা বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে গেলে ঘটনায় এনআইএ তদন্তের পাশাপাশি দুই মৃত ছাত্রের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। যদিও ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নির্দিষ্ট করে দেননি জাস্টিস মান্থা।
তবে অভিযোগ ওঠে বহু মাস কেটে যাওয়ার পরও পুলিশ, এনআইকে তদন্তভার তুলে দেয়নি। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করায় দায়ের হয়েছিল আদালত অবমাননার মামলা। ওদিকে এনআইএ তদন্ত-সহ সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার।
বুধবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলা শুনানির জন্য উঠলে রাজ্য জানায়, ইতিমধ্যেই মামলা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এনআইএ-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিয়ম মোতাবেক, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে দু’লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। যদিও ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নিয়ে আপত্তি দেখায় দুই ছাত্রের পরিবার।
আদালতে তাদের দাবি, দু’টি তাজা প্রাণ চলে গিয়েছে। সেই ঘটনার বিচারে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ যথার্থ নয়। রাজ্য সরকারের কাছে ২০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। এরপরই প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘ভিক্টিম কম্পেনশেসন স্কিম’ অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার দু’লক্ষ টাকা করেই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা। কেন ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে? সিঙ্গল বেঞ্চ ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ঠিক করে দেয়নি, তারপরও মৃতদের পরিবার এত টাকা চাইছে কেন? কেন এত টাকা চাওয়া হচ্ছে তা আদালতে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
হাইকোর্টের (Calcutta High Court) ডিভিশন বেঞ্চের আরও নির্দেশ, সিঙ্গল বেঞ্চ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছিল তা পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত তা স্থগিত থাকবে। নভেম্বরে মাসে মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উর্দুর বদলে বাংলা ভাষার শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে উত্তর দিনাজপুরের দাড়িভিট। উর্দু নয়, চাই বাংলা শিক্ষক, এই দাবি জানিয়ে বিক্ষোভে নামে ছাত্ররা। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে স্কুল ক্যাম্পাস। সেখানেই পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় ২ ছাত্রের। যা নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য-রাজনীতি।
আরও পড়ুন: ফের বাড়ছে DA, পকেটে আসবে বাড়তি ৮,৬৪০ টাকা, সরকারি কর্মীদের জন্য বড় আপডেট
স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, পুলিশ গুলি চালিয়েছে।পুলিশের দিকে অভিযোগের তীর এলেও প্রথম থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তারা। এরপর আদালতে মামালা হলে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য সরকার সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয়। ওদিকে এনআইএ তদন্তের দাবি তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় মৃত ছাত্রের পরিবার।
২০২৩ সালে এই মামলার তদন্তভার এনআইএ-র হাতে তুলে দেয় হাই কোর্ট। পাশাপাশি নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যর নির্দেশও দেয় আদালত। তবে ১১ মাসেরও বেশি সময় কেটে গেলেও আদালতের কোনোও নির্দেশই মানা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। এরপরই দায়ের হয়েছিল আদালত অবমাননার মামলা।