বাংলা হান্ট ডেস্কঃ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) মামলায় বর্তমানে জেলবন্দি হুগলীর প্রাক্তন যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ (Kuntal Ghosh)। আর জেলবন্দি অবস্থাতেই ইডি, সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন কুন্তল। নিম্ন আদালতের বিচারকের কাছেও চিঠি পাঠিয়েছেন কুন্তল। যা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি।
তার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা তার মুখ দিয়ে জোর করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) নাম বলানোর চেষ্টা করছে। এই নিয়ে আদালত এবং প্রকাশ্যে বারবার কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর, গতকাল একেবারে নালিশ জানিয়ে কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) দ্বারস্থ হয়েছেন এই বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা। এবার নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় প্রয়োজনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করতে পারবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডি।
এদিন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Gangopadhyay) নির্দেশ, চাইলে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার বিরুদ্ধে লেখা ওই চিঠি নিয়ে অভিষেক এবং কুন্তলকে প্রশ্ন করতে পারবেন ইডি এবং সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। প্রসঙ্গত, গত ২৯ মার্চ শহিদ মিনারের সভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সারদা মামলায় হেফাজতে থাকার সময় মদন মিত্র এবং কুণাল ঘোষকে তার নাম নিতে বলেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এর এর পরে জেলবন্দি কুন্তলের মুখেও উঠে এলো একই কথা। একই অভিযোগ করে কুন্তল বলেন, তার নাম নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে ইডি, সিবিআই। এই নিয়েই হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, সভায় বলা অভিষেকের মন্তব্যের সঙ্গে কুন্তল ঘোষের চিঠির কোথায় সাযুজ্য রয়েছে, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে বলে। এই নিয়েই কেন্দ্রীয় এজেন্সি চাইলে চিঠি নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করতে পারবে বলেই মন্তব্য করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
শুধু তাই নয়, বিচারপতির নির্দেশ, আদালতের অনুমতি ছাড়া রাজ্যের কোনও থানা নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে ইডি ও সিবিআই এর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা যাবে না। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ শহিদ মিনারের সভায় দাঁড়িয়ে অভিষেকের বক্তৃতার অংশকেও তদন্তের বাইরে রাখা উচিত নয়। পাশাপাশি শুধুমাত্র অভিযুক্ত কুন্তলের চিঠির ভিত্তিতে পরবর্তী নির্দেশ ছাড়া হেস্টিংস থানাও কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে বলেও জানান বিচারপতি।
অন্যদিকে, গত ২১ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের প্রবেশ এবং বাহির পথের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণ করারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পরবর্তী শুনানিতে তা আদালতে আনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গোটা এই বিষয়ে ২৮ এপ্রিল ইডি এবং সিবিআই এ বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেবে। প্রয়োজন তারা জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিয়ো রেকর্ডও করতে পারবে বলেও জানিয়েছে আদালত।
এদিন ইডির আইনজীবী আদালতে জানান, গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে কুন্তলের কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। তার অভিযোগের সূত্রপাত হয়েছিল গত ৩০ মার্চ। ওই দিনটি নজরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে ইডির আইনজীবী জানায়। প্রসঙ্গত, ৩১ মার্চ কুন্তল ঘোষ নিম্ন আদালতে ইডির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে চিঠি পাঠান যা ১ এপ্রিল হেস্টিংস থানায় গিয়ে পৌঁছয়।
অন্যদিকে, মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের আদালতে সওয়াল করেন, কুন্তল তরফে যে চিঠি লেখা হয়েছে তার বিভিন্ন অংশ দেখে তিনি নিশ্চিত এর নেপথ্যে ‘বাইরের কোনও হাত’ রয়েছে। অভিষেকের সভার পরেই এই চিঠির কাহানী শুরু হয়েছে বলেও আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।