অন্য ছায়াপথ থেকে ভেসে আসছে রহস্যময় সংকেত, এলিয়েনদের কেরামতি নয় তো? খোঁজে বিজ্ঞানীরা

বাংলাহান্ট ডেস্ক : রেডিও টেলিস্কোপে কান রাখলেই শোনা যাচ্ছে একটানা রহস্যময় শনশন শব্দ। কোথা থেকে আসছে এই শব্দ? কেই বা করছে? ভিন গ্রহের কোনও প্রাণী নাকি আছে অন্য কোনও রহস্য?

রহস্যময় সেই সাঙ্কেতিক শব্দ ধরা পড়ছে রেডিও টেলিস্কোপে। চিনের বিজ্ঞানীরা এই সঙ্কেতের কথা বিশ্বকে জানিয়েছেন। অ্যাপারচার স্পেরিকাল রেডিও টেলিস্কোপে সেই রহস্যময় সিগন্যালটি ধরা পড়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ২০২০ সালের এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম এফএম সিগন্যাল ধরা পড়েছিল রেডিও টেলিস্কোপে। এর নাম দেওয়া হয় এফআরবি ২০১৯০৫২০বি। মেক্সিকোর রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি অবজার্ভেটরিতেও সেই রেডিও বার্তা ধরা পড়েছিল সেখানকার বিশালাকায় এক টেলিস্কোপে। তারপর আর তেমনভাবে সিগন্যাল ভেসে আসেনি। এখন আবারও সেই সঙ্কেতই পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

নেচার’ সায়েন্স জার্নালে এই রহস্যময় রেডিও সিগন্যালের কথা লিখেছেন গবেষকরা। মহাকাশের কোনও এক সুদূর গ্যালাক্সি থেকে সেই তরঙ্গ ভেসে আসছে। পৃথিবী থেকে ওই ছায়াপথের আনুমানিক দূরত্ব প্রায় ৩০০ কোটি আলোকবর্ষ। কখনও সেই তরঙ্গের মাত্রা তীব্র, আবার কখনও কম, কখনও বা বিক্ষিপ্ত। কারা পাঠাচ্ছে এই সংকেত? এখনও পর্যন্ত এর রহস্য স্পষ্ট নয় মানুষের কাছে।

এর আগে একবার বৃহস্পতির উপগ্রহ জুনো থেকেও রেডিও বার্তা ভেসে এসেছিল। সেবারও বিষয়টা নিয়ে প্রচুর হইচই হয়।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মহাকাশের সুপারনোভার কারণেই এমন রহস্যময় তরঙ্গ তৈরি হয়ে থাকতে পারে। তারার যেমন জন্ম হয়, তেমনিই মৃত্যুও হয়। কোনও তারা বা নক্ষত্রের যখন মৃত্যুমুখে পৌঁছয় তখনই হয় ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ। তাকেই বলে সুপারনোভা। এই সুপারনোভার সময় তীব্র আলোর ছটা দেখা দেয় মহাকাশে। বিস্ফোরণে তারার শরীর থেকে বেরিয়ে আসে আগুনের গোলা ও গ্যাস। তবে এই ঔজ্জ্বল্য খুন বেশিদিন থাকে না। অল্প সময় পরেই তা ফিকে হতে থাকে। শেষে মহাকাশের মধ্যেই হারিয়ে যায়। যতদিন সেই বিস্ফোরণ চলে ততদিনই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ বিচ্ছুরিত হতে থাকে। সেই তরঙ্গই ছড়িয়ে পড়ে মহাকাশে জুড়ে। সুদূর ,সেই গ্যালাক্সিতে এমনই কোনও তারার জন্ম বা মৃত্যুর শব্দই রেডিও টেলিস্কোপে ধরা পরছে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

আরও একটা সম্ভাবনার কথাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। হতেই পারে কোনও নিউট্রন তারা ও ব্ল্যাকহোলের মধ্যে সংঘাত লেগেছে। সেখান থেকেও এমন তরঙ্গ তৈরি হতে পারে। মহাজাগতিক বস্তুদের মধ্যে সংঘাত এতটাই তীব্র যে তার ধাক্কায় ভয়ংকর পরিস্থিতি হতে পারে মহাশূন্য। মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলেন, গ্যালাক্সি সাধারণত হয় একটা জমাট বাঁধা গ্যাসের স্রোতের মতো। তার শরীরে বাসা বেঁধে থাকে কোটি কোটি নক্ষত্র। যাদের আকার ও ভর সূর্যের চেয়ে অনেক বেশি। এই বিরাট আকারের তারাদের মধ্যে যুদ্ধ চল থাকে অবিরত। কখনও তারা গ্যালাক্সির মাঝে থাকা ব্ল্যাকহোলের সঙ্গেও সংঘাত শুরু হয়ে যায়। মহাজাগতিক বস্তুদের এই ধাক্কাধাক্কিতে বিকট বিস্ফোরণে গনগনে লাভার স্রোতের মতো ধোঁয়া ও মৃত তারাদের শরীরের ছিন্নভিন্ন অংশ চারিদিকে ছিটকে পড়ে। সুপারনোভার সময় নক্ষত্রদের শরীরের ভেতরে থাকা পারমাণবিক জ্বালানি খুব দ্রুত জ্বলে যেতে শুরু করে। এই সময় এক ধরনের বল বা ফোর্সের সৃষ্টি হয়। এই বল নক্ষত্রকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দিতে চায়। পরিবর্তে তারাও নিজের অভিকর্ষজ বল প্রয়োগ করে। এই দুই ফোর্সের প্রভাবে এক চূড়ান্ত টানাপড়েন চলতে থাকে নক্ষত্রদের ভিতরে। এইভাবে জ্বলতে জ্বলতে একটা সময় ফুরিয়ে যায় পারমাণবিক জ্বালানি। তখন তারার নিজস্ব শক্তি বেড়ে যায়। সবটুকু শক্তি একজোট হয়ে তারার কেন্দ্রে জমা হতে থাকে। তখনই ঘটে এই মারাত্মক বিস্ফোরণ। বিজ্ঞানীরা বলেন, এই বিস্ফোরণের কারণেই নিউট্রন নক্ষত্রের জন্ম হয়। নক্ষত্রের শরীর ভেঙে গিয়ে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরও তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেখান থেকেই মহাকর্ষীয় তরঙ্গের সৃষ্টি হয় ।


Sudipto

সম্পর্কিত খবর