মাদক কেসে ধরেছিল! আদালতে সেই দুষ্কৃতীদেরই চিনতে পারল না পুলিশ! কড়া নির্দেশ ‘ক্ষুব্ধ’ হাইকোর্টের

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কয়েক মাস আগেই শিরোনামে উঠে এসেছিল মাদক মামলায় অভিযুক্তদের জামিন করে দেওয়ার একটি চক্রের কথা। এবার ফের তা নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা। কিছুদিন আগেই যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, ট্রায়ালের (Trial) সময় তাঁদের কীভাবে চিনতে পারছে না পুলিশ? দেখা দিয়েছে এই প্রশ্ন। সত্যিই কি অভিযুক্তদের চিনতে ব্যর্থ নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও ‘গল্প’? তা নিয়ে ধন্দে আদালত!

গত বছর নভেম্বর মাস নাগাদ মাদক মামলায় অভিযুক্তদের জামিনের এই চক্রের কথা আদালতের নজরে আসে। জাস্টিস দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের একটি নির্দেশ কারণেই এই বিষয়ে আলোকপাত হয়। বর্তমানে জলপাইগুড়ির সার্কিট বেঞ্চের সেই ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। এবার কলকাতা হাই কোর্টেও (Calcutta High Court) দেখা গেল একই চিত্র। মাদক মামলায় অভিযুক্তদের চিনতে না পারার যে প্রবণতা পুলিশের (Police) মধ্যে দেখা দিয়েছে, তাতে ‘চক্রান্তের গন্ধ’ পাচ্ছেন অনেকেই।

পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ৭ মার্চের মধ্যে হাই কোর্টে কমপক্ষে ৭টি মাদক মামলায় জামিন কিংবা আগাম জামিনের ক্ষেত্রে পুলিশের এই ‘স্মরণশক্তি হ্রাসে’র বিষয়টি সামনে এসেছে। ধৃতদের চিনতে ব্যর্থ হওয়ার যে প্রবণতা দেখা দিয়েছে তাতে পুলিশকর্তারাই (Police Officer) চক্রান্তের ইঙ্গিত পাচ্ছেন বলে খবর।

আরও পড়ুনঃ ব্রিগেড যাবে বলে ৪০০ টাকা নিয়েছে! তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ‘তোলাবাজি’র অভিযোগ শ্রমিকদের

মার্চ মাসেই যেমন বিচারপতি বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে নদিয়ার একটি মাদক মামলায় জামিনের আবেদনের শুনানির সময় আবেদনকারীর আইনজীবী জানান, তল্লাশি দলে যে পুলিশ আধিকারিকরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই অভিযুক্তকে চিনতে ব্যর্থ। এরপর আদালতের তরফ থেকে চিনতে ‘অক্ষম’ দুই সিভিক ভলেন্টিয়ার এবং পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়। দলবল নিয়ে গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে মাদক সহ যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হল, তাঁদের নাম-পরিচয় জানার পরেও চিনতে ব্যর্থ পুলিশ, এটা বিস্ময়সূচক! পর্যবেক্ষণ আদালতের।

তাঁদের এই আচরণের নেপথ্যে যেমন কোনও অসৎ উদ্দেশ থাকতে পারে। তেমনই স্মৃতিশক্তি এতখানি হ্রাস পেলে তাঁরা পুলিশের চাকরির যোগ্যও নয়! আগামী শুনানিতে সংশ্লিষ্ট সাক্ষীদের নিজ বক্তব্য জমা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আগামী ২৮ মার্চের শুনানিতে নদিয়ার পুলিশ সুপারকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে শুধু নদিয়াই নয়, গত জানুয়ারি মাসে মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানাতেও একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। ধৃতদের চিনতে ব্যর্থ পুলিশ আধিকারিকদের সাসপেন্ড করার পাশাপাশি তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

high court

সব মিলিয়ে, ট্রায়ালের সময় মাদক মামলায় অভিযুক্তদের চিনতে না পারার যে প্রবণতা পুলিশ আধিকারিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তা সত্যিই চেনার ব্যর্থতা নাকি এর পিছনে অন্য কোনও ‘গল্প’ আছে তা নিয়ে সন্দিহান আদালত। এমতাবস্থায় রাজ্য পুলিশের ডিজিকে জাস্টিস বাগচির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, ট্রায়ালের সময় অভিযুক্তদের চিনতে ব্যর্থ পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত, শৃঙ্খলাভঙ্গ সহ কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।


Sneha Paul
Sneha Paul

স্নেহা পাল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়াকালীন সাংবাদিকতা শুরু। বিগত ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত। রাজনীতি থেকে বিনোদন, ভাইরাল থেকে ভ্রমণ, সব ধরণের লেখাতেই সমান সাবলীল।

সম্পর্কিত খবর