বাংলাহান্ট ডেস্ক: দারিদ্র্য, অভাব, সীমিত সুযোগ— এই সব বদলে নিজেই নিজের সাফল্যের গল্প (Success Story) লিখলেন দিপালী মুরা। পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার মৃগিছামি গ্রামের মুণ্ডা আদিবাসী সম্প্রদায়ের এই মহিলা আজ আত্মনির্ভরতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এক সময় নিজের এক বিঘা জমিতে উৎপন্ন সাবাই ঘাস দিয়ে দড়ি বুনে দিন শেষে পঞ্চাশ টাকাও রোজগার করতে পারতেন না তিনি। কৃষক স্বামীর আয়েই চলত চারজনের সংসার। কিন্তু ২০১৩ সালে জীবনের মোড় ঘুরে যায় এক দশদিনের কর্মশালার হাত ধরে, যা আয়োজন করেছিল ইউনেস্কো।
দিপালীর অনন্য সফলতার কাহিনি (Success Story)
কর্মশালাটি ছিল কলকাতার এনজিও ‘বাংলানাটক ডট কম’–এর সহযোগিতায় আয়োজিত ‘রুরাল ক্রাফট অ্যান্ড কালচারাল হাব’ প্রকল্পের অংশ। সেখানে দীপালি শিখেছিলেন কীভাবে ঐতিহ্যবাহী সাবাই ঘাসকে শুধুমাত্র দড়ি নয়, বরং আধুনিক নকশার হোম ডেকর সামগ্রী— যেমন মাল্টি ইউটিলিটি বাস্কেট, ফ্লাওয়ার ভাস, ট্রে, গয়নার বাক্স ইত্যাদিতে রূপান্তর করা যায়। কর্মশালা শেষে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করেন নিজের উদ্যোগ। রঙ, ঘাস ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে শুরু হয়েছিল তাঁর নতুন পথচলা (Success Story)।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর হাতের তৈরি পণ্য আকর্ষণীয় রঙ ও নকশায় ক্রেতাদের মন জয় করে নেয়। পরিবেশবান্ধব এবং সম্পূর্ণ বায়োডিগ্রেডেবল সাবাই ঘাসের তৈরি এই শিল্পপণ্যগুলি এখন শুধুমাত্র ভারতেই নয়, বিদেশেও— বিশেষত ডেনমার্কের মতো দেশে রপ্তানি হয়। আজ তাঁর বার্ষিক আয় ১০ লক্ষ টাকারও বেশি, যা একসময় অকল্পনীয় ছিল (Success Story)।
সাবাই ঘাস পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশার জঙ্গলে স্বাভাবিকভাবে জন্মানো এক প্রকার বন্য ঘাস। এই ঘাস অত্যন্ত টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী— একবার জন্মালে ৬০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে এর পরিপক্ব ডাঁটা কেটে তা পরিষ্কার করে শুকিয়ে নেওয়া হয়, পরে হাত দিয়ে বা সাইকেলের চাকা ব্যবহার করে দড়িতে পাকানো হয়। প্রাকৃতিক রঙে রাঙানো ঘাসে তৈরি হয় বাদামি, লাল, কালো বা নীলচে নানা শেড, যা ঘরোয়া সাজসজ্জায় এনে দেয় প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্য (Success Story)।

দীপালি মুরা এখন শুধু একজন কারিগর নন, তিনি সফল গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তা। নিজের কাজের মাধ্যমে পুরুলিয়া অঞ্চলের প্রায় ৫০ জন আদিবাসী মহিলাকে কর্মসংস্থান দিয়েছেন তিনি। স্থানীয় মহিলাদের কাছ থেকে প্রতি কিলোগ্রাম সাবাই ঘাস ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় কিনে তাঁদের দিয়ে তৈরি করান নানা হস্তশিল্প। ডিজাইন ও কাজের জটিলতা অনুযায়ী দাম নির্ধারিত হয়— যেমন একটি ১৪ ইঞ্চি দেওয়াল হ্যাংগিং প্লেট তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় ৩০ ঘণ্টা। মাসে প্রায় ৬০০টি পণ্য তৈরি করেন দীপালি ও তাঁর দল, বছরে বিক্রি হয় ৭,০০০টিরও বেশি সামগ্রী, যার বেশিরভাগই বিক্রি হয় বিশ্ব বাংলা প্যাভিলিয়ন এবং বিভিন্ন মেলায় (Success Story)।
শুরুর দিকে অন্তর্মুখী স্বভাবের হলেও আজ দীপালি আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। ২০২৩ সালের মার্চে তিনি ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে নিজের তৈরি পণ্য প্রদর্শন করেন এবং প্রায় ৫০,০০০ টাকার সামগ্রী বিক্রি করেন। এক সময়ের সংগ্রামী গৃহবধূ আজ গ্রামীণ নারীদের অনুপ্রেরণা, যিনি প্রমাণ করেছেন— ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম থাকলে সাফল্যের পথ কখনও বন্ধ হয় না (Success Story)।












