বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আমাদের দেশে বিচারবিভাগ থেকে রাজনীতির ময়দানে আসার নজির এর আগেও বহু রয়েছে। একবার নয় বহুবার ঘটেছে এই ঘটনা। যা নিয়ে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। উঠেছে নৈতিকতা, অনৈতিকতার প্রসঙ্গও। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে বিচারবিভাগ থেকে অবসরের পর অনেক প্রাক্তন জাস্টিসই পেয়েছেন সরকারি পদ। বিশেষ করে মোদি সরকারের জমানায় এই ইস্যুতে বহুবার বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে।
শিয়রে লোকসভা ভোট। আর সম্প্রতি বিচারপতির আসন ত্যাগ করে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন জাস্টিস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Former Justice Of Calcutta High Court Abhijit Gangopadhyay)। শুধুই যে রাজনীতির আঙিনায় এসেছেন তেমনটা নয়। সরাসরি লোকসভা ভোটের প্রার্থীও হয়েছেন। এবার তমলুক কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে লড়বেন অভিজিৎ। ভোটে দাঁড়ানোর জন্য বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার বিষয়টি বলতে গেলে একেবারেই নজিরবিহীন।
একদিকে যেমন কিছু মানুষ বলছেন যে এমন মানুষেরই রাজনীতিতে আসা দরকার, তেমনি অন্যদিকে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিচারপতি থাকাকালীন তার রায় খারিজ করার দাবিতেও আদালতে দায়ের হয়েছে মামলা। সব মিলিয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রার্থী হওয়া নিয়ে জোর চর্চা সর্বত্র। এরই মাঝে এবার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন সুপ্রিম কোর্ট (Chief Justice Of Supreme Court ) তথা দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় (DY Chandrachud)।
স্পষ্ট কথায় প্রধান বিচারপতি বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শ ও দলীয় স্বার্থের উর্দ্ধে সংবিধানের প্রতি অনুগত থাকা উচিৎ। দেশের সমস্ত আইনজীবী ও বিচারপতিদের উদেশ্যে এমনই বার্তা দিয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি। তার কথায় ভারতীয় নাগরিক হিসেবে নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ বা দলের প্রতি আকর্ষণ থাকতেই পারে। তবে বিচারপতিদের নিরপেক্ষ অবস্থান থাকা উচিত।
ভোটের আগে যেভাবে বিচারপতিদের নিরপেক্ষতা নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন প্রধান বিচারপতি, ওয়াকিবহাল মহলের মতে,এতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড নিয়েই নিয়ে নাম কড়া বার্তা দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “দেশের গণতন্ত্র অত্যন্ত প্রাণবন্ত। এখানে তর্ক-বিতর্কের জায়গা রয়েছে। এখানে প্রত্যেক নাগরিকের নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং আনুগত্য রয়েছে। অ্যারিস্টটল বলেছেন, মানুষ রাজনৈতিক প্রাণী। আইনজীবীরাও এর ব্যতিক্রম নন। কিন্তু বারের সদস্যদের ক্ষেত্রে যারা বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত তাদের সর্বোচ্চ আনুগত্য দলীয় স্বার্থে নয়, বরং আদালত এবং সংবিধানের প্রতি থাকা উচিত।”
আরও পড়ুন: বিতর্ক সভায় কুণালকে দেখে তেড়ে এল দর্শক! বাঁচালেন শতরূপরা? তৃণমূল নেতার নিশানায় সঞ্চালক
নাগপুর হাই কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের বিচারাধীন মামলা এবং রায়ের বিষয়ে মন্তব্য করার প্রবণতা দেখে আমি খুব বিরক্ত। আপনারা প্রাথমিকভাবে আদালতের কর্মকর্তা এবং আমাদের আইনি প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা এবং মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব আপনার হাতেই।” বিচারপতি বলেন, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার সঙ্গে আইনজীবীদের স্বাধীনতা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।”