বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গতকালই প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ফিরল ভাগ্য। আর জি কর (RG Kar) হাসপাতালে থ্রেট কালচার বা হুমকি সংস্কৃতি চালানোর অভিযোগে গত সেপ্টেম্বর মাসে ৫১ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করে দেয় হাসপাতালের কলেজ কাউন্সিল। যা নিয়ে জোর তরজা চলে। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি কৌশিক চন্দের অবকাশকালীন বেঞ্চে এই মামলা উঠলে সাসপেনশন কার্যকরী নয় বলে জানিয়ে দিল উচ্চ ন্যায়ালয়।
সাসপেনশনে স্থগিতাদেশ…
হাইকোর্টের নির্দেশ, সাসপেনশন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার। যতদিন পর্যন্ত রাজ্য এই নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে না আসছে, ততদিন পর্যন্ত এই ৫১ জনকে সাসপেন্ড করে যে রেজোলিউশন নেওয়া হয়েছিল, তা কার্যকরী হবে না। প্রসঙ্গত, সোমবার ডাক্তারদের সাথে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর ভর্ৎসনার মুখে পড়েন আরজি করের অধ্যক্ষ মানস বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন নবান্নকে না জানিয়েই হাসপাতাল থেকে ৫১ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, সেই নিয়ে কড়া ভাষায় প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নয়া প্রিন্সিপ্যালের উদ্দেশে মমতা বলেন, “আপনিও তো ৪৭ জন ছাত্রকে সাসপেন্ড করেছেন। আমাকে তো জানান নি?” ক্ষুব্ধ মমতা বলেন,’ প্রিন্সিপাল আপনার তো প্রথমে রেকমেনডেশন পাঠানো উচিত ছিল স্বাস্থ্য দফতরকে। স্বাস্থ্য দফতর আমাদের সঙ্গে আলোচনা করত। সেটা না করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এটা কি আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না?” মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমি আপনাকে প্রিন্সিপ্যাল করেছি যাতে সবাইকে টেক কেয়ার করতে পারেন। আপনার কারোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ, রাগ, অভিযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু আপনি কিকরে নিজে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছেন? এটা থ্রেট কালচার নয় কি?”
মঙ্গলবার হাইকোর্টে ওই সাসপেন্ড হওয়া ডাক্তারদের আইনজীবী বলেন, কেন ওই ৫১ জনকে কলেজ কর্তৃপক্ষ সাসপেন্ড করেছেন তা নিয়ে স্পষ্ট করে রেজোলিউশনে কিছু বলা হয়নি। পাশাপাশি তাদের সাসপেন্ড করার পেছনে কোনো সঙ্গত কারণ নেই বলেও দাবি করেন তিনি। সেই সময় আরজি কর হাসপাতালের আইনজীবী বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাউকে সাসপেন্ড করেননি। ওই রেজোলিউশন রাজ্যের কাছে পাঠানো হবে। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার রাজ্যই নেবে। এরপরই হাইকোর্টের নির্দেশে, এই বিষয়ে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রসঙ্গত, গত ৯ অগস্ট আর জি কর হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় ৩১ বছরের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য। এই ঘটনার জেরেই শিরোনামে উঠে আসে আর জি কর হাসপাতাল। সামনে আসে হাসপাতালের একের পর এক অনিয়মের অভিযোগও। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে চলতে থাকা ‘থ্রেট কালচারে’র মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠে।
গুরুতর এই অভিযোগ সামনে আসতেই আর জি কর থেকে ৪৭ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়। যারা প্রত্যেকেই সন্দীপ ঘোষ ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত। প্রাক্তন অধ্যক্ষর ‘মদতে’ হাসপাতালে তাদের বাড়বাড়ন্ত বলে অভিযোগ সামনে আসে। এরপরই আসরে নামে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও পাল্টা এই অভিযুক্তদেয় দাবি, থ্রেট কালচারের অজুহাতে নিজেদের অপছন্দের ইন্টার্ন-পিজিটিদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদেয় একাংশ। তাদের পাল্টা দাবি তারাই ‘থ্রেট কালচারের’ শিকার। সাসপেনশনের বিরুদ্ধে পাল্টা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই ৫১ জন।
আরও পড়ুন: বরখাস্ত অতীত, পুনর্বহালের নির্দেশ! হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতেই কপাল খুলল শিক্ষিকার
সাসপেন্ড হওয়াদের মধ্যে কয়েকজনকে হোস্টেলে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছেনা বলেও অভিযোগ ওঠে। গত ১৮ অক্টোবর হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ৩১ জন জুনিয়র ডাক্তার। তাদের অভিযোগ ছিল, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের সাসপেন্ড করায় পুলিশ হস্টেলে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে। অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়েরের অনুমতি দেয় হাইকোর্ট। আর এবার আদালত জানিয়ে দিল এই সংক্রান্ত বিষয়ে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য।