বাংলার মসলিন (moslin) কাপড় ছিল সারা বিশ্বের দরবারে এক অত্যাশ্চর্য বস্তু। এত বড় কাপড় কিভাবে একটি আংটির মধ্য দিয়ে গলে যেতে পারে তা আজও এক আশ্চর্যের বিষয়। বলা বাহুল্য, ঢাকাই মসলিনকে বাদ দিয়ে বাংলার ইতিহাস রচিত হতে পারে না। কিন্তু কালের নিয়মে কলের কাপড়ের সাথে পাল্লা দিতে না পেরে হারিয়ে যায় মসলিন। এবার সেই ঐতিহ্যকেই ফিরিয়ে আনলেন একদল গবেষক। ৬ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসাবে ১৭০ বছর আবার বোনা হল ঢাকাই মসলিন।
ঢাকাই মসলিনের শেষ প্রদর্শনী হয়েছিল লন্ডনে ১৮৫০ সালে। ভারতে এখনো মসলিন তৈরি হলেও ঢাকাই মসলিন ছিল সেরার সেরা। এত বছর পর মসলিন বোনার সুতা যেই ‘ফুটি কার্পাস’ তুলার গাছ থেকে তৈরি হয়, সেই গাছ খুঁজে বের করা হয়েছে বিচিত্র সব পন্থা অবলম্বন করে। আসল মসলিনের স্পেসিমেন জোগাড় করতে ছুটতে হয়েছে কলকাতা থেকে লন্ডন পর্যন্ত। অবশেষে হস্তচালিত তাঁতে ৫০০ কাউন্টের সুতাই ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে ঢাকাই মসলিন।
২০১৪ সালের অক্টোবরে ঢাকাই মসলিন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করবার সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা। সাত সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। মসলিন পুনরাবিষ্কার করার জন্য ‘বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ সরকার।
মসলিন উদ্ধারে নেমে প্রাথমিক উপাদান খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল গবেষকদের। অনেক সাধ্য সাধনার পর অবশেষে সেই প্রাথমিক উপাদান মেলে। কিন্তু উপাদান মিললেও সুতা কাটার উপযুক্ত লোকের ছিল অমিল। শেষ পর্যন্ত হাসু ও নূরজাহান নামের অশীতিপর দুই বৃদ্ধার সন্ধান পান গবেষকরা।তাঁদের পূর্বপুরুষেরা মসলিন সুতা কাটতেন। তাঁদেরও ছোটবেলায় মিহি সুতার স্মৃতি রয়েছে। তাদের মিলিত চেষ্টাতেই শেষ পর্যন্ত ফিরে এল বাঙালির ঐতিহ্য ঢাকাই মসলিন।